রেমিট্যান্সের জোয়ারে দেশের রিজার্ভে রেকর্ড

S M Ashraful Azom
0
রেমিট্যান্সের জোয়ারে দেশের রিজার্ভে রেকর্ড


সেবা ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) সংকটের মধ্যে অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচকে খারাপ অবস্থা থাকলেও ব্যাংকিং চ্যানেলে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেকর্ড ২৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। গত আগস্টে এসেছে ১৯৬ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্সের এই জোয়ারে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে অনেক প্রবাসী বেকার হয়েছেন। আয় কমেছে অনেকের। এর মধ্যেও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ হুন্ডির চাহিদা একেবারে কমে যাওয়া। মূলত বিশ্বের অনেক দেশে বিনিয়োগ চাহিদা কমে যাওয়ায় হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীদের ডলার কেনাবেচা কমে গেছে। আবার রেমিট্যান্সে সরকারের ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার কারণে গ্রাহকরা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। এর বাইরে এক শ্রেণির প্রবাসী জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়ের বেশিরভাগই আসছে ব্যাংকিং চ্যানেলে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এযাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড হয় গত জুলাই মাসে। ওই মাসে প্রবাসীরা ২৬০ কোটি ডলার দেশে পাঠান। এই দুই মাসে মোট ৪৫৬ কোটি ডলার দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৩০৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে দুই মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৫২ কোটি ডলার বা ৫০ শতাংশ। গত জুন মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১৮৩ কোটি ডলার।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে গতকাল দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার বা তিন হাজার ৯৪৫ কোটি ডলার। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে প্রায় ৯ মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। এর আগে গত ১৮ আগস্ট রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর গত মার্চ শেষে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বেড়ে এখন এ পর্যায়ে এসেছে। ইতোমধ্যে রিজার্ভ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রেমিট্যান্স এবং করোনার কারণে ঋণ ও অনুদানের কারণে রিজার্ভ বাড়ছে। তবে রিজার্ভ বৃদ্ধি সব সময় যে ভালো, তা নয়। করোনার এ সময়ে বাড়ছে। এখন দেখতে হবে কীভাবে সেটা কাজে লাগানো যায়। তবে কতদিন রেমিট্যান্সের এ ধারা থাকবে তা বলা যাচ্ছে না। এখন হয়তো হুন্ডির চাহিদা কমে যাওয়া, বিদেশি অনেক পরিশোধ বিলম্বিত করা এবং ২ শতাংশ প্রণোদনার কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী করোনা সংকটের মধ্যে আমদানি-রপ্তানিসহ অধিকাংশ সূচকের অবস্থার অবনতি হয়েছে। গত অর্থবছর আমদানি ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি কমেছে ১৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অবশ্য নতুন অর্থবছরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে। আমদানি ও রপ্তানির দুরবস্থা থাকলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। একক অর্থবছরে এত পরিমাণ অর্থ আগে কখনও আসেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ১৭৯ কোটি ডলার বা ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। যদিও করোনাভাইরাস শুরুর দিকে একক মাস হিসেবে গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স কমেছিল।

সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, অনেক প্রবাসী এক ধরনের অনিশ্চয়তার কারণে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। করোনা-পরবর্তীকালে সেখানে থাকতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনেকে দুশ্চিন্তায় আছেন। আবার ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার কারণে আগে ব্যাংকে যেতেন না এমন অনেকেই এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন।

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top