“বিজিবিকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন করে গড়ে তোলা হবে”

S M Ashraful Azom
0
“বিজিবিকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন করে গড়ে তোলা হবে”


সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান ও নারী-শিশু পাচার বন্ধে বিজিবিকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন করে গড়ে তুলবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক যুগে আমরা প্রবেশ করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। কাজেই, আমাদের বর্ডার গার্ড সেভাবে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হবে।

প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৯৫তম ব্যাচ রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। 

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ, সাতকানিয়া, চট্টগ্রামের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। -বাসস

শেখ হাসিনা বিজিবি’র ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের সব সদস্যকে সফলভাবে তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করায় অভিনন্দন জানিয়ে শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। তিনি নবীন সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজও উপভোগ করেন। বিজিবির নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত কুচকাওয়াজের প্রশংসা করে তাদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের নিদর্শন তুলে ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট সব প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। 

কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপদেশ ও দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তিনি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর বিশেষ করে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ এবং মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ বাহিনীর আট জন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম ও ৭৭ জন বীরপ্রতীককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর এই বাহিনীর ৩য় রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃত করেন।

জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আজ আপনাদের কাছে আমি অনেক বড় কর্তব্য দিয়েছি, অনেক বড় কাজ দিয়েছি। এ কাজ হলো চোরাচালানী বন্ধ করা। তোমাদের কাছে আমার হুকুম, স্মাগলিং বন্ধ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তোমরা পারবা। এ বিশ্বাস তোমাদের উপর আমার আছে। আশা করি, তোমরা স্মরণ রাখবা। মনে রাখতে হবে, স্মাগলারের কোনো জাত নাই, ধর্ম নাই, তারা মানুষ নামের নর পশু। তারা এদেশের সম্পদকে বিদেশে চালান দেয় সামান্য অর্থের লোভে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বক্তব্যে জাতির পিতার যে নির্দেশনা রয়েছে, আমি আশা করি, আপনারা তা মেনে চলবেন। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি এই অপকর্মগুলো রোধ করতে আপনারা আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। কারণ, এই কথাগুলো এখনও প্রাসঙ্গিক।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও জাতির প্রতি সেবার মনোভাব নিয়ে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। দেশকে ভালবাসতে হবে, মানুষকে ভালবাসতে হবে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে এবং মনে রাখতে হবে এই দেশ অর্থনৈতিকভাবে যত উন্নত হবে আপনাদের পরিবারগুলোও উন্নত হবে।

তিনি বলেন, বিজিবিকে আরো শক্তিশালী করা এবং সীমান্তের প্রতিটি জায়গায় যেন তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয় সে ব্যবস্থা নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘বর্ডার গার্ড ভিশন-২০৪১’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ তার সরকার এখন বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছে।

তিনি বলেন, বাহিনীতে হেলিকপ্টারের সঙ্গে নদীমাতৃক এই দেশের সীমান্ত প্রহরায় নৌযান সংযুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে জলে, স্থলে এবং আকাশ পথে- সর্বত্রই বিজিবি’র এখন বিচরণ রয়েছে।

তার সরকারই বিজিবিতে প্রথম নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী সদস্য আমরা নিতে শুরু করেছি। পাশাপাশি আধুনিক সরঞ্জামাদি যা যা প্রয়োজন তার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।

তিনি বলেন, স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করার মাধ্যমে বিজিবি’র উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পাশাপাশি, বিজিবি সদস্য ও পরিবারবর্গের চিকিৎসা সেবায় বিজিবি’র ৫টি হাসপাতালকে আরো উন্নত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম, বিজিবিএম (বার), এনডিসি, পিএসসি স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মহান দায়িত্ব পালনে পুরুষ সৈনিকদের পাশাপাশি নবীন নারী সৈনিকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার উপদেশ দেন। কুচকাওয়াজের প্যারেড কমান্ডার হিসেবে মনোজ্ঞ এই প্যারেড পরিচালনা করেন ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের অফিসার ইনচার্জ মেজর কাজী মনজুরুল ইসলাম এবং প্যারেড অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক বেগ আব্দুল্লাহ আল মাসুম।

এ সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা, সেনাবাহিনী ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত থেকে এ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে প্রশিক্ষণ নেয়া মোট ৭৯১ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫৯০ জন পুরুষ ও ২০১ জন নারী।

শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top