নানান রঙের ঈদ ও সর্বজনীন প্রত্যাশা

S M Ashraful Azom
নানান রঙের ঈদ ও সর্বজনীন প্রত্যাশা

প্রতিটি ধর্মেরই নিজস্ব কিছু আনন্দঘন পালা পার্বণ রয়েছে । কালের পথ পরিক্রমায় ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের জন্য দুটো খুশির পার্বণের অন্যতম একটি হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর । এক মাস পবিত্র সিয়াম সাধনার পর প্রতি বছর মুসলমানদের আনন্দের এই উপলক্ষ ধর্মপ্রাণ মানুষেরা আল্লাহর এক নিয়ামত হিসেবেই জানে। সমস্ত মুসলিম উম্মাহ এক আল্লাহর হুকুমে সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিজেকে সমস্ত লোভ-লালসা, মোহ, চোগলখুরি, অসত্য কথন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে পরম করুনাময়ের সান্নিধ্য কামনায় মশগুল থাকে। আল্লাহ পাকও এই মহিমামন্ডিত ইবাদতের পুরস্কার কিয়ামতের দিন নিজ হাতে দেবার ঘোষণা দিয়েছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না প্রায় সব মুসলিম নর- নারীই এই ইবাদতটি পালনের প্রানপণ চেষ্টা করে। সারাটা দিন কোন প্রকার খাবার গ্রহণ না করে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ মেনে নফসকে সংযত রাখে। নিয়ম করে রাতে ওঠা, সেহরি খাওয়া, ইফতার করা, তারাবির নামাজ আদায় করা, সবই একটা সুশৃঙ্খল পদ্ধতি মেনে করে।

এভাবে ত্রিশ দিন পর সংযমকারিদের জন্য আসে মহা আনন্দের উপলক্ষ পবিত্র ঈদুল ফিতর। দেশের নানা প্রান্ত থেকে নাড়ির টানে ছুটে আসে সবাই। প্রিয়জনের সংগে মাত্র দুই থেকে তিনটা দিন কাটাবার জন্য রাস্তা-ঘাটের ঝক্কি-ঝামেলা স্বীকার করে, অর্থকড়ি খরচ করে পরিবার-পরিজনসহ আসে।

কিন্তু সত্যিই কি সবাই সে অনাবিল আনন্দ পায়? পাঠক , আমার সঙ্গে অনেকেই একমত হতে নাও পারেন। তবে সত্যিটা হচেছ আমরা সবাই ঈদের অপার আনন্দ উপভোগ করতে পারি না। দেখা যায় আমাদের সমাজের নানা অমীমাংসিত বিষয় তুলে রাখা হয় ঈদের জন্য। এ বিষয় নিয়ে বসলে এক পক্ষ অখুশি হবে এটাই স্বাভাবিক। অনেক সময় তা সংঘাতে পর্যন্ত রূপ নেয়। সারা বছর সমাজ নিয়ে কোন কথা না হলেও এই সময়ে এসে অনেক কারনে সমাজচ্যুত করা হয়। আবার অনেক লোকজনকে একসাথে পেয়ে কেউ কেউ নেতা হবার খায়েশে অন্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।

আবার পছন্দের জিনিস না পাওয়ায় আপন জনের সঙ্গে কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। রোজার সংযম মুহূর্তেই উবে যায়। সবচেয়ে ভযাবহ বিষয় হলো স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, মা-বাবার মতো পরিবারের একান্ত কাছের মানুষের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। হয়ত সারা বছরের জমানো ক্ষোভ ঈদের দিন মনকে এলোমেলো করে দেয়। মনে অনেক স্বপ্নের মাঝে বাসা বাধে শুধুই হতাশা। এই সুখ পাবার জন্যেই কি এত কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে আসা?

সংসারে হয়ত মা নয়তবা বউ, কিংবা বাবা, ভাই-বোন একে অন্যের উপর অভিমান করে মন খারাপ করে রইল। ব্যস। কেউ খাচ্ছে, কেউ খাচেছনা। কেউবা নতুন জামা কাপড়ই পরলো না। এমনও হয় এসব ক্ষুদ্র তুচ্ছ কারণে পরিবার ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায়। এমনকি হাতাহাতি, মারামারি ও হয়। অনেক স্বপ্ন, অনেক আশার সমাধি রচিত হয় ।

যৌথ পরিবার এই যাঁতাকলে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। অনেক বাবা-মাকে তার জামাই দাওয়াত দিতে এসে মেয়েকে নিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে ফেরার পথ ধরতে হয়। অথবা পাওনাদার এসে নানা কথা শুনিয়ে গেল। দোকানের পুরনো হিসেব মেটাতেই সব টাকা শেষ হয়ে গেল। ঈদের দিন ছেলে পুলে নিয়ে একবেলা খাবার পর্যন্তও ভালোমতে জুটলো না। অনেক আদরের সন্তানটিও চাহিদা পূরণ না হওয়ায় ঈদের দিন ঘরের কোণে নিভৃতে চোখের জল ফেলছে ।

এমন ঘটনা অনেক পরিবারেই ঘটে। বিগত কয়েক বছর যাবৎ আরেকটি অনভিপ্রেত, অপ্রিয় ঘটনা পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হতে শুরু করেছে। ঈদগা মাঠে নামায পড়ানোকে কেন্দ্র করে দুই মৌলভির অনুসারিদের মধ্যে হামলা, মারপিটের ঘটনা থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে।

এমনিভাবে অনেক আশার মর্মমূলে আঘাত হানে অনেক অনেক দুঃখ। তাহলে রোজার সংযম শিক্ষা আমাদের কতটুকু বাস্তবিক হয়ে ধরা দিল। এই সংযমতো শুধু পানাহার বন্ধ করাকে বুঝায় না। শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, নৈতিক সবকিছুকে সংযত রাখা রোজার উদ্দেশ্য। তবে একমাস কষ্ট করে কি সেই শিক্ষা পেলাম না?

অবশ্যই পেতে হবে। ইসলাম মানবতার ধর্ম। যুগে যুগে ইসলামের পতাকা তলে সামিল হয়ে নবি করিম (স) এর জীবনাদর্শকে গ্রহণ করে কতজন ধন্য হলো, পেল ইহকাল-পরকালের বাদশাহি। আর আজ নবিকূল শিরোমণি আখেরি নবির উম্মত হয়ে আমরা এখনো ক্ষুদ্র-তুচ্ছ বিষয়কে বড় করে দেখে জীবনটাকে ক্রমান্বয়ে বিষিয়ে তুলছি। না, আর না। এর সাথে দেশব্যাপী করোনা নামক মহামারী আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে অন্যরূপ। আলাদা হবার মতো শিক্ষা আমাদের পূর্বপুরষের চিরাচরিত ধারাকে তছনছ করে দিয়েছে। তবুন মানুষ নিজেকে সংযত করতে পারছে না। এমন মহামামীর মাঝেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে আমরা বাড়ি ফিরছি, হাটে যাচ্ছি, অথবা অকারণে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যেখানে ঘরে থেকে এই মহামারীর বিস্তার রোধ করা যায়, সেখানে বেশি বেশি বাইরে এসে করোনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

তবে না, এবার চলুন পাল্টাই নিজেকে। শুধরে নিই। আসুন, সবাই প্রতীজ্ঞা করি, ঈদের আনন্দকে পারিবারিকভাবে উদযাপন করি। ইসলামের সুমহান আদর্শকে লালনের মাধ্যমে নিজেদের ছোটখাটো মান-অভিমান ভুলে এই পৃথিবীকে সত্যিকারের স্বর্গে পরিনত করি। ইসলামের বিজয় নিশান আবারো সারা পৃথিবীব্যাপি নিরানন্দের লু হাওয়াকে দূর করে আনন্দের আথিথেয়তায় সবাইকে মুগ্ধ করুক।
সেই সাথে সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শিখি। সবই সম্ভব করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। আমিন।

লেখক
আবদুল জলিল
বাংলা প্রভাষক



ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top