সেবা ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ মহল্লার নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার অনুরোধ জানিয়ে গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান খান শহীদ।
২০ মে বুধবার ঘাটাইল পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান খান শহীদ স্বাক্ষরিত এক গণ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা যায়।
এদিকে এই নির্দেশনা জারি করে আজ বুধবার বিকেলে ঘাটাইল পৌর এলাকায় মাইকিং করে পৌর কর্তৃপক্ষ।
ঘাটাইল পৌর মেয়রের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের চলমান করোনাভাইরাস জনিত কারণে আগামি ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক মহল্লার নিকটস্থ মসজিদে সুবিধাজনক সময়ে আদায় করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
প্রয়োজনে মসজিদে একাধিক জামাতে নামাজ আদায় করা যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গণ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, খোলা মাঠে কোন ভাবেই ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে না। ফলশ্রুতিতে ঘাটাইল সদর ঈদ গাহ মাঠে প্রতি বছর ঈদের যে জামাত অনুষ্ঠিত হয় সেটি এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাতিল বলে গণ্য হল।
এর আগে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদ-উল-ফিতরের নামাজের জামাত নিকটস্থ মসজিদে মাস্ক পরে আদায় করার জন্য অনুরোধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত ১৪ মে (বৃহস্পতিবার) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নির্দেশনায় এ অনুরোধ করে মন্ত্রণালয়।
এছাড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পরের হাত মেলানো পরিহার করার জন্যও অনুরোধ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নির্দেশনায় জানায়, উন্মুক্ত স্থানে বড় জমায়েত পরিহার করতে হবে।
‘স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের নামাজের জামাত আদায়’ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, ইসলামী শরিয়তে ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের নামাজের জামাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বসহ আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিজনিত কারণে মুসল্লিদের জীবন ঝুঁকি বিবেচনা করে এ বছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে নিকটস্থ মসজিদে জামাত আদায় করার জন্য অনুরোধ করা হলো। প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
অনুরোধ পত্রে উল্লেখ করা হয়, ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিদের প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। মসজিদে ওজুর স্থানে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে এবং মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যে কোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আল-আমিনের দরবারে দোয়া করার জন্য খতিব ও ইমামদের অনুরোধ করে সরকার। নির্দেশনায় বলা হয়, খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন।
এসব নির্দেশনা লঙ্ঘন হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।
ঈদের নামাজ আদায়ের এসব নির্দেশনা সব বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সব রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে পাঠানো হয়েছে।
এই ধারাবাহিকতায় জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশাবলী বিশেষ সতর্কতামূলক বিষয়াদি হিসেবে অনুসরণ করে শর্ত সাপেক্ষে ১৪৪১ হিজরির পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের জামাত আদায়ের জন্য অনুরোধ জানালো ঘাটাইল পৌরসভা।
এ বিষয়ে ঘাটাইল পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান খান শহীদ জানান, জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় মহামারী করোনাভাইরাসের হাত থেকে জনগণের অধিক সুরক্ষার জন্য সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক খোলা স্থানে ঈদ-উল-ফিতরের জামাতে নামাজ অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে প্রতি পাড়া মহল্লার স্থানীয় মসজিদে একাধিক জামাতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ঘাটাইল সদর ঈদ গাহ মাঠ সহ সকল ঈদ গাহ মাঠে ঈদের জামাতে নামাজ আদায়ের বিষয়ে সরকার নিরুৎসাহিত করছে। ফলশ্রুতিতে ঘাটাইল সদর ঈদ গাহ মাঠে ঈদের জামাতে নামাজ অনুষ্ঠিত হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করে দেশ ও জাতিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান পৌরসভার মেয়র। করোনাভাইরাস সহ সকল দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশ সহ সকল মানুষকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া করার জন্য সকল মুসলিম ভাই-বোনদের প্রতি এ সময় অনুরোধ জানান ঘাটাইল পৌর মেয়র।