রোগ যাদের ছুঁতে পারেনা, বাঁচে শত বছর

S M Ashraful Azom
0
রোগ যাদের ছুঁতে পারেনা, বাঁচে শত বছর
সেবা ডেস্ক: গ্রিসের ছোট একটি দ্বীপ, নাম ইকারিয়া। এই দ্বীপের বাসিন্দারা যেন মৃত্যুকে ভুলতেই বসেছে। কারণ তাদের প্রত্যেকের আয়ু যে শত বছরেরও উপরে। তাদের নেই কোনো রোগ। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, সেখানকার হাসপাতালগুলো রোগী খুঁজে মরলেও দেখা পায় না রোগীরা।

২৫৪ বর্গ কিলো’মিটার বিস্তৃত এই দ্বীপটি যেন শত’বর্ষীদের এক আস্তানা। অম’রত্বের স্বাদ তারা গ্রহণ করছেন বছরের পর বছর ধরে। বিস্ময়’কর দ্বীপে বসবাসকারীদের সর্বনিম্ন আয়ুষ্কাল ১০০ বছর।

আপনি কী ভাবছেন এসব শত’বর্ষী বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা’দের কুঁচকানো চামড়া, ক্ষীণ দৃষ্টি কিংবা লাঠি ধরে চেয়ারে বসে থাকে, এমন দৃশ্য সেখানকার! মোটেও না, তারা কেউই লা’ঠিতৈ ভর দিয়ে চলেন না। সেখান’কার পাহাড়ি সিঁড়ি ভাঙার অভ্যাস রয়েছে তাদের। এভাবেই উঁচু গির্জায় উঠে যান তারা।

কঠিন রোগাক্রান্ত, বিছানা শয্যা এমনকি মারণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরাও সুস্থ হয়ে উঠে চিকিৎসা ছাড়াই। এমনই ম্যাজিক রয়েছে দ্বীপটির। এমনই এক ক্যারিশমা ঘটেছি’ল সেখানকার বাসিন্দা স্ট্যামাটিস মোরাই’টিসের সঙ্গে। যদিও তিনি ইকারিয়া ছেড়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যুক্ত’রাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বসবাস করতেন। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রচণ্ড শ্বাস’কষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকরা জানান ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত সে। তার আয়ু মাত্র নয় মাস।

স্ট্যামাটি’সের বয়স তখন ৬০ বছর। অত্যন্ত দুঃখে ভরা মনটা তার খুঁজে পেতে চাইলো হারানো সেই শৈশব। আর এ কারণেই তিনি মাতৃভূমি ইকারিয়া’র উদ্দেশ্যে রওনা হন। এরপরই তার জীবনে ঘটে এক অবাক করা কাণ্ড! কীসের ক্যান্সার? শয্যা’শায়ী স্ট্যামাটিস সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে গেল। এরপর কর্মস্পৃহা বাড়াতে তিনি নিজের জমিতে চাষ করে অলিভ ফলা’তে শুরু করেন। এভাবেই তিনি বেঁচেছিলেন ৯০ বছর পর্যন্ত।

ইকারিয়া’য় এ রকম অনেক দৃষ্টান্ত গড়েছেন সেখানকার অধিবাসীরা। জানান যায়, আরেকজন প্রতিদিন ২০ টিরও বেশি সিগারেট খেয়েও ক্যান্সারে আক্রান্ত হননি। বড়জোর অ্যাপেনডিক্সে ভুগেছিলেন তিনি। আরেকটি অবাক করা বিষয় হলো সেখানকার বাসিন্দারা ঘড়ির উপর নির্ভরশীল নন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দোকান খোলেন। সেখান’কার অধিবাসীরা নিজের রাজ্যে নিজেই রাজা। ছোট্ট দ্বীপটিতে তারা সবাই মিলেমিশে নিজ পরিবারের মতোই বাঁচেন। টাকা-পয়সা নিয়ে কেউই মাথা ঘামান না। আর তাই দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন কাটান।

এবার আসা যাক তাদের খাবারের মেন্যুতে কী কী রয়েছে সে বিষয়ে-
নিয়মিত শাক-সবজি, ফল খান তারা। ফাস্ট ফুড একেবারেই চলে না সেখানে। মাছ-মাংসও পরিমাণে খুব কম খান সেখানকার বাসিন্দারা। মৎস্যজীবী, চাষী, পশুপালন এগুলোই ইকারিয়ানদের মূল জীবিকার উৎস। আর পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আলাদা করে শরীরচর্চারও প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই সেটা সম্পূর্ণ হয়।

ইকারিয়ানরা স্থানীয় মদ খান। তবে তা কখনো দু’গ্লাস অতিক্রম করে না। রাতে ঘুমনোর আগে তারা এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হার্বাল চা খান। এর ফলে তাদের ঘুম পর্যাপ্ত হয়, যা শরীর সুস্থ রাখার অন্যতম উপায়। ভাবতে অবাক লাগলেও বয়স তাদের ত্বক ও শরীরে বার্ধক্যের ছাপ ফেলতে পারেনা। তাই ৮০ শতাংশ ইকারিয়ান ৬৫ থেকে ১০০ বছরেও সম্পূর্ণ সুস্থ এবং স্বাভাবিক যৌন জীবন পর্যন্ত উপভোগ করেন।

ইউনিভার্সিটি অব আথেন্স-র এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই এক তথ্য। ২০০০ সালে ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক এক্সপ্লোরার এবং লেখক ড্যান বুয়েটনার এই দ্বীপের জীবনযাপন নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম ‘দ্য ব্লু জোনস সলিউশন’। মূলত ইকারিয়াদের দীর্ঘায়ু হওয়ার ‘রহস্য’ লেখা রয়েছে ওই বইয়ে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শতায়ুর সংখ্যা এই দ্বীপে কেন? কারণ তারা কম অসুখে ভোগেন। এমনকি বিশ্বে ভয়ানক হারে বাড়তে থাকা ক্যান্সার এবং হৃদরোগও সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে নেই। এ বিষয়ে প্রচুর গবেষণাও হয়েছে তবে বারবারই তাদের জীবন ধারণের বিষয়টি উঠে এসেছে। চিন্তামুক্ত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভাস এবং দ্বীপের জলবায়ু- এই তিনটি কারণেই তারা ১০০ বছরেরও বেশি আয়ু পান বলে জানায় বিজ্ঞানীরা।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top