করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকিতে মোংলা বন্দর

S M Ashraful Azom
0
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকিতে মোংলা বন্দর
সেবা ডেস্ক: নোবেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকির মুখে রয়েছে মোংলা সমুদ্র বন্দর। চীনা নাগরিকসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে এ বন্দরে। মোংলা বন্দরে জাহাজে আসা নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নেই যথাযথ ব্যবস্থা। ফলে বিদেশী জাহাজের পণ্য খালাস বোঝাই কাজ করতে গিয়ে নাবিকদের সংস্পর্শে যাওয়া স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের সংক্রমন ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ ভাইরাস প্রতিরোধে বন্দর জেটিতে নেয়া হয়েছে প্রাথমিক প্রস্তুতি। আর এ প্রস্তুতি যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে মোংলা বন্দরে ৪ থেকে ৫ দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ আসছে। আর প্রতিটি জাহাজের নাবিকের সংখ্যা থাকে ৩০ থেকে ৪০ জন। সেই হিসেবে এ বন্দরে গড়ে নতুন করে দেড় শতাধিক বিদেশী নাগরিকের আগমন ঘটে।

অপরদিকে পণ্য খালাস বোঝাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ দিন। বর্তমানে এ বন্দরে ২৩টি বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এ সকল জাহাজে চীনাসহ রয়েছে বিভিন্ন দেশের নাগরিক। এ ছাড়া মোংলা ইপিজেড ও স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পে কাজ করছেন অসংখ্য চীনা নাগরিক।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও শিপিং ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল জানান, বন্দরে জাহাজ ভেড়ার পর পণ্য খালাস বোঝাই কাজে যেতে হতে হচ্ছে এজেন্ট, কাস্টমস, ইমেগ্রেশন পুলিশ, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় শ্রমিকদের। আর প্রয়োজনের তাগিতে তাদের বিদেশী নাবিকদের সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে। বন্দরে আসা বিদেশী নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম থাকলে তা করা হয় না। এ ক্ষেত্রে বিদেশী নাবিকদের মাধ্যমে দেশেীয় শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রম ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। তিনি এ বিষয় স্বাস্থ্য বিভাগের আরও আধুনিকায়নসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেন।

শুধু মাত্র বন্দর জেটি আসা জাহাজে যাতায়াতকারী শ্রমিক ও বিদেশী নাবিকদের স্বাস্থ্য স্কান করা হয়। কিন্তু বহিঃনোঙ্গরে থাকা জাহাজের নাবিক ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না। এ ক্ষেত্রে রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের জনবল সংকট। ফলে বিদেশী নাবিকদের সংস্পর্শে যাওয়া শ্রমিক, পেশা, ব্যবসায়ীসহ যাতায়াতকারীদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।

এছাড়াও অহরহ বিভিন্ন প্রয়োজনে চীনাসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকরা প্রয়োজনীয় কাজে লোকালয়ের হাট বাজারে আসছে। বিশেষ করে স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের হাট-বাজারে যাতায়াতে তেমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এ কারনে স্থানীয়দের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। করোনা ভাইরাস আলোচনায় আসায় এখন নাম মাত্র নড়েচড়ে বসেছে ডিজি শিপিংয়ের অধীনস্থ স্বাস্থ্য বিভাগ। শুধুমাত্র বন্দর জেটিতে বসানো হয়েছে লেজার ডিটেক্টেট স্কানার।

এ প্রসঙ্গে মোংলা পোর্ট হেলথ (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) মেডিকেল অফিসার সুফিয়া খাতুন জানান, তাদের কাছে দু’টি লেজার ডিটেক্টেট স্কানার রয়েছে। একটি জেটিতে অপরটি জাহাজে পাঠানো হয়। তবে বহিঃনোঙ্গরে আসা জাহাজে স্বাস্থ্য কর্মীরা পৌঁছাতে পারে না। এ দপ্তরে জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, স্বল্প জনবল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাই স্থানীয় শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার সহ বিদেশী নাবিকদের সংস্পর্শে না যাওয়ার জন্য। তবে এ ভাইরাসের সংক্রামন ছাড়ানোর ঝুঁকি ও শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকির শঙ্কা প্রকাশ করে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।

মোংলা বন্দর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ আব্দুল হামিদ জানান, বন্দর হাসপাতাল ও মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৃথক দু’টি আইসিলেটেট রুম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বহন বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর ও সরিয়ে নেয়া যায়, সেই লক্ষে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি বিভাগের একটি এ্যাম্বুলেন্স। তবে এ সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরশেনের আওতাধীন মোংলা পোর্ট হেলথ বিভাগ পরিচালনা করছে। বন্দর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই সকল কার্যক্রম তদারকি করছে মাত্র।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডর শেখ ফখর উদ্দিন জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে, পণ্য থেকে নয়’ তাই প্রাথমিক ভাবে এ বন্দরে আসা চীনাসহ বিদেশী নাবিক এবং নাবিকদের সংস্পর্শে যাওয়া শ্রমিক-কর্মচারীদের বন্দর জেটিতে স্কান করার ব্যবস্থা আছে। বন্দরের উন্নয়নমুখী ড্রেজিং প্রকল্পে কর্মরত রয়েছে প্রায় অর্ধশত চীনা নাগরিক। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হলে তারা নিজ দেশে পৌঁছাবেন। তাই এ সময়ের মধ্যে তাদের চীনে যাতায়াতের সম্ভাবনা খুবই কম।

মোংলা কাস্টমস হাউজের যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মাদ সেলিম শেখ জানান, মোংলা ইপিজেডে একাধিক চীনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে অসংখ্য চীনা নারী-পুরুষ কর্মরত রয়েছে। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাগজপত্রের সার্বিক কাজ করে থাকেন দোভাষীরা। তাই কাস্টমসের সঙ্গে চীনা নাগরিকসহ বিদেশী নাবিকদের খুব বেশি সম্পৃক্ততা নেই। তবে বাণিজ্যিক জাহাজ সমূহে যাতায়াতকারী কাস্টমস পিও সহ নিজেদের স্টাফ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্কতা প্রস্তুতিসহ নানাভাবে সচেতন করা হচ্ছে।

মোংলা ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মাহবুবু আহম্মেদ সিদ্দিক জানান, ইপিজেডের অভ্যন্তরে ৮ থেকে ১০টি চীনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এখানে কাজ করছেন অন্তত ৪০ থকে ৪৫ জন চীনা নাগরিক। আর তাদের এ সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে প্রায় সহস্রাধিক দেশীয় শ্রমিক। তিনি জানান, এখানে অবস্থানকারী চীনা নাগরিকরা নিজেরাই নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। তবে নতুন করে তাদের নিজ দেশে যাতায়াতে নিশেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া চীনা প্রতিষ্ঠান সমূহে কর্মরত শ্রমিকরা সচেতনতার সঙ্গে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top