সেবা ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে খুলনার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। একটানা ৬ ঘণ্টার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে কয়েক হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি, অসংখ্য গাছ-গাছালি। এছাড়া হাজার হাজার হেক্টর ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে খুলনার ৯টি উপজেলার ৮৩ হাজার ৫৬০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ক্ষতিতে পড়েছেন সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে কয়রা উপজেলায়, সেখানে বাঁধ ভেঙে গেছে।
বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার জানান, আম্ফানের আঘাতে খুলনার ৯টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়ন এলাকায় কম বেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকায় ঘর ভেঙে পড়েছে। কিছু এলাকায় ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে খুলনায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা ৮৩ হাজার ৫৬০টি। কয়রায় বাঁধ ভেঙে গেছে।
কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো. জাফর রানা বলেন, আম্পানের আঘাতে কয়রার চারটি ইউপির ৫২টি গ্রাম সম্পূর্ণ এবং আরো দুটি ইউপির ২৪টি গ্রাম আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলায় সব জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২১টি স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ৫১ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ১ লাখ ৮২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দাকোপ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কাদের বলেন, আম্ফানের আঘাতে দাকোপ উপজেলায় ১ হাজার ১০০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বটবুনিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় দুইটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। দাকোপে বেড়িবাঁধের আধা কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তেরখাদার ইউএনও বিষ্ণুপদ পাল বলেন, আম্ফানের আঘাতে তার উপজেলায় ৩৭০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি ঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে আম্ফানের প্রভাবে খুলনার পাঁচটি উপজেলার কয়েক হাজার মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস অফিস সূত্রে জানা গেছে, আম্ফানের তাণ্ডবে খুলনার উপকূলীয় পাঁচটি উপজেলায় মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণে শীর্ষে রয়েছে পাইকগাছা উপজেলা। তবে তুলনামূলক কম ক্ষতি হয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলায়।
জেলার পাইকগাছায় উপজেলায় মৎস্য ঘেরের ক্ষতির পারিমাণ ৮ কোটি ২২ লাখ টাকা, বটিয়াঘাটায় ৭ কোটি ৯৩ লাখ, কয়রায় ১ কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার, ডুমুরিয়ায় ৭০ লাখ ও দাকোপে ১৫ লাখ টাকা। সর্বমোট জেলায় ক্ষতির পরিমাণ ১৮ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তবে স্থানীয় সূত্রে এই ক্ষতির পরিমাণ বেশি বলে জানা গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখানো পুরোপুরি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে প্রায় ১৮ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।