দেশ স্বাধীনের পর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ

S M Ashraful Azom
0
দেশ স্বাধীনের পর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ

সেবা ডেস্ক: ‘বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় লক্ষণীয় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ফলে স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য উৎপাদনও বেড়েছে প্রায় চারগুণ। ফলে বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, সুপার সাইক্লোন আমফান ও সাম্প্রতিক বন্যাসহ নানা দুর্যোগ মোকাবেলা করেও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ এখন- ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, পাট উৎপাদনে তৃতীয়, ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং আম উৎপাদনে সপ্তম।’

মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের আয়োজনে নিয়মিত ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ এর ১২তম পর্ব ‘করোনা সঙ্কটকালে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক আলোচনায় যোগ দিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওয়েবিনার আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত হয়। এছাড়া কয়েকটি গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজ থেকেও এটি সরাসরি প্রচার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক উপাচার্য ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার ম-ল, বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি ও সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান এবং আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী।

আলোচনায় যুক্ত হয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনা মহামারীতে সারাদেশের মানুষ একটা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানুষ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত। এরই মাঝে দেশে বন্যার ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যার ভয়বহতায় যাতে কৃষিখাত ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এজন্য আমরা বন্যাক্রান্ত প্রায় ৩৩টা জেলার কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তা, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা, পর্যালোচনা করেছি, দিকনির্দেশনা দিয়েছি।

বন্যা পরিস্থিতিতে কৃষির সঙ্কট নিয়ে তিনি বলেন, এ বছর আউশের টার্গেট ছিল ৩৬ লাখ টন। আউশ মাঠে আছে, ঝুঁকির মুখে। ১৩শ’ হেক্টর জমির আউশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমনের উৎপাদন ১ কোটি ৫০-৬০ লাখ টন ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু সে আমনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আগাম বন্যা এসে বীজতলা নষ্ট করে দিয়েছে। দেরিতে বন্যা এসেও আমাদের ফসল নষ্ট করছে। প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা যদি ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ধান লাগাতে পারি, ধানের উৎপাদন কমবে না। কমিউনিটি লেভেলে চাষীদের নিয়ে আমরা উঁচু জায়গায় বীজতলা করিয়েছি। পর্যাপ্ত বীজ আমরা রেখেছি। যদি জীবতলা নষ্ট হয় তাহলে আমরা আবার লাগাব।

ড. আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার সঙ্কটে জাতির উদ্দেশে যতগুলো ভাষণ দিয়েছেন, ভিডিও কনফারেন্স করেছেন- প্রতিটি জায়গায় তিনি কৃষিতে স্বাস্থ্যের পরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন ‘এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। যে পরিস্থিতি, যে ভয়াবহতা এখন কোনভাবেই খাদ্য সঙ্কট রাখা যাবে না।’ এটা বিবেচনায় নিয়ে আমরা সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করেছি। তিনি পেঁয়াজ, গম, আখ, ডালে আমদানি নির্ভরতা কমাতে নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত নিয়ে বাংলাদেশী কৃষি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

ড. এম এ সাত্তার ম-ল বলেন, এতকিছুর মধ্যেও ভাল খবর হলো আমাদের কৃষিতে উৎপাদন ব্যবস্থাতে একটা লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনটা হলো এক কোটি ৬৫ লাখ কৃষক পরিবার যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঙ্গিকে চাষাবাদ করত সেটা এখনও আক্ষরিক অর্থে আছে। কিন্তু কার্যত একটি ঘটনা ঘটে গেছে। যে ব্যক্তি পর্যায় থেকে একটি সার্ভিস প্রোভাইডার বা বাজার নেতৃত্বাধীন একটি উৎপাদন ব্যবস্থা কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এসেছে। যা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এটা বাণিজ্যিক কৃষির সঙ্গে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ। এটা শুধু ফসল সম্পদ নয়, এটা প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, দুগ্ধ সবকিছুতেই দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা বাড়ালে দেশের কৃষি বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা কৃষির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়া ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এই সবুজ চত্বরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে কৃষিকে আরও উন্নত করার জন্য এবং কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য কৃষি গ্রাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান করেন। সেই থেকে কৃষি গতি পেয়েছে এবং দুর্বার গতিতে এগিয়ে গিয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান বলেন, এই যে কোভিড-১৯ সারাবিশ্বকে যেটাকে আক্রান্ত করেছে, বাংলাদেশও সেটি থেকে বাদ পড়েনি। এই মহামারীতে কি ক্ষতিটা হয়েছে আমরা একটু যদি বিশ্লেষণ করি এটার কিন্তু একটা ইতিবাচক প্রভাবও আছে। যেমন মৎস্য। এরা যে সমস্ত জায়গায় বিচরণ করে, প্রজনন কেন্দ্র সে মাছগুলো তুলে আনতে পারেন নেই। যেহেতু সাপ্লাই চেইনটা ভাল ছিল না। ফলে সেখানে মৎস্য প্রজননটা বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে যদি উš§ুক্ত জলাশয়গুলো কথা বলা হয়- সেখানে কিন্তু শিল্পকারখানা বন্ধ থাকা বা বেপরোয়াভাবে যে মাছ ধরে ফেলা বা পোনা মাছ ধরে ফেলা এগুলো এবার হয় নেই।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top