করোনা ঝুঁকিতে দেশের পল্লী চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ীরা

S M Ashraful Azom
করোনা ঝুঁকিতে দেশের পল্লী চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ীরা

সেবা ডেস্ক: দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির প্রধান বন্ধু পল্লী চিকিৎসক এবং ওষুধ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন করোনা ভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকিতে। প্রাণঘাতি এই ভাইরাস করছে গোটা বিশ্বকে। প্রতি মুহূর্তেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে মন খারাপের খবর। ভাইরাসটিতে যেই আক্রান্ত হচ্ছেন হয়তো মারা যাচ্ছেন, নয়তো হাসপাতালে লড়ছেন অসুস্থতার সঙ্গে। কারো কারো ক্ষেত্রে মিলছে মুক্তিও, তবে বিশ্বব্যাপি সে সংখ্যা খুবই কম। এ অবস্থায় দেশ ও দেশের বাইরে জরুরি সেবা দেয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। এসব জরুরি সেবার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওষুধ দোকান। এ সব ঔষধের দোকানে ভোর থেকে গভীর রাত্রি পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেনীর লোকজন ঔষধ ক্রয় করেন। প্রান্তিক এই বিশাল জনগোষ্ঠির প্রথম পছন্দের ডাক্তার বা বন্ধু হচ্ছেন পল্লি চিকিৎসক নামে পরিচিত ঔষধের দোকানদার। কিন্তু বর্তমানে তারা রয়েছেন করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে।

জানা যায়, পল্লী চিকিৎসক এবং ওষুধ ব্যবসায়ীরা কোন প্রকার স্বার্থের চিন্তা না করেই যেকোন ব্যাক্তি বা অসুস্থ রোগীকে ব্লাড প্রেশার মাপা, সুগার চেক করা, কাটাছেড়া সেলাই ও বেন্ডিস করা, সেলাইন ইঞ্জেকশন প্রয়োগ সহ নানাবিধ কাজ প্রতিদিন, প্রতিক্ষন করে যাচ্ছেন।

সারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে পাড়ায়, মহল্লায় অলিতে গলিতে রয়েছে ফার্মেসি। এসব ফার্মেসিতে কর্মরতরা অনেকটা ঝুঁকির মুখে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী তো দুরের কথা, কোন প্রকার মেডিক্যাল সাপোর্ট ছাড়াই তারা বিরামহীন সেবা প্রদান করে চলছেন দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে। ইতিমধ্যেই অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার সংবাদও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ নিতান্তই পেটের দায়ে সেবা দেয়া এই মানুষগুলোর সুরক্ষার চিন্তা কারো মাথায় নেই।  প্রতিনিয়ত নানা ধরণের রোগীরা এসে ওষুধ সংগ্রহ করছেন তাদের কাছ থেকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওষুধ দোকানিদের অনেকেরই নেই ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জমাদি (পিপিই)। কেউ কেউ শুধু মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করলেও পুরোপুরি নিরাপত্তা নেই কারোরই।

জামালপুরের বকশীগঞ্জ বাজারের ওষুধ দোকানি হাতেম আলী’র সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মাস্ক আর হ্যান্ড গ্লাভসই ব্যবহার করছি। এছাড়া আর তো কোনো সুরক্ষা সরঞ্জামাদি নেই।

তিনি বলেন, সারাদিন অনেক রোগী আসে। হাঁচি, কাশিসহ হরেক রকম রোগী ওষুধ নিতে আসে। তাতে সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি। দোকানের সামনে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছি। তারপরও অনেকে সেটা ভেদ করে ভেতরে চলে আসেন। কিছু বলার থাকে না। আমরা অনেক অসচেতন। কেউ বললেও শোনে না। কেউ আবার ওষুধ কিনতে এসে গল্প শুরু করেন। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যেতে অনুরোধ করলেও হাস্যরস করে উড়িয়ে দেয়।

একই এলাকার আরেক দোকানি নাম প্রকাশ না করে বলেন, পরিবারের ভরণপোষন আর মানুষের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে দোকান খোলা রেখেছি। নয়তো বন্ধ রাখতাম। ক্রেতারা খুব অসচেতন। অনেকে মাস্ক না পরেই দোকানে আসেন। দোকানের ভেতর হাঁচি দেন। কাস্টমার বলে কিছু বলতেও পারি না। কত অনিরাপদ অবস্থায় কাজ করছি সেটা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।

জামালপুর সদরের এক ব্যবসায়ী জানান, দোকান বন্ধ রাখার উপায় নেই। মানুষের ওষুধ লাগে। কিন্তু আমরা তো সেইফ না। এত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি যা বলে বোঝানো যাবে না। অনেক ধরণের মানুষ আসেন যারা বিভিন্ন রোগাক্রান্ত। কেউ কেউ এসে দোকানের সামনে ফিতা দিয়ে তৈরি করা ব্যারিকেড পার হয়ে ঢুকে পড়েন। খুব অস্বস্তিতে থাকি। কার কোন সমস্যা কেউ বলতে পারে না। আল্লাহই রক্ষা করবেন।

ইসলামপুরের এক ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, নিরাপত্তা একদম নাই। একটা পিপিইর অনেক দাম। এত টাকা দিয়ে পিপিই কিনে দোকানে বসে সেটা পোষায় না। যতটুকু ব্যবস্থা মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস আর স্যানিটাইজার ব্যবহার করেই আছি। আর বেচাকেনাও তো খুব একটা নেই।




ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top