রফিকুল আলম,ধুনট (বগুড়া): সরকারি নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় আমজাদ হোসেন নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা দুই উপজেলা থেকে সম্মানি ভাতাসহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। এই দু’টি উপজেলা হলো বগুড়ার ধুনট ও সিরাজগঞ্জের কাজিপুর। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তবে তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দু’টি।
সরকার ভাতাভোগী সব বীর মুক্তিযোদ্ধার পূর্ণাঙ্গ তথ্য ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) নামে একটি সফটওয়্যারে যুক্ত করেছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য এবং সরকার অনুমোদিত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই করেই ভাতাপ্রাপ্ত সব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম এমআইএসে তোলা হয়েছে গত অক্টোবরে। জাতীয় পরিচয়পত্রকে বিবেচনায় রেখে অনলাইনে তথ্যভান্ডার করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের তথ্যে অসংগতির বিষয়টি ধরা পড়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন জন্মসূত্রে ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের সাতটিকরী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম রিয়াজ উদ্দিন। সাতটিকরী গ্রামে পৈত্রিক বাড়িতে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। এরপর নিজের নাম ও বাবার নাম ঠিক রেখে তিনি সিরাগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মুনসুরনগর ইউনিয়নের মাজনাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হয়েছেন। তবে সেখানে তার বাড়িঘর কিংবা স্থাবর অস্থাবর কোন সম্পত্তি নেই।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ১২ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। এর আগে ছিল ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, ৫ হাজার টাকা বিজয় দিবসের ভাতা এবং ২ হাজার টাকা বাংলা নববর্ষ ভাতা পান বীর মুক্তিযোদ্ধা। বছরে একজন সব মিলিয়ে ভাতা পান ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের কাজিপুর উপজেলায় লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ০৩১২০৬০০৭৬। সোনালী ব্যাংক কাজিপুর উপজেলা শাখায় তিনি ২০১১ সালের ৬ জুন হিসাব খুলেছেন (হিসাব নম্বর ৪২০৭৭৩৪০৯৫০৪১)। ওই হিসাব নম্বর থেকে তিনি মাসিক সম্মানি ভাতা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া একই নামে ধুনট উপজেলায় তার লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ০৩০৬০৭০০৬৪। সোনালী ব্যাংক ধুনট উপজেলা শাখায় তিনি ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর হিসাব খুলেছেন (হিসাব নম্বর ০৬১০১০০১৬৭২৪১)। ওই হিসাব নম্বর থেকেও তিনি মাসিক সম্মানি ভাতা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার টাকা উত্তোলন করেছেন। তিনি দুই উপজেলা থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভাতা উত্তোলন করেছেন।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন জানান, একাত্তুরে ধুনট ও কাজিপুর উপজেলায় যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। এ কারণে দুই উপজেলাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেব নাম অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। তবে দুই উপজেলা থেকে সম্মানি ভাতা উত্তোলনের করা আমার ভুল হয়েছে। এই ভূলের ক্ষমা চেয়ে এবং অতিরিক্ত উত্তোলনকৃত টাকা ফেরত প্রদানের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছি।
কাজিপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলা উদ্দিন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের এমআইএস করা হয়েছে। তবে দুই উপজেলা থেকে ভাতা উত্তোলন করায় তার ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে মূক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে পত্র পাঠানো হবে। সেখানকার সিন্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ধুনট উপজেলা কমান্ডের প্রশাসক ও ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের এমআইএস করা সম্ভব হয়নি। তবে তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত করে মন্ত্রনালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।