সেবা ডেস্ক: টাঙ্গাইলের চতুর্দিকে থই থই বন্যার পানি। ডুবে একাকার নদীনালা, রাস্তাঘাট, খালবিল। ঘরের ভিতরে একহাঁটু, উঠোনে কোমর অবধি জল। কেউ ১০ দিন, কেউবা ২০ দিন ধরে পানিবন্দী। যারা দিন আনে দিন খায় বন্যায় তাদের প্রথম চাহিদা ত্রাণসামগ্রী। কিন্তু যারা ত্রাণ চায়না, তারা চায় পানির বন্দীদশা থেকে মুক্তি। কেননা তাদের ঘরে নেই কাঁচা বাজার। নেই অসুখের ওষুধ। ফুরিয়ে গেছে নিত্যপণ্য সামগ্রী। বানভাসী পানিবন্দী এসব মানুষের জন্য এখন একটি অপরিহার্য বিষয় নৌকা। একমাত্র নৌকাই পারে তাদের অচল জীবনকে সচল করতে। সেই নৌকাই এখন ত্রাণসামগ্রী হিসাবে মিলছে, টাঙ্গাইলের গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায়।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
যমুনা বিধৌত এ দুই উপজেলার মানুষ বহুদিন পর এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যা প্রত্যক্ষ করছেন। পানি বাড়ছে তো বাড়ছেই। খালবিল, নদীনালা পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামার কোন সম্ভাবনা নেই। পানিতে ভাসছে কোন কোন ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো গ্রাম। দাঁড়ানোর মত এক চিলতে শুকনো ভূখন্ডও অবশিষ্ট নেই কোথাও। বন্যার পানিতে সয়লাব হাটবাজার দোকানপাট। আর এসবের মধ্যেই বিতরণ চলছে সরকারের দেয়া অপ্রতুল ত্রাণ। ত্রাণের চালডাল তেলনুনের পাশাপাশি মানুষ এখন পরিত্রাণ চাচ্ছে পানির বন্দীদশা থেকে।
টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের এমপি ছোট মনির বন্যাকবলিত এলাকার পানিবন্দী মানুষের মধ্যে তাই এখন বিতরণ করে যাচ্ছেন নৌকা। এ পর্যন্ত দুই উপজেলায় তিনি প্রায় দুই শতাধিক নৌকা বিতরণ করেছেন। আরো তিন শতাধিক নৌকা বানানো হচ্ছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে প্রত্যেক গ্রামে নৌকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
এমপি ছোট মনির জানান, করোনাকাল তিনি তার নির্বাচনী এলাকা গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। চলতি বন্যাকালেও তিনি বসে নেই। প্রতিদিনই খোঁজখবর নিচ্ছেন পানিবন্দী মানুষের। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সাধ্যমত বিতরণ করছেন ত্রাণসামগ্রী।
ত্রাণ বিতরণকালে তিনি প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন, পানিবন্দী মানুষের দুর্দশা শুধু খাবারদাবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় মানুষের বাজারসদাই, ওষুধপত্র ও গৃহস্থালি সামগ্রী কেনা বা সংগ্রহ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই পানিবন্দী মানুষের জীবনযাত্রাকে সচল রাখার জন্য তিনি দুর্গম গ্রামাঞ্চলে নৌকা বিতরণ করছেন।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মীর রেজাউল হক জানান, করোনাকালে এমপি ছোট মনির ত্রাণসামগ্রী ও চিকিৎসা সহযোগিতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বন্যার সময়ও তিনি মাঠ ময়দানে রয়েছেন। ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ এবার তিনি নতুন একটি বিষয় বাছাই করেছেন। আর তা হলো নৌকা। নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগের প্রতীক। নৌকা শেখ হাসিনার প্রতীক। এ আসনে নৌকা ছয়বার বিজয়ী হয়েছে। নির্বাচনের সময় দলের স্লোগান ছিলো “নৌকা যাবে ভাসিয়া, ভোট দিবেন হাসিয়া”। বন্যায় মানুষের মুখ হাঁসি ফোঁটানোর জন্য তিনি নৌকা উপহার দিচ্ছেন। মানুষ তাতে আনন্দে ভেসে বেড়াচ্ছে।
আলমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কৃষকলীগ নেতা অধ্যাপক আব্দুল মোমন জানান, তার ইউনিয়নে বহু মানুষ পানিবন্দী। বাড়ি থেকে বের হবার কোন উপায় নেই। খাওয়াপড়া ছাড়াও মানুষের অনেক প্রয়োজন থাকে যা ছাড়া জীবন অচল। কিন্তু বাড়ি থেকে বের হওয়ার মাধ্যম না থাকায় তারা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অনেকের বাজারঘাট, ছোটখাটো কেনাকাটা ও চিকিৎসা গ্রহণ বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত এসব গ্রামে এমপি ত্রাণ হিসাবে নৌকা দেয়ায় মানুষের যোগাযোগের সমস্যা দূর হয়েছে।
বয়ড়া গ্রামের আব্দুর রশীদ জানান, টানা দশ দিন পানিবন্দী থাকার পর গত রবিবার গ্রামবাসি একখানে এমপির দেয়া নৌকা পেয়েছেন। সেই নৌকায় চড়ে আজ সোমবার হাটে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছেন। কেউ অসুস্থ হলে নৌকা করে হাসপাতালে যাচ্ছেন। নৌকা পেয়ে গ্রামবাসিরা এখন বেজায় খুশি।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।