
রেজাউল করিম বকুল, শেরপুর প্রতিনিধি: বাপ দাদার আমল থাইকা এইহানে থাহি। এই হানের জমি চাষ কইরা পোলাপান গরে খাওন দেই। অহন এই জমিতে কাঠের বাগান করতে চায়। অহন আমরা কোথাই যামু? কথা গুলো বলছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ মাজেদা বেগম। তিনি ওই গ্রামের আকতার হোসেনের স্ত্রী। তার এক মেয়ে আফসানা। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। শনিবার বিকালে তাদের বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত মাঠে শতাধিক লোকের সাথে তারাও একাত্তা পোষণ বন বিভাগের উচ্ছেদ হুমকির প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা এই জমিতে ফসল করি। এডা দিয়ে সংসার চলে। মাইয়া আফসানাকে পড়ালেহা করাই। অহন এই জমিতে বন লোকজন কাঠের বাগান করতে চায়। আমগোর ঘর বাড়ি উচ্ছেদ করতে চায়। তার মতো একই গ্রামের ফজল হকের স্ত্রী ঝরনা বেগম, আব্দুল করিমের স্ত্রী জইনব বেগম, জিয়াউল হকের স্ত্রী আছিরন, আলী আজগরের স্ত্রী বাসিরণ ও শাহাদাৎ হোসেনের স্ত্রী আয়শা খাতুনসহ শতাধিক লোক আসেন সাংবাদিক সম্মেলনে। তারা লিখিত বক্তব্যে দাবি তুলেন তারা এই জমি থেকে কোথাও যাবেন না। বাড়ি উচ্ছেদ ? এমনকি উচ্ছেদ হলে কোথায় যাবে? ফসলি জমিতে কাঠের বাগান করলে তারা ফসল ফলাবে কোথায়? তারা এখানেই থাকতে চায়। বাপ দাদার দখলিয় জমি। এখানেই তারা ফসল করে সংসার চালাবেন। তবে বন বিভাগের উচ্ছেদ হুমকিতে আতংকে দিন কাটা্েচ্ছন তারা।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওই গ্রামের বাসিন্দা শাহাদাৎ হোসেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাকাকোড়া মৌজার ১ নং খতিয়ান ভুক্ত ৫১৮ নং দাগে ৭০.৫০ শতাংশ জমি কালেক্টরের খাস খতিয়ান ভুক্ত। ওই জমিতে প্রায় অর্ধশত বছর যাবত ১২০ টি পরিবার বাড়ি করে বসবাস করে আসছে। এখানে আদিবাসীসহ ৪শ হতে ৫শ জন লোকের বসবাস। এছাড়াও একটি মসজিদ, একটি মাদরাসা ও একটি গীর্জা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি বন বিভাগ ওই জমিতে বন বাগান করার জন্য শ্রমিক নিয়ে যায়। এ সময় গ্রামবাসীরা তাদেরকে বাঁধা দেয়। তবে চলে যায় ঠিকই। যাওয়ার সময় তাদের উচ্ছেদ করার জন্যে হুমকি দিয়ে যায় বলেও অভিযোগে প্রকাশ। এরই প্রতিবাদের সংবাদ সম্মেলন ও মানব বন্ধন করে প্রশাসনের কাছে দাবি করেন, যাতে বন বিভাগ তাদের জমি হস্তক্ষেপ না করে। তারা যেন নিরাপদে থাকতে পারে সেখানে। ফসল করে যেন সংসার চালাতে পারে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখানে রয়েছে বন্য হাতির তান্ডব। এখানে বন বিভাগ কাঠের বাগান করলে বন্যহাতির অত্যাচার আরো বেড়ে যাবে। এতে তাদের যান মালের ক্ষতি আরো বাড়বে। হতদরিদ এসব লোকের সহায় সম্পদ যাতে বেহাত না হয়। তারা যেন নিরাপদে থাকতে পারে। এমনটাই প্রত্যাশা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ছবিতে: বাকাকোড়া গ্রামের উচ্ছেদ আতংকে থাকা বাসিন্দারা ও সাংবাদিক সম্মেলনের একাংশ।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।