একজন পুরুষের জন্য এক নাকি চার স্ত্রী উত্তম?

S M Ashraful Azom
একজন পুরুষের জন্য এক নাকি চার স্ত্রী উত্তম

সেবা ডেস্ক: শাবিব ইবনে সিত্তা বর্ণনা করেন, একবার খালেদ ইবনে সাফওয়ান তামিমি খলিফা আবুল আব্বাস সাফফাহকে একাকি বসে থাকতে দেখলেন।

অনুমতি প্রার্থনা করে বললেন, আমিরুল মুমিনীন! অনেক দিন ধরে আপনাকে একটি কথা বলবো ভাবছি। কিন্তু উপযুক্ত সময় ও পরিবেশ না পাওয়ায় বলা হয়নি। আজ যেহেতু আপনি অবসর আছেন, তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই। আজ তাহলে কথাটা বলেই ফেলি।

খলিফা সম্মতি জানিয়ে বললেন, ঠিক আছে বলো।

কথা চলাকালীন যদি দরজাটা বন্ধ রাখতেন তাহলে নিশ্চিন্তে কথাটা বলতে পারতাম।

খলিফা পাহারাদারকে বললেন, দরজাটা বন্ধ করে দাও; কেউ যেন এদিকে না আসে। আমরা জরুরি আলাপ করছি।

দরজা বন্ধ হলে খালেদ ধীরে ধীরে বলা শুরু করলেন, আমিরুল মুমিনীন! আল্লাহ আপনাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন। বিত্ত বৈভব, ধন-সম্পদ কোনো কিছুর অভাব রাখেননি। সুন্দরী মেয়েদের সান্নিধ্য আপনার হাতের মুঠোয়। চাওয়া মাত্রই প্রচুর সুন্দরী রমণী আপনার মনোরঞ্জন করতে প্রস্তুত। আপনার চরণে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে তারা ধন্য হতে চায়। কিন্তু আপনি এমন বেরসিক, এক মধ্যবয়সী স্ত্রী ছাড়া কাউকে সময় দিতে চান না। কি এমন পেয়েছেন তার মধ্যে বলুন তো!

জাহাঁপনা, জীবনে আনন্দ ফুর্তির দরকার আছে কি না? আপনার মন প্রফুল্ল থাকলে প্রজারাও সুখে শান্তিতে থাকতে পারবে।
পৃথিবীতে কত বিচিত্র ধরনের নারী আছে তা কি জানেন?

কেউ দেখতে ফুটন্ত গোলাপের মতো। কোনো মেয়ে দীর্ঘাঙ্গিনী। কারো মুখশ্রী স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ। কারো সরু কোমর, ভারী নিতম্ব, কারো চোখ ডাগর ডাগর। মদিনা, তায়েফ, ইয়ামামার মেয়েরা খোশালাপী ও উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে থাকে। আপনি তো এসব কিছুই জানেন না। আপনি তো তাও জানেন না, সুন্দরী শাহজাদীরা কতো ধরনের সুগন্ধি ও সাজ সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে।

এভাবে খালিদ দীর্ঘক্ষণ খলিফার নিকট মেয়ে বিষয়ক লম্বা বক্তৃতা দিতে লাগল। শুনে খলিফা এতটাই প্রভাবিত হলেন মনে হলো, তিনি এ জগতে নেই। খালেদের বর্ণনাকৃত মেয়েরা খলিফার অন্তর গভীরভাবে দখল করে নিল।

কথা শেষ হলে তিনি বললেন, তোমার পূর্বে কেউ আমাকে এ বিষয়ে বলেনি। মনে হচ্ছে নতুন জগতের সন্ধান পেলাম। কথাগুলো আবার শোনাও তো। খালেদ আগের চেয়েও অধিক ঝাল মসলা মাখিয়ে পুনরায় কথাগুলো শোনালেন।

শুনে তন্ময় হয়ে খলিফা অনেকক্ষণ নিজ চিন্তার জগতে বিভোর হয়ে রইলেন। কখন খালেদ চলে গেল টেরও পেলেন না।

কিছুক্ষণ পর খলিফার স্ত্রী উম্মে সালমা সেখানে আসলেন। খলিফাকে ভাবনার জগতে দেখে উদ্বিগ্ন গলায় বললেন, আমিরুল মুমিনীন! আপনার কি হয়েছে? কোনো খারাপ খবর এসেছে নাকি? শরীর খারাপ করেছে আপনার? চুপ করে থাকবেন না। দোহাই আল্লাহর, সব আমাকে খুলে বলুন।

খলিফা পাশ কাটাতে চাইলেন, কিছু হয়নি এমনি বসে আছি।

তাহলে আপনার চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন?

কই, আমি তো ঠিকই আছি।

খলিফা যতোই এড়িয়ে যেতে চাইলেন। ততোই স্ত্রী ধীরে ধীরে বলার জন্য চাপ দিতে থাকলেন।

অবশেষে খলিফা খালেদের সব কথা তাকে খুলে বললেন।

তিনি স্ত্রীকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো মেয়েকে কল্পনাও করতে পারতেন না। শপথ করেছিলেন, তার বর্তমানে অন্য কোনো মেয়েকে অন্তরে স্থান দেবেন না। বিছানায়ও না।

খলিফার কথা শেষ হলে স্ত্রীর মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেল। খালেদের প্রতি মন বিষিয়ে উঠল। তীক্ষ্ণ স্বরে খলিফাকে জিজ্ঞেস করলেন, তা ওই হারামযাদার কথা শুনে আপনি কী বললেন?

আহা, মুখ খারাপ করছো কেন? সে আমার হিতাকাঙ্খী।

এ কথা শুনে স্ত্রী মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, হ্যাঁ সে আপনার তাহলে হিতাকাঙ্খী। তাহলে যান! তার কথামতো কয়েকটি মেয়ে এনে তাদের সঙ্গে ফুর্তি করুন।

এ কথা বলে ক্রোধে গজগজ করতে করতে স্ত্রী বের হয়ে গেলেন। অন্দর মহলে গিয়েই তার কয়েক গোলামকে নির্দেশ দিলেন, জলদি বের হও খালেদকে যেখানে পাবে পিটিয়ে হাড্ডি মাংস একাকার করে ফেলবে।

তারা অতি দ্রুত প্রস্তুত হয়ে খালেদের খোঁজে বেরিয়ে গেল।

এদিকে খালেদের মনে আনন্দ আর ধরে না। ভাবল এবার মোটা অংকের পুরস্কার পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। যে আনন্দ ফুর্তির সন্ধান খলিফাকে দিয়ে এসেছি উপহার উপঢৌকনের বন্যায় আমাকে নিশ্চয়ই ভাসিয়ে দেয়া হবে।

কত হাদিয়া আসতে পারে তারপর সেগুলো কি কি কাজে খরচ করবে তারও একটা ফিরিস্তি মনে মনে তৈরি করে ফেলল। সে আকাশ কুসুম স্বপ্নে বিভোর ছিল।

হঠাৎ দেখতে পেল কিছু লোক এদিকেই আসছে। তারা এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খোঁজ করছিল। খালেদ খুশি হয়ে ভাবল, নিশ্চয় আমাকে পুরস্কার দেয়ার জন্য খোঁজা হচ্ছে।

সে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, এই যে ভাই, আপনারা মনে হয় আমাকেই খুঁজছেন। তাই না? আমি খালেদ।

ভাবল, পুরস্কারটা তাহলে আজই পাচ্ছি।

লোকগুলো তাকে দেখে দ্রুত এগিয়ে আসতে লাগল। একজন লাঠি উঁচিয়ে ধরে বলল, দাঁড়া তুই। আজ তোর বারোটা বাজিয়ে ছাড়ব।
লোকটির কথা শুনে খালেদ হতভম্ব হয়ে গেল। মানে কি? এরা কি আমাকে ধরে মার লাগাবে?

ভেতর থেকে কেউ যেন বলে উঠল, পালা খালেদ, জলদি পালিয়ে যা। নইলে আজ তোর কপালে খারাবি আছে।

বিদ্যুৎ গতিতে ঘোড়ায় চলে সপাং চাবুক চালালো। চাবুকের বাড়ি খেয়ে ঘোড়া তীব্র গতিতে ছুটে চলল। লোকগুলো তাকে ধাওয়া করল। একজন কাছাকাছি পৌঁছে লাঠি চালাল। আঘাত খালেদের গায়ে না লেগে ঘোড়ার পেছনে লাগল। আঘাত খেয়ে ঘোড়া লাফিয়ে উঠল। আরো দ্রুত বেগে ছুটল এবং তাদের নাগালের বাইরে চলে গেল।

খালেদ ভাবল, নিশ্চয় কোনো গোলমাল হয়েছে। নইলে এমন হবে কেন? ভেবে ভেবে কোনো কূল-কিনারা পেল না। ঘোড়া তাদের নাগালের বাইরে চলে আসায় খালেদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মনে হলো যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। ভাবল, আর ওদিকে নয় বাবা। বড় বাঁচা বেঁচে গেছি।

কয়েকদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস পেলে না। ক’দিন পর ঘর থেকে ভয়ে ভয়ে বের হলে কয়েকজন লোক তাকে ঘিরে ফেলল। একজন বজ্রমুষ্ঠিতে হাত চেপে ধরে বললো, এখনি খলিফার দরবারে চলো। খালেদ ভয়ে বিবর্ণ হয়ে গেল। আজ বুঝি আর জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবো না। হায়, আমার মতো অকাল মৃত্যু যেন আর কারো না হয়।

খালেদ বলেন, আমাকে খলিফার নিকট নিয়ে যাওয়া হলো। খলিফা একটি নির্জন কক্ষে বসে ছিলেন। কক্ষের এক পাশে মিহি কাপড়ের পর্দা টানানো ছিল। পর্দার ওপাশ থেকে সাড়াশব্দ ভেসে আসছিল।
বুঝতে পারলাম, খলিফার স্ত্রী সেখানে বসে আছেন। আমাকে দেখেই খলিফা উৎকন্ঠিত গলায় বললেন, তুমি মেয়েদের সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছিলে সেদিন, আজ পুনরায় বলো।

মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম জী, অবশ্যই। আমি কেশে গলা পরিষ্কার করে বলতে লাগলাম আমিরুল মুমিনীন, আরবিতে সতীনের প্রতিশব্দ হলো ضرتين (জরতাইন) । যা ضار (জার) অর্থাৎ ক্ষতি থেকে নির্গত হয়েছে। এতেই বুঝা যায় একাধিক বিয়ে করা একদম ঠিক না। যারা একাধিক বিয়ে করেছে, তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে অশান্তি কত প্রকার ও কী কী।

খলিফা চেঁচিয়ে উঠলেন: খামোশ, এসব কি আবোল তাবোল বকছ? সেদিন তো এসব বলোনি?

আমি খলিফার কথায় কর্ণপাত না করে কথা চালিয়ে গেলাম।

যাই হোক, যা বলছিলাম। কারো তিন বউ থাকলে তার জীবন তামা তামা করতে আর কিছু প্রয়োজন নেই। বউরা একে অন্যের কুৎসা বদনাম সারাক্ষণ তার কানে বাজাতেই থাকবে। বেচারা তখন সংসার ত্যাগ করে জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুঁজবে।

খলিফা অধৈর্য হয়ে বললেন: তুমি কি ফাজলামো করছ? এ কথা তুমি সেদিন বলে থাকলে আমি যেন রাসূল (সা.) এর নৈকট্য থেকে মাহরুম হয়ে যাই। লাইনে এসো। যা সেদিন বলেছো তাই বলো। নইলে ভালো হবে না বলছি।

আমি তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে বললাম, কেউ যদি চার বিয়ে করে, তাহলে অকাল বার্ধক্যে শরীর ভেঙে যাবে। অল্পবয়সে দাঁত পড়ে যাবে। চুলে পাক ধরবে। অথর্ব বুড়ো হয়ে ঘরে বসে বসে চার বউয়ের ঠেঙ্গানি খাবে আর আফসোস করবে, কোন বুদ্ধিতে যে চার বিয়ে করতে গেলাম।

পর্দার ওপাশ থেকে খিলখিল করে হাসির শব্দ ভেসে এলো। এতে আমার উৎসাহ আরো বেড়ে গেল।

আমি বললাম, আমিরুল মুমিনীন! আপনার স্ত্রী কুরাইশ বংশীয়া, অনিন্দ্য সুন্দরী, গুণবতী। তবুও আপনি অন্য মেয়ের দিকে নজর দেন, ছিঃ ছিঃ!

এতোক্ষণে খলিফার ধৈর্যচ্যুতি ঘটল, হুঙ্কার দিয়ে বললেন: হতচ্ছাড়া পাঁজী, এখন খুব ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে তাই না? আজ তোকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব।

আড়াল থেকে উম্মে সালমা উচ্চস্বরে বলে উঠলেন আপনি থামুন তো। আপনাকে আর সাধু সাজতে হবে না।

খালেদ, আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আসলে সেদিন এই কথাগুলোই বলেছিলে। খলিফাই আমাকে উল্টোপাল্টা বলে আমার মেজাজ বিগড়ে দিয়েছিলেন।

উম্মে সালমার কথার ওপর খলিফা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না। আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। মনে হলো এ আগুনেই আমাকে ভস্ম করে দেবেন। আমি কোনোরকম উঠে দ্রুত পালিয়ে বাঁচলাম।

পরে উম্মে সালমা আমাকে দশ হাজার দিরহাম সহ আরো মূল্যবান জিনিস পুরস্কার দিলেন।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top