পশু সেবা কেন্দ্রের জন্য দুই বিঘা দেয়ার ঘোষনা দিলেন মেয়র আতিক

S M Ashraful Azom
পশু সেবা কেন্দ্রের জন্য দুই বিঘা দেয়ার ঘোষনা দিলেন মেয়র আতিক
সেবা ডেস্ক: অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক তন্ময় ইমরানের স্ত্রী তানিয়া হোসেনের চায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে মেয়ে বুশরা আফরিনকে নিয়ে মিরপুরের টোলারবাগে তাদের বাসায় যান মেয়র।

সেখানে তিনি বলেন, “মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমি বলতে চাই, দুই বিঘা জমি সিটিতে কোন একটি জায়গায় এনিম্যাল লাভারদের জন্য আমি দিতে চাই, যাতে সকল প্রাণি এখানে এসে ট্রিটমেন্ট নিতে পারে।

“ক্লিনিক্যাল সার্ভিস আমি দিতে চাই, কারণ এটা দিতে হবে আমাদের। এই শহরটা কিন্তু সবার জন্য, একেকজন একেক জিনিস ভালোবাসে। কেউ কুকুর ভালোবাসে, কেউ মাছ, কেউ পাখি, কেউবা বিড়াল ভালোবাসে।”

মুজিববর্ষে টোলারবাগ থেকেই কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া, বন্ধ্যাত্বকরণের কাজ শুরু করবেন বলে জানান মেয়র।

নিজের এলাকার কুকুরগুলোর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টেয়েন্টিফোর ডটকেমের মতামত পাতায় ‘মেয়র আতিককে আমার স্ত্রীর চায়ের নিমন্ত্রণ’ শিরোনামে খোলা চিঠি লেখেন তন্ময় ইমরান।

ওই চিঠি পড়েই তন্ময় ইমরানের বাসায় গিয়ে মেয়র আতিক বলেন, “মেয়র একা কিছু করতে পারবে না। এই নগরটাকে ঠিক করতে গেলে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। একসাথে কাজ করলে এ শহরের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সহজ হবে।”

চায়ের নিমন্ত্রণের জন্য তন্ময় ইমরানের স্ত্রী তানিয়া হোসেনকে ধন্যবাদ জানান তিনি। শুভেচ্ছা হিসেবে তানিয়ার জন্য একটি কেকও নিয়ে যান মেয়র।

দ্বিতীয় দফায় ঢাকা উত্তরের মেয়রের দায়িত্ব নিতে চলা আতিক বলেন, “সমস্যা যেখানে থাকবে, সেখানে সবার সাথে কথা বলা উচিত বলে আমি মনে করি। ছোট্ট একটি ব্যাপার হলেও সেটা উড়িয়ে দেওয়া উচিত না। আমাদের শোনা দরকার, হয় ফোনে, নয়ত এসে অথবা ভিডিও কনফারেন্সে। আমার ইশতেহারে আছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে আমরা সমস্যা সমাধানে কাজ করব।
“এখন সময় এসেছে, জনগণ তাদের সমস্যাগুলো বলবে, অভিযোগগুলো বলবে, আমরা সমাধান করব। শুধু আমাদের বক্তব্য শোনার সময় না।”

তন্ময় ইমরান জানান, তার বাসায় ১১টি নেড়ি কুকুর রয়েছে। সেগুলো বাইরে বের হলে এলাকাবাসী তাদের দেখে ভয় পায়, সেগুলোকে মারধর করে এবং কুকুরগুলোকে ফেলে আসার জন্য প্রায়ই তাকে চাপ দেওয়া হয়।
নিজের মেয়েও পশুপ্রেমী জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, “অনেকেই কিন্তু পশুপ্রেমী আছে, এনিম্যাল লাভার। নিজের বাচ্চাকে যেমন পছন্দ করে, এনিম্যালদেরও। কথাই আছে- ‘জীবে দয়া করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’। ধর্মেও আছে পশুদের যাতে কষ্ট না দেই আমরা। তাদের মেরে ফেলাটা কিন্তু সমাধান না, এনিম্যাল আ্যাক্টও পাশ হয়েছে সংসদে।”

পশু সেবা কেন্দ্রের পাশাপাশি গাছপালার জন্য একটি ‘বৃক্ষক্লিনিক’ করার পরিকল্পনাও জানান মেয়র আতিক।

প্রকৃতি নষ্ট হয়ে গেলে শহর বাঁচানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, সবাইকে নিয়েই এই শহর। পাখির ডাক কিন্তু কমে গেছে, শুনি না কিন্তু আমরা। গাছ কেটে ফেলার কারণে বাদুড় কিন্তু কমে গেছে। আমাদের মশার ওষুধ দিতে হচ্ছে, গলিতে গাপ্পি মাছ থাকত, মশা খেয়ে ফেলে। একটি বাদুড় ঘণ্টায় ছয়শ মশা খেতে পারে। আমাদের প্রকৃতি যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে শহর কিন্তু বাঁচানো সম্ভব না।”

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি বাঁচানোর জন্য সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

তবে ভিন্ন চিন্তার মানুষও রয়েছে জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা শহরে বিভিন্ন কিসিমের মানুষ বাস করেন। আমি যখন নির্বাচনের সময় ক্যাম্পেইনে ছিলাম, একজন এসে আমাকে বললেন, আপনি জেতার পরপরই বুলডোজার দিয়ে সব বস্তিগুলো গুঁড়িয়ে দেবেন, যত কুকুর আছে সব কুকুরগুলো মেরে ফেলতে হবে।

“এই বস্তিতে যারা থাকেন, তারা আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের ছাড়া একটি দিনও আমরা চলতে পারব না। তারাও মানুষ আমরাও মানুষ। আমরা বাড়িতে থাকি, তারা বস্তিতে থাকে। সুতরাং বস্তি দেখার দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই।”

মেয়রকন্যা বুশরা আফরিন বলেন, “অনেক পশু রাস্তায় পড়ে থাকে, বিড়াল ড্রেনে পড়ে থাকে, মরে পড়ে থাকে, কিন্তু কেউ তাতে হাতও দেয় না। রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্ট করে পড়ে থাকে, কিন্তু তাদের বাঁচানোর জন্য কেউ আসে না। আমি এসব প্রাণিদের বাসায় নিয়ে যাই, তাদেরও তো স্বাভাবিক সুস্থ জীবনের অধিকার আছে।”

পশুর জন্যও শহরকে নিরাপদ করে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মেয়রকে আমন্ত্রণ জানানো তানিয়া হোসেন বলেন, “১১টা কুকুর গলিতে থাকলে সমস্যা হওয়ারই কথা। আমরা এগুলোকে আটকে রাখতে চেয়েছি। ওরা কিছুক্ষণের জন্য হলেও ছাড়া থাকতে চায়। তখনই সমস্যাটা শুরু হয়।”

এলাকার কুকুর আটকে রেখে বা মেরে না ফেলে তাদের টিকা দিয়ে ও নিউটার করে স্বাভাবিক জীবন দেওয়ার দাবি জানান এই গৃহবধূ।

তন্ময় ইমরান বলেন, “কুকুরগুলো তো বাচ্চা। নতুন কাউকে দেখলেই চিৎকার করে। তখনই এলাকার লোকজন ভয় পায়। তারা মনে করে কুকুরগুলো কামড়াবে। জায়গা আছে, লোক আছে, কিন্তু নেড়ি কুকুরকে ধরে কোন গাড়িতে করে আমি সিটি করপোরেশনে নিয়ে যাব?”

অ্যাম্বুলেন্স বা কুকুরগুলোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি, প্রশিক্ষিত কর্মী এ বিষয়গুলোতে নজর দেওয়ার জন্য মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এ সময় বাংলাদেশ প্রাণী কল্যাণ ফাউন্ডেশন ‘অভয়ারণ্য’-এর প্রতিষ্ঠাতা রুবাইয়া আহমেদ বলেন, “ভ্যাক্সিনেশনের কথা হচ্ছে, সেটা তো অবশ্যই জরুরি। সেটা করলে তো কুকুর গায়েব হয়ে যাবে না, কুকুর কিন্তু কুকুরের জায়গায়ই থাকবে।”

কুকুরভীতি দূর করতে এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “কুকুর কেন কামড় দেয়, সে ব্যাপারগুলো নিয়ে কাজ করা উচিত। কেন বেশিরভাগ মানুষ প্রবলেম মনে করছে? আমাদের কাজ হল, কুকুরের দ্বারা মানুষের যেন ক্ষতি না হয়, আবার মানুষের দ্বারা কুকুরের যেন ক্ষতি না হয়।”

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার কথা বলেন টোলারবাগ সমাজকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি আবদুস সাত্তার রফিক।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমদাদুল হকসহ, এলাকার অনেকেই এসময় উপস্থিত ছিলেন।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top