অর্থবছর শুরুর প্রথম নয়দিনেই ৭৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স

S M Ashraful Azom
0
অর্থবছর শুরুর প্রথম নয়দিনেই ৭৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স

সেবা ডেস্ক: প্রাণঘাতি ভাইরাস মহামারীকালে নতুন অর্থবছরের শুরুতেও প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের নয়দিনেই ৭৫ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে এতো কম দিনে এতো বেশি রেমিটেন্স কখনই আসেনি।

অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। জুনের মতো কোরবানির ঈদের আগে জুলাই মাসেও ভালো রেমিটেন্সের আশা করলেও পরের মাসগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্সের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের নয়দিনে (১-৯ জুলাই) ৭৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।এরমধ্যে ১ জুলাই ছিল ব্যাংক হলিডে। ওইদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কোনো রেমিটেন্স জমা হয়নি। পরের দিন ২ জুলাই একদিনেই ১১ কোটি ৯২ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে। আর পরের সপ্তাহে (৫-৯ জুলাই) ৬২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন রেমিটেন্স এসেছিল।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল, যা ছিল এক মাসের হিসাবে অতীতের যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি। গত ২ জুলাই করোনাভাইরাস মহামারীকালে একদিনে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দুটি সূচকে রেকর্ড হয়।

ওই দিন প্রথম দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। একই দিনে এক মাসে ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলারের রেকর্ড রেমিটেন্সের খবরও আসে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি। আর এক মাসে এত বেশি রেমিটেন্সও কখনও আসেনি। এর আগে এক মাসে ১৭৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল ২০১৯ সালের মে মাসে রোজার ঈদকে সামনে রেখে।

জুন মাসে রেমিটেন্সের উল্লম্ফনের কারণে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। ২ জুলাই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে প্রথমবারের মতো ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ৩৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে উঠ।

তবে ৭ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মাসের ৭২ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। রোববার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেমিটেন্সের পাশাপাশি কোভিড-১৯ মেকাবেলায় বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও এআইআইবির ঋণ সহায়তা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

“এখন পর্যন্ত অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই সূচক রেমিটেন্স ও রিজার্ভ ভালোই আছে। তবে সামনের মাসগুলোতে কি হবে সেটাই চিন্তার বিষয়।”

তিনি বলেন, “কোরবানির পর অগাস্ট মাস থেকেই রেমিটেন্স কমে যাবে। এই মহামারীকালে পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনে সর্বশেষ জমানো টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। অনেকে আবার দেশে ফিরে আসার চিন্তাভাবনা করছে; তাই যা কিছু আছে সব আগেই দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ সব কারণেই রেমিটেন্স বাড়ছে।

“বিদেশে অনেকেরই এখন কাজ নেই। একটি অংশ যদি দেশে চলে আসে তাহলে ভবিষ্যতে রেমিটেন্স আসবে কোত্থেকে,” প্রশ্ন রাখেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় রেমিটেন্সও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বগতির ধারা চলছে। রেমিটেন্সের গতি ধরে রাখতে গত অর্থবছরে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। নতুন অর্থবছরেও সেটা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

মহামারীর কারণে কোনো দেশের অর্থনীতিই স্বস্তিতে নেই। সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মী যে অঞ্চলে রয়েছে, তেলের দামের নিম্নগতিতে সেখানেও চাকরিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top