ত্রাণ না দিলে গুলি করতে বলা বিএনপি নেতার বাড়িতে গিয়ে হতবাক ইউএনও!

S M Ashraful Azom
ত্রাণ না দিলে গুলি করতে বলা বিএনপি নেতার বাড়িতে গিয়ে হতবাক ইউএনও!

সেবা ডেস্ক: ৩৩৩-তে এসএমএস করে না খেয়ে থাকার অভিযোগে নিজেকে গুলি করতে বলা সেই বিএনপি নেতার বাড়িতে গিয়ে যা দেখলেন এবং যা জানলেন বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, তাতে রীতিমত হতবাক হয়েছেন তিনি। তার ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো-

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক কিংবা বর্তমানে যেসব ইউএনওগণ দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত আছেন তাদের কাছে নিয়ম বা বৈধভাবে কেউ কিছু চেয়ে পাননি এরকম দৃষ্টান্ত খুবই কম। আমি নিজেও অসংখ্য মানুষের বিপদে তাদের সাহায্য পেয়েছি। কিন্তু গতকাল যা দেখলাম, তাতে সরকারি কর্মকর্তারা কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন!

৩৩৩ থেকে এসএমএস পেলাম; বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের প্রসাদপাড়ার বাসিন্দা জনৈক আবু বকর সিদ্দিকের ঘরে চাল নেই, তার চুলা জ্বলছে না। এসএমএস এ প্রদত্ত নম্বরে ফোন দিলাম; কথা শুনে মনে হলো ঘটনা হয়তো সত্য।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে তার বাড়িতে ত্রাণের প্যাকেট পৌঁছানোর জন্য নির্দেশনা দিলাম। তিনি তা পৌঁছে দিলেন। এরমধ্যে জেলা প্রশাসক, দিনাজপুর জনাব মো. মাহমুদুল আলম স্যার এর মাধ্যমে তথ্য পেলাম উক্ত আবু বকর সিদ্দিক বাংলাদেশ সরকারের উর্ধ্বতন মহল বরাবর জরুরী ত্রাণ চেয়ে আবারও এসএমএস করেছেন।

দেরি না করে ত্রাণ নিয়ে নিজেই হাজির হলাম তার বাড়িতে। সাথে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য ও স্থানীয় কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি।

১০ কেজি চাল আর সাথে আলু দিলাম ত্রাণ হিসেবে। তার সেই এসএমএস এর ভাষায় অধিকতর ব্যথিত হয়ে নিজের পকেট থেকে ১০০০ টাকাও দিলাম। ভাবছিলাম একটা মানুষ কতটা অসহায় হলে নিজেকে গুলি করতে বলতে পারেন!

তার কষ্টের কারণ খুঁজতে ইচ্ছা হলো। কিন্তু খুঁজে যা পেলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তার শোবার ঘরে এলইডি টিভি চলছে! শোকেস ভর্তি জিনিসপত্র, ড্রেসিং টেবিল, খাট, স্টিলের ট্রাংক, চেয়ার, টেবিল। এই রুমেই পেলাম চেয়ারম্যানের দেয়া সেই ত্রাণের প্যাকেট, যেটি খোলার প্রয়োজনও তার হয়নি।

UNO was shocked to go to the BNP leader's house if he did not give relief.


তার ছেলে ডেল কোম্পানির ল্যাপটপ চালাচ্ছে অন্য একটি ঘরে, অন্ততঃ ২ লিটার সয়াবিন তেল ভর্তি বোতলও দেখলাম, দেখলাম রান্না করা ভাত আর মাত্রই খাবার শেষ করা প্লেট।

আর একটি ঘরে বাচ্চাসহ ছাগল, এসব কিছু কারও নজর এড়ালো না। মুরগির খোপে দেখলাম কয়েকটি মুরগিও আছে। গত বছরেই তিনি তার ফুফুর নামে লাখ টাকার সরকারি ঘরও বরাদ্দ নিয়েছেন!

আরও জানলাম, মি. সিদ্দিক এর বাবা এবং ৩ ভাইয়ের আলাদা ঘর রয়েছে একই বাউন্ডারিতে। দেখলাম তার এক সহোদর, যিনি ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে অন্তত ৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন, তার নির্মানাধীন পাকা ভবন!

বলে রাখা ভাল, তার বাড়িতে ঢোকার সময়ই লোহার গেট দেখে একটু খ’টকা লেগেছিল। এরপর যা জানলাম তাতে চমকে উঠলাম। তিনি দুটি মামলার আসামী। একটি জ্বালাও-পো’ড়াও সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলা আর একটি মোবাইল কোর্ট এ ১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত মামলা, যাতে তিনি জামিনে আছেন।

স্থানীয়রা জানালেন, এলাকার ভূমিহীন অ’সহায় মানুষদের খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন এই ব্যক্তি!

সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর স্বাক্ষর নকল করে জমির খতিয়ান ও ডিসিআর তৈরি করে ব্যাংক থেকে ঋ’ণ নেয়ার চেষ্টা তার জন্য কোন ব্যাপারই না। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিরু’দ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট নামে বেনামে অভিযোগ দেয়া তার নিয়মিত কাজ- অনেকেই জানালেন।

তিনি বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।

এতক্ষণে বুঝলাম কেন তিনি এমনটি করছেন। যে কোন উপায়ে সরকার ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিপদে ফেলাই তার উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রকে অ’স্থিতিশীল করাই তার লক্ষ্য। রাত ১০টায় জরুরী কাজ রেখে, পরিবার ফেলে, করোনার ভয় দূরে ঠেলে, ২৫ কি.মি. দূরে গিয়ে এটাই কি আমার প্রাপ্য? এই রাষ্ট্রবিরো’ধীদের চিনে রাখুন, দেশকে বাঁচান। ঘরে থাকুন, ভাল থাকুন।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top