করোনা ভাইরাস ও বন্যায় প্রাথমিকে ক্ষতি, সরকারের নানা পরিকল্পনা

S M Ashraful Azom
0
করোনা ভাইরাস ও বন্যায় প্রাথমিকে ক্ষতি, সরকারের নানা পরিকল্পনা


সেবা ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে গেল মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে প্রাথমিকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পড়ে গেছে একেবারেই জনশূন্য পরিস্থিতিতে। আবার বন্যা পরিস্থিতিতে ৩৩টিরও বেশি জেলা তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের ভবনগুলোতে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। এই দুই ধাক্কায় টালমাটাল দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা। এ থেকে উত্তরণে নানা পরিকল্পনায় এগোচ্ছে সরকার।
এবারের দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় ৩ হাজার ৯১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে অনেক বিদ্যালয় নদীগর্ভে পুরোপুরি ভাবে বিলীন হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বন্যার সময় বিদ্যালয়গুলো নজরদারি করতে না পারায় অনেক বিদ্যালয় থেকে চুরি হয়ে গেছে মূল্যবান আসবাবসহ জরুরি নথিপত্রও।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বলছে, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৪৬০টি বিদ্যালয়, রাজশাহীতে ৭৬১টি, সিলেটে ৫৮২টি, রংপুরে ৬৬৪টি, ময়মনসিংহে ৩৮৮টি, চট্টগ্রামে ৫২টি, বরিশালে ৫টি এবং খুলনায় ১টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগের ২১টি বিদ্যালয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশি ক্ষতির তালিকায় আছে ঢাকা বিভাগের ১৩টি, রাজশাহীর ১৩টি, ময়মনসিংহের ৩টি, চট্টগ্রামের ৪টি, সিলেটের ৪টি এবং বরিশাল বিভাগের একটি বিদ্যালয়। তবে শরৎ কালের এই অকাল বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে না।


অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন, আমরা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। এটি নিয়ে সরকারের রাজস্ব বিভাগের সঙ্গেও কথা হয়েছে। প্রকৃত তথ্য নিরূপণ করা গেলে এসব বিদ্যালয় সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।

বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মোট ৬৫ হাজার ৬২০টি। আর এই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকে হিসেবে ধরলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৬ লাখ। মহামারির কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে এসব শিক্ষার্থীরা সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষায় এই ধাক্কা সামলাতে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স (সিএসএসআর) শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট ১২৮ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই) প্রকল্প সাহায্য হিসেবে দেবে ১২৬ কোটি ৫৩ লাখ। আর সরকারের ব্যয় হবে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে করোনায় প্রাথমিক শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার পাশাপাশি স্কুলগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব করা হবে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে ভর্তি ও লেখাপড়ার ক্ষতিপূরণে সহায়তা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা দেয়া, বর্তমান ও ভবিষ্যত সংকট মোকাবিলার জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থার প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিসহ দূরশিক্ষণ কার্যক্রমকে একীভূত করার বিষয় থাকবে। বিদ্যালয় খোলার পর ২০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হবে। আর পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে একটি বিশেষ স্কিম।

এছাড়া প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয়ের ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করা ও ডিজিটাল কন্টেন্ট ডাউনলোড করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে প্রদর্শন করা হবে। প্রত্যন্ত এলাকার ১ লাখ ৫০ হাজার শিশুকে শিক্ষা উপকরণ দেয়া হবে। ২ লাখ শিক্ষককে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়াও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে উদ্যোগ নেয়া হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, করোনার ধাক্কা সারা পৃথিবীতেই লেগেছে। এর মধ্যে বন্যার কারণে আমাদের একটু বেশি ভুগতে হচ্ছে। আমরাও এসব ধাক্কা শক্ত হাতে মোকাবিলার চেষ্টা করছি। করোনার পর বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top