আওয়ামীলীগ প্রার্থী তানভীর শাকিল জয় ও বিএনপি প্রার্থী সেলিম রেজা |
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: মাইজবাড়ি ইউনিয়নের বিলচতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। মোট ভোটার ১হাজার ৩২০জন। পুরো কেন্দ্রের আশপাশে আ.লীগ প্রার্থীর পোস্টার আর ব্যানার। সেখানে একটিও বিএনপি প্রার্থীর কোন পোস্টার চোখে পড়েনি। এই এলাকার ভোটার ও ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানান, ‘ শুনেছি বিএনপির একজন ভোটের প্রার্থী হয়েছে। কিন্তু আমরা তাকে ভোটের প্রচারণার মাঠে দেখিনি, কোন মাইকিংও শুনিনি। কেন্দ্রের নাম সোনামুখী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। মোট ভোটার ২ হাজার ৮৭২ জন। কেন্দ্রের চারপাশ নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। একটিও ধানের শীষের পোস্টার নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এখানকার স্থানীয় এক বিএনপি নেতা জানান, ‘ আমাদের প্রার্থী হাই কমান্ডের দুলু সাহেবকে নিয়ে সিরাজগঞ্জ সদরের পাঁচ ইউনিয়নে কয়েকটি জায়গায় গিয়েছেন। কাজিপুরের মানুষ তাকে গত ৩ নভেম্বর একঝলক দুইটি বাজারে দেখেছিলো। ওইটুকুই শেষ।’ ১২ নভেম্বর( বৃহস্পতিবার) এই আসনের উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জাতীয় সংসদের ৬২ সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি সিরাজগঞ্জ সদরের পাঁচ ইউনিয়ন ও কাজিপুরের ১২ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এই আসনের লক্ষাধিক ভোটারের বাস যমুনার চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নে। এই ভোটারদের মাঝে আ.লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মিরা দিনরাত কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আব্দুর রহিম মাস্টার। কিন্তু পুরো চরাঞ্চলে একদিনের জন্যেও দেখা মেলেনি বিএনপি প্রার্থী সেলিম রেজাকে।
গত দুইদিন কাজিপুরের অধিকাংশ হাট বাজার এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঘুরে দেখা যাযনি ধানের শীষের কোন পোস্টার। বিএনপি প্রার্থী সেলিম রেজা মুঠোফোনে জানান, ‘ আমাদের প্রচারনায় আ.লীগ বাধা দিয়েছে। বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসিকে জানিয়েছি। এছাড়া আমরা কেন্ত্রিয় নেতাদের সাথে নিয়ে প্রচার চালিয়েছি। এলাকায় ঢুকতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে আ.লীগ বলে তিনি জানান। অভিযোগ অস্বীকার করে কাজিপুর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শওকত হোসেন জানান, ‘ উনাদের কাজিপুরে কোন অবদান নেই। জনগণই উনাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আ.লীগ বা আমাদের অঙ্গ সংগঠনের কেউই তাকে বাধা দেয়নি।’
অন্যদিকে আ.লীগ প্রার্থী তানভীর শাকিল জয় নিজে মাঠে থেকে নেতাকর্মিদের নির্দেশনা দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মিদের বিভিন্ন দলে উপদলে ভাগ করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দের দুইদিন পরেই দলটি প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে নির্বাচনী কমিটি গঠন করেছে। তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চেয়েছেন। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতা কাজিপুরে এসেছেন নৌকার ভোট চাইতে। স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী জনসভায় নৌকার প্রার্থী জয় এর পক্ষে জনগণের নিকট জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের নানা তথ্য তুলে ধরে এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দেবার আহবান জানিয়েছেন। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা ব্যানারে নৌকার ভোট চেয়ে প্রচারণা চালিয়েছে। বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ ট্রাকে করে নির্বাচনী গান গেয়ে নৌকার পক্ষ্যে প্রচারণা চালিয়েছে। দেশের নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কাজিপুরের পেশাজীবী, কর্মজীবীগণও কয়েকদিন পূর্বে বাড়ি এসে নেমেছিলেন নৌকার পক্ষ্যে নির্বাচনী প্রচারণায়।
মোট কথা গত ২৩ অক্টোবরের পর থেকে প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত এই আসনের নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মিদের মধ্যে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করেছে। এদিকে দিনে ৮ থেকে ১০ টি পর্যন্ত পথসভা করেছেন নৌকার প্রার্থী তানভির শাকিল জয়। এসব সভায় তিনি একদিকে যেমন ভোট চেয়েছেন, অন্যদিকে দলীয় নেতাকর্মিদের দিয়েছেন কঠোর হুশিয়ারী। গত ৩ নভেম্বর কাজিপুর উপজেলা দলীয় কার্যালয়ে জেলহত্যা দিবসের আলোচনায় তিনি দলীয় নেতাকর্মিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ আপনারা যে এলাকায় বেশি ভোট দেবেন সেখানে উন্নয়ন হবে, যেখানে ভোট পাবো কম সেখানে উন্নয়নও হবে কম।’ তিনি আরও বলেন.‘ আমার দাদা, পিতা এবং আমিও আপনাদের অনেক দিয়েছি। এবার ভোট দিয়ে তা শোধ করার দায়িত্ব আপনাদের। ’
এই হুশিয়ারী উচ্চারণের কারণ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে নানা তথ্য। স্বাধীনতা পরবর্তী নৌকার ঘাঁটি কাজিপুরে আ.লীগ নির্বাচন করলে অন্য প্রার্থীর বারবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এরপরেও অতীতে অন্যদলের কিছু প্রচারণা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে এবং এবারের উপ নির্বাচনে অন্যদলের তেমন প্রচারণা ভোটারগণ দেখেনি। এরফলে যারা আ’লীগের ভোটার বা সমর্থক তারাও এবার ধরেই নিয়েছে নৌকারই জয় হবে। অতএব ভোট দিতে না গেলেও কিছু হবে না। এই ধারণা সাধারণ ভোটারদের মাঝে অনেকটাই লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া ইভিএমএ ভোট হবে। এটাও অনেক ভোটার জানেনা। তাদের মধ্যে এক অজানা ভীতি কাজ করছে। এসব বিষয় আঁচ করতে পেরেই আ.লীগ প্রার্থী জয় নেতাকর্মিদের এমন হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। আবার স্থানীয় নেতাকর্মিদের সাথে দ্ব›দ্ব, দল পরিচালনায় কোনো কোনো নেতার বেশি কর্তৃত্ব দেখানো, প্রবীণদের গুরুত্ব কম দেয়াসহ বেশকিছু কারণেই নৌকায় ভোট দেয়া ভোটারদের অনেকেই কেন্দ্রে যেতে অনীহার কথা জানিয়েছেন। তারপরেও শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত নিজে মাঠে থেকে দল পরিচালনা ও ভোটের দাওয়াত ভোটারদের নিকট দিয়েছেন প্রার্থী তানভির শাকিল জয়। এছাড়া সদ্যপ্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাসিমের স্মৃতি কাজিপুরের মানুষকে এখনো আবেগতাড়িত করে। তারপুত্র ভোটের মাঠে রয়েছে এসব বিবেচনা করে ভোটের সাড়া অনেক বেশি মিলবে বলে জানান উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী। তিনি বলেন, ‘ আমরা নেতাকর্মিরা এবং প্রার্থী জয় সাহেব যে পরিমাণ ওয়ার্ক করেছি তাতে করে সর্বোচ্চ ভোট আমরা নৌকায় আশা করছি। দেশের যেকোন ইভিএমএ হওয়া ভোটের চেয়ে আমাদের পারসেন্টেজ অনেক বেশি থাকবে ইনশা আল্লাহ।’ দলের মধ্যে সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ কাজিপুরের মানুষ ঠিকই মনসুর-নাসিম পরিবারের প্রতি দুর্বল। আর তাই তাদের সিলটি কাজিপুরের মানুষের উন্নয়নের মার্কা নৌকাতেই যায়।
উল্লেখ্য গত ১৩ জুন কাজিপুর আসনের এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রি, ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে এই আসনটি শুন্য হয়। উপ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে পিতার এই আসনে লড়ছেন নাসিমপুত্র তানভির শাকিল জয়। বিএনপির প্রার্থী কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা।
এই আসনে এবার মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭৬৪ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ১৪৯ পুরুষ রয়েছেন ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৬১৫ জন। মোট ১৭১ টি ভোটকেন্দ্র এবং ভোটকক্ষ রয়েছে ৯৫৬টি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।