আবদুল জলিল. কাজিপুর: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কাজিপুর উপজেলায় ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার বরইতলার সংঘটিত যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। স্থানীয় রাজাকারদের নিকট থেকে সংবাদ পেয়ে হানাদার বাহিনী পুরো বরইতলা গ্রাম ঘিরে ফেলে। এদিকে তার আগের দিনই মুক্তিবাহিনী ওই গ্রাম থেকে বের হয়ে অন্য অপারেশনে যান। পাক বাহিনী ঢোকার খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনীরা স্থানীয় কমান্ডার প্রয়াত লুৎফর রহমান (দুদু) ও আব্দুস সাত্তারের যৌথ নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ যুদ্ধের প্রথমেই হানাদার বাহিনীর ৩ সদস্য আহত হলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাপক গুলিবর্ষণ শুরু করে। বরইতলা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। রাজাকারদের মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে পাক বাহিনী জ্বালিয়ে দেয় সমস্ত গ্রাম, চালায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। মুক্তিযোদ্ধাসহ নিরীহ সাধারণ মানুষকে তারা হত্যা করে। গ্রামের মসজিদে রমযান মাস উপলক্ষে ইত্তেকাফরত ৩০ জন মুসল্লীকে তারা পিঠমোড়া করে বেঁধে ফেলে। নির্যাতন চালানোর এক পর্যায়ে তাদের গ্রামের উত্তর পার্শ্বে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এর মধ্যে আজও আহত অবস্থায় বেঁচে আছেন বরইতলা গ্রামের আফছার আলী। পাক সেনারা তার এসময় তার আপন ভাই শামসুল হক ও ভাতিজা আব্দুল কুদ্দুসকে হত্যা করে। গুলি আফসার আলীর গলার কিয়দংশ ও চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। বুলেটবিদ্ধ মুখাকৃতি আজও ৭১’র ভয়াল সেই দিনটির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
এদিকে মুসুল্লিদের হত্যার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে পাশ্ববর্তী উদগাড়ী, কাচিহারা, মিরারপাড়া, মাথাইলচাপড়, আলমপুর, দুবলাই, গান্ধাইল, বাঐখোলা গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এসে পাক হানাদারদের প্রবল বাঁধার সৃষ্টি করে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঐদিন ভোররাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবিরাম যুদ্ধ চলে। এসময় তারা বরইতলা ও খামারপাড়া গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। রবইতলা থেকে খামারপাড়া যাবার পথে তারা চানমিয়া নামের গান্ধাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষ্ষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করে। হানাদারদের আক্রমণে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, সুজাবত ও রবিলাল দাস এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে সিরাজুল, আব্দুর রহমান, জবান আলী, আব্দুল হাকিম, গোলজার হোসেন, পন্ডিতা, মামুদ আলী ও তেছের আলী সহ ১০৪ জন নিহত হয়। হানাদার বাহিনীর ৬ সেনা এবং বাবু নামে এক স্থানীয় রাজাকার নিহত হয়।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।