শফিকুল ইসলাম: কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বাল্যবিবাহ দিনদিন বেড়েই চলছে। সংসার ভাঙ্গছে অনেক মেয়ের। নিকাহ্ রেজিষ্ট্রির নকল না পাওয়ায় আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না ভুক্তভোগী পরিবার। বাড়ছে ভুয়া কাজির দৌরাত্ব, প্রশাসন নিরব।
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার রৌমারী সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অল্প বয়সী ছেলে এবং মেয়েদের বেশি বয়স দেখিয়ে অর্থের বিনিময় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিবন্ধন সনদপত্র নিচ্ছে। আবার ছেলে মেয়ে উভয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিবন্ধন সনদপত্র নিয়ে ১২/১৩ বছর বয়সে ওই নিবন্ধন সনদপত্রটি স্থানীয় কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে স্ক্যান করে বয়স মেয়েদের ১৮ ও ছেলেদের ২২ বছর করা হচ্ছে। এসব নিবন্ধন সনদপত্র নিয়ে ভুয়া কাজির মাধ্যমে বাল্যবিবাহ দেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার নিতিমালা অনুযায়ী আলহাজ্ব সাইফুল ইসলাম নিয়োগ পায়। সাইফুল কাজিকে বিবাহ রেজিষ্ট্রারির জন্য ডেকে নিয়ে গেলে তিনি ছেলে বা মেয়ের জন্ম সনদপত্র ও বয়স প্রমাণ করেন। এতে কারো বয়স ১৮/২২ বছরের কম হলে সে ওই বিবাহের রেজিষ্ট্রার বন্ধ রাখেন। এই সুযোগে ওই পরিবারে লোকজন সাখওয়াত হোসেন লিপন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র ছাড়াই বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করেন।
সাখওয়াত হোসেন লিপন কাজি সেজে এলাকায় প্রতারনা করে আসছে প্রায় ৩ বছর ধরে। গতকাল শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে উপজেলার রৌমারী সদর ইউনিয়নের চাক্তাবাড়ি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসরত হেলাজ উদ্দিনের মেয়ে রুপসী (১৩) নামের এক মেয়ের রেজিষ্ট্রিবিহিন বিবাহ সম্পন্ন করেন সাখওয়াত হোসেন লিপন।
তিনি মেয়ে পক্ষের বাড়িতে গিয়ে ছেলে ও মেয়ের নাম ঠিকানা তার ডাইরি খাতায় লেখে নেন এবং ধর্মীয় অনুযায়ী গ্রামের ইমামকে বিবাহ পড়ানোর অনুমতি দিয়ে দ্রæত কেটে পড়েন। পরে ওই পরিবারের লোকজনকে তার বাসায় আসতে বলেন। এভাবে প্রায় শতাধীক ব্যাল্যবিবাহ সম্পন্ন করেন। এর আগে কয়েকটি বাল্য বিবাহের বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রতারনার শিকার উপজেলার বাঘমারা গ্রামের আব্দুল বাতেন নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ১৪ মে ২০২০ ইং তারিখে ভুয়া কাজি সাখওয়াত হোসেন লিপনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রৌমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যা তদন্তধীনে রয়েছে।
অপর দিকে নিয়োগ প্রাপ্ত কাজি আলহাজ্ব সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে সাখওয়াত হোসেন লিপনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, আমার পরিষদ থেকে বয়স প্রমাণ করে নিবন্ধন দেওয়া হয়। কাজি হিসেবে সাইফুল ইসলাম নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। অন্য কেউ বিবাহ রেজিষ্ট্রি করলে তা ঠিক হবে না। এজন্য উপজেলা প্রশাসনকে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান জানান, বিষযটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাব-রেজিষ্ট্রারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।