সেবা ডেস্ক: দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, এক সময় দুদককে নিয়ে মানুষ ব্যঙ্গ করত। সময়টা এখন ইউটার্ন নিয়েছে। দুদককে নিয়ে এখন ব্যঙ্গ করার সুযোগ নেই। আমরা মানুষের ভীতির কারণ না হয়ে প্রীতির কারণ হতে চাই।
শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে দুদক ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনীতে এসব কথা বলেন তিনি।
মানি লন্ডারিংয়ে শতভাগ কনভিকশন রেট নিয়ে দুদক সফল উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক খান বলেন, গত ২-৩ বছর আগে আমাদের কনভিকশন রেট ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ। বর্তমানে কনভিকশন রেট প্রায় ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই সফলতার পেছনে পুলিশ ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করেছে।
দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে কমিশনার বলেছেন, দুর্নীতি দমনকারী নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত হবেন না। এতে দুর্নীতিবাজরা হাসবে। বলবে দুর্নীতি দমনকারীদের আমরা ম্যানেজ করে চলি। এটা থেকে নিজেদের বাঁচতে হবে।
দুদকের তদন্তে ও কাজে পদ্ধতিগত কোনো ভুল করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এতে আমাদের কনভিকশন বাড়বে ও দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। আমাদের দুর্নীতি দমন একটি আন্দোলন। আন্দোলন একা একা করা যায় না, সবাই মিলে করতে হয়। আর পুলিশ পাশে থাকলে নিজেদের আরো শক্তিশালী মনে হয়।
এই প্রশিক্ষণের ফলে দুদকের অনেক লাভ হবে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, সবাই একসঙ্গে কাজ করলে চলার শক্তি বাড়ে। একা একা কিছু করা যায় না। চাকরি জীবনে ট্রেনিং করা হয় অ্যাকশনের জন্য। দুদকে ২৪শ’ জনবল অনুমোদিত থাকলে বর্তমানে কাজ করছে প্রায় ১১শ’ লোক। আমাদের জনবলের সঙ্কট রয়েছে। যারা রয়েছে তারা সবাই সমান পারদর্শী না। এ জন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের জন্য ট্রেনিং ও ইকুইপমেন্টের প্রয়োজন।
দুর্নীতির বিষয় পাঠ্যপুস্তকে থাকা উচিত উল্লেখ করে দুদক কমিশনার বলেন, আমরা স্কুল কলেজে যাচ্ছি। অ্যাসেম্বলিতে দুর্নীতি বিরোধী শপথ পড়ানো হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের ফলে দুদকের অফিসারদের কর্মক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা করি।
‘অবৈধ কোনো কিছুর কারণে অস্বাভাবিক কিছু তৈরি হয়। হঠাৎ করে ‘আঙুল ফুলে কলা গাছ’ এমনিতেই হয় না। এর পেছনে অবশ্যই দুর্নীতি রয়েছে। আমরা সবাই মুখে অনেক সুন্দর কথা বলি, কিন্তু বাস্তবে তা করি না। আমাদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয় এমন হয়েছে, আমরা স্বাভাবিকভাবে কিছু চাই না। সবাই প্রথমে একলাফে বড়লোক ও অর্থশালী হতে চায়। মানুষ কেনো যেন স্বাভাবিক ও সৎভাবে বাঁচতে চায় না। এটা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
এ সময় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, কর্মশালার মাধ্যমে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও পরস্পরের কাজের ধরণ সম্পর্কে জানা যাবে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান ব্যবহার করে অর্থের উৎস, কোথায় যায়, কোথা থেকে আসে এই কাজটি দুদক ও সিটিটিসি করে থাকে। মানিলন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে টাকা কোথায় যাচ্ছে তা খুঁজে বের করা জরুরি। এটা একটি জটিল প্রক্রিয়া। টাকার গতিবিধি ট্রেস করা একটি দুরূহ কাজ। আমরা চাই আমাদের কর্মকর্তারা ট্রেস করার টেকনিক ভালো করে জানুক। কেউ যাতে বলতে না পারে সে প্রভাবশালী বলে মামলায় ফাঁক ফোকর রেখে তদন্ত করেছে।
দুদকের নবীন অফিসারদের উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, প্রযুক্তি বা টেকনিক শিখতে হবে। নিজে না জানলেও অপর সহকর্মীদের কাজ থেকে শিখতে হবে। যত প্রভাবশালী হোক আপনারা সাহস নিয়ে এগিয়ে যাবেন। আপনাদের যেকোনো বিপদে আমরা পাশে আছি।
এটি দ্বিতীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা উল্লেখ করে সভাপতির বক্তব্যে সিটিটিসি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এর আগে দুদক ও সিটিটিসির একটি যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষ হয়েছে। সরকারের সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। সিটিটিসি মূলত সন্ত্রাস দমনে কাজ করে। দুর্নীতি দমন কমিশন মূলত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে। তবে আমাদের একটা জায়গায় মিল রয়েছে টেরোরিস্ট ফাইন্যান্সিংয়ে। টেরোরিস্ট ফাইন্যান্সিং মূলত মা নিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে হয়। কোনো বৈধ পথে টেরোরিস্ট ফাইন্যান্সিং হয় না। তদন্তের ক্ষেত্রে আমাদের এই কমন জায়গাটি রয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়নে সপ্তাহব্যাপী দুদক ও সিটিটিসি এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়ে হয়েছে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।