শফিকুল ইসলাম : কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় কয়েক বারের ভয়াবহ বন্যায় রাস্তাঘাট,নদনদী, খাল, বিল, সমতলজমিনসহ বিভিন্ন জায়গা ভাঙ্গনের ফলে জমিতে ধু-ধু বালুর চরে ব্যাপক হারে বাদাম চাষ করেছে কৃষক। বাম্পার ফলনের আশায় কৃষক রৌমারী’র পশ্চিমাঞ্চলীয় ব্রহ্মপুত্রসহ উপজেলার চারপাশের গ্রাম গুলোতে যেন বাদামের সবুজ শ্যামলে ঘেরা মাঠ। বন্যার খেয়াল খুশিমত প্রতি বছরের ভাঙ্গনের তান্ডবে কখনো বালুচর কখনো নদের তলদেশে পরিণত হয়। আর তাতে করে ফসলি জমি ও বসতভিটা হারা হয় অনেক অসহায় পরিবার। এ অঞ্চলের মানুষ গুলো জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ফসলের প্রকারভেদ অনুযায়ী সাদা ধবধবে বালুর বুকচিড়ে বাদাম চাষ করে। এখানকার মানুষ চেয়ে থাকে চর জেগে উঠার অপেক্ষায়। চরের মানুষ চেয়ে থাকে পানি শুকিয়ে বুকচিড়ে জেগে উঠা ভুমিতে বাদম চাষ করার জন্য। তবে ৩ মাস পড়েই আবার বন্যা, বৃষ্টির পানিতে পরিণত হবে বন্যা, তাই তারা বাদাম চাষ বেছে নেয়।
রৌমারী উপজেলার উত্তরে গাছবাড়ি, ইটালুকান্দা, চরকাউনিয়ারচর, সাহেবের আলগা, চরকাজাইকাটা, পশ্চিমে ফলুয়ারচর, পালেরচর, কান্দাপাড়া, খেরুয়ারচর, বড়চর, খেদাইমারী, ঘুঘুমারী, চরধনারচর, দিগলাপাড়া, চরপাখিউড়াসহ প্রায় ৩৫টি গ্রামের মানুষ বাদাম চাষ করে অভাব অনাটন থেকে কেটে উঠছে। শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
বাদাম চাষী নওশাদ আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বন্যার জন্য চাষাবাদ করাই যায় নায়। এবারের বন্যা নদ,নদীতে অনেক চর হইছে তাই মেলা বাদাম চাষ করছি। এভাবেই জমিতে ফসল করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে যুদ্ধ কইরা বাপ দাদার ভিটেমাটি জমিজিরাত আকরে ধইরা আছি। তবে আগের চাইতে বর্তমানে বাজারে বাদামের চাহিদা অনেক।
বাদাম চাষি সানোয়ার হোসেন জানান, আমরা প্রায় ৩৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ রবিশস্য হিসেবে বাদাম ও আষাড়ী ফসল হিসেবে চিনা ও কাউন চাষ করে সংসার চালাই। এবারের বন্যায় ব্যাপক হারে ভাঙ্গনের ফলে জমিতে বালি মাটি হওয়ায় অন্য কোন ফসল হয়না। তবে কিছু কিছু জায়গায় বেলে দু’আশ মাটি থাকায় গম ও বাদামের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি এবার বাদামের ন্যায দাম পাবো।
রৌমারী উপজেলা কৃষিস¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেন জানায়, এবছর রৌমারীতে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ভাঙ্গনের ফলে অনেক জমিতে বালুতে পরিণত হওয়ায় প্রায় ৫’শ ২৫ একর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। এমনকি এবছর বাদামের জমিতে পলিমাটি ও বালি মিশ্রিত থাকায় বাদামের বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন বলেন, এবারের ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় ব্রহ্মপুত্রনদসহ উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, খালবিল নদী নালা ভাঙ্গনের ফলে জমিতে বালু হওয়ায় বাদাম চাষ বেশী হয়েছে। রৌমারীতে কৃষি প্রনোদনা ও কৃষি পুর্নবাসন ১১’শ ৫০ জন কৃষকের মাঝে বিভিন্ন জাতের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এবারের কৃষক বাদাম চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভবনা দেখছেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।