
শিব্বির আহমদ রানা, সংবাদদাতা (চট্টগ্রাম) বাঁশখালী: অবকাঠামোগত সমস্যার মাঝেও দূর্যোগপ্রবণ বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চল গন্ডামারা ইউনিয়নের বড়ঘোনায় এশায়াতুল উলুম (দারুল হিকমা) ইসলামিয়া মাদরাসা দ্বীনি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানার অন্তর্গত গন্ডামারা ইউনিয়নের উত্তর-পূর্ব বড়ঘোনায় ১৯৮৫ সালে ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা আরিফ উল্লাহ'র সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটি এ এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। মাদরাসাটি প্রতিষ্টার পর থেকে অবহেলিত, শিক্ষাবঞ্চিত এলাকার ছেলে-মেয়েদেরকে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে সুনামের সাথে পাঠদান করে আসছিল। কিন্তু প্রকৃতির নির্মম বৈরী আচরণ ১৯৯১ সালের ভয়াবহ প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের তোড়ে ভেঙ্গে যায় সবধরনের অবকাঠামো। স্থগিত হয়ে যায় মাদরাসার শিক্ষাকার্যক্রম।
সমুদ্রোপকূল ঘেষে বিশাল আয়তনের গন্ডামারা ইউনিয়নটি পূর্ব বড়ঘোনা, পশ্চিম বড়ঘোনা, গন্ডামারা এ তিন অংশে বিভক্ত। বিশাল জনগোষ্ঠির বসবাস পূর্ব বড়ঘোনায়। লবণ মাঠে চাষাবাদ, সমুদ্রে জাল ফেলে মৎস্য আহরণে চলে এ এলাকার লোকজনের জীবন জীবিকা নির্বাহ। ক্ষুধা-দারিদ্র্যের কষাঘাতে চলে তাদের সংসার জীবন। এখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় কয়েক মাইল পায়ে হেঁটে কাঁদা মাড়িয়ে কয়েক মাইল পায়ে হেঁটে এলাকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষার জন্য ছুটে যেত দূরবর্তী অন্য ইউনিয়নে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষাবঞ্চিত পূর্ব-পশ্চিম বড়ঘোনার ছয়টি ওয়ার্ডের বিশাল জনগোষ্ঠির কথা ভেবে, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ৯১'এর ধ্বংসস্তূপ থেকে পুনঃরায় মাদরাসার সংস্কার করে নতুনরুপে রুপদান করেন গন্ডামারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষানুরাগী মাওলানা. মুহাম্মদ আরিফ উল্লাহ।
সাড়ে ৩ কানি জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত উপকূলের বাতিঘর খ্যাত এশায়াতুল উলুম (দারুল হিকমা) ইসলামিয়া মাদরাসা নামের এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাও. মু. আরিফ উল্লাহর দক্ষ পরিচালনায় বর্তমানে ১৬ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা দ্বারা চলছে অাধুনিক মানের মানসম্মত নিয়মিত পাঠদান। এখান থেকে অধ্যয়ন করে শত শত ছাত্রছাত্রী দেশের বিভিন্ন সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। ঐতিহ্যবাহী এ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা ও শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টার কারণে অভিভাবকরা নিজের ছেলেমেয়েদের এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সফলতার কারণে এলাকাবাসী আস্থা অর্জন করেছে। জানা গেছে, একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে অবদান রাখতে সক্ষম বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আদর্শে আদর্শবান সুনাগরিক এবং যোগ্য দেশপ্রেমিক আলেমে দ্বীন তৈরির প্রত্যয় নিয়ে উত্তর পূর্ব বড়ঘোনা এশায়াতুল উলুম (দারুল হিকমা) ইসলামিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মাও. মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের নিরলস তত্বাবদান ও সহকর্মীদের অান্তরিক পাঠদান, দক্ষ পরিচালনা কমিটি কতৃক অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে।
এ মাদরাসায় ইবতেদায়ী প্রথম থেকে দাখিল ১০ম শ্রেণীতে ৭শ' ১০ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। ১৬ জন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের মাঝে নিরলসভাবে জ্ঞানের আলো বিতরণ করে যাচ্ছেন। গত ২০১৯ সালে পাসের হার শতভাগ। শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও স্থানীয় এলাকাবাসীর আন্তরিক সহযোগিতায় এ প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান ও ফলাফল ভাল হচ্ছে। মাদরাসার সুপার মাওলানা মু. নিজাম উদ্দিন প্রতিবেদককে জানান প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ৩৫ বছর অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে আধাপাকা ও নিম্নমানের টিনসেডের ঘরে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। অবকাঠামোগত সমস্যা, পর্যাপ্ত পরিমাণ একাডেমিক ভবনের অভাব, অফিস রুম, কমন রুম, সমৃদ্ধ লাইব্রেরী, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ও মুক্তিযোদ্ধা কর্ণারের কোন ব্যবস্থা নাই। সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও আমরা শিক্ষার্থীদের সর্ব্বোচ্চটা দিতে চেষ্টা করছি। নানা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ, সাপ্তাহিক বিতর্ক প্রতিযোগীতা সহ যাবতীয় সরকারী দিবসগুলো পালন করে যাচ্ছি।
মাদরাসার প্রতিষ্টা পরিচালক ও পরিচালনার কমিটির সভাপতি মাও. মুহাম্মদ আরিফ উল্লাহ এ প্রতিবেদককে জানান, আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা ও বাউন্ডারী ওয়াল না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। তিনি মাদরাসাটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন। সম্প্রতি এশায়াতুল উলুম (দারুল হিকমা) ইসলামিয়া মাদরাসা সরেজমিনে এ প্রতিবেদক গেলে মাদরাসার সুপার ও সহকারী শিক্ষকরা তাদের মাদরাসার সমস্যা, সম্ভাবনা উন্নয়ন নিয়ে সংবাদ, ফিচার লেখার অনুরোধ জানান সেই সাথে সমস্ত ক্লাস রুম ও ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে গিয়ে সরেজমিনে অবকাঠামোগত সমস্যাগুলো দেখান।
ক্যাপশন: এশায়াতুল উলুম (দারুল হিকমা) ইসলামিয়া মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের পিটি'তে অংশগ্রহণের সময়।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।