![]() |
| ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া |
বিজ্ঞান চিন্তার বাইরে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার অন্য একটি বিষয় ছিল, যা সর্বদাই নেপথ্যের—খুব বেশি সামনে আসেনি। এরশাদের বিরুদ্ধে যখন ১৫ দল ও সাতদল যুগপৎ আন্দোলন করছিল, তখন দুই নেত্রীর সরাসরি আলোচনার প্রয়োজন ছিল। কে উদ্যোগ নেবে, কোথায় বসা হবে—এ নিয়ে খবরের কাগজে বিভিন্ন রকম সংবাদ পরিবেশিত হয়। দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যাঁর মধ্যে এম এ ওয়াজেদ মিয়া অন্যতম। তখন বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ ড. ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনের কোয়ার্টারে (সম্ভবত মহাখালী) থাকতেন। সেখানেই দুই নেত্রীর সাক্ষাৎ হয় এবং যত দূর মনে পড়ে ড. ওয়াজেদই খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছিল যে মাত্র দুই রুমের একটা বাসা, সেখানে অনেক মানুষের বসার ব্যবস্থা করাও ছিল কষ্টকর। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার জীবনযাপন ও পথচলাকে অনুধাবন করা যায়। তৎকালীন, বিশেষ করে এরশাদের আমলে সরকারি চাকরিতে থেকে এ ধরনের একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করায় তাঁর সততা ও সাহসের বিষয়টি অবশ্যই স্বীকৃতির দাবি রাখে।
অন্য একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে, কোনো একটি পত্রিকার পক্ষ থেকে ড. ওয়াজেদ মিয়াকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি একজন সরকারি চাকরিজীবী, আপনার স্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতিতে নেমেছেন, আপনি বিষয়টিকে কিভাবে নিচ্ছেন? তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে ‘এটি তাঁর দায়িত্ব। সময় ও দেশের জনগণ তাঁর ওপর এই দায়িত্ব অর্পণ করেছে এবং তিনি এমন একটি পরিবারের সন্তান, যে পরিবারের রক্তে রাজনীতি মিশে আছে। তাই আমাকে (তাঁকে) এটা মেনে নিতে হবে।’ আমরা দেখি তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী, জাতির জনকের জামাতা; কিন্তু ক্ষমতা তাঁকে স্পর্শ করেনি। তিনি অবসরে যাওয়ার পর কখনো সরকারি গাড়িতে উঠেননি; তিনি চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেননি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ভিপি ছিলেন। অনুকূল সময়ে চাকরি ছেড়ে রাজনীতি করতে পারতেন। কিন্তু সে পথে হাঁটেননি। ক্ষমতার বলয় থেকে দূরে থেকেছেন। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন দুঃসময়ে তিনি শুধু স্বামী হিসেবে নন; অভিভাবক হিসেবে সর্বদা ছায়া দিয়েছেন। এখানে একটা প্রসঙ্গ উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বঙ্গবন্ধু যখন আগরতলা মামলায় জেলখানায়, তখন শেখ হাসিনা-ওয়াজেদ মিয়ার বিয়ে হয়। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েও তিনি এই পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তায় আগ্রহী হন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ধীশক্তি ও বিবেচনাবোধের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁদের আত্মীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে। দুই মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে এই পরিবার অর্থবিত্তের দিকে না তাকিয়ে দুজন একাডেমিশিয়ানকে জামাতা হিসেবে নির্বাচন করেছে। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এটি অনন্যসাধারণ ঘটনা। ড. ওয়াজেদ মিয়ার মতো এমন নির্লোভ, নিরহংকার ও ক্ষমতাকেন্দ্রের কাছাকাছি থেকেও তাঁর মধ্যে নিজেকে যুক্ত না করার মানুষ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। ড. ওয়াজেদ মিয়ার জন্মদিনে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
লেখক:
মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান
উপাচার্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।