রফিকুল আলম,ধুনট (বগুড়া): বগুড়ার ধুনট উপজেলায় সরকারি বিভিন্ন সুবিধা নিতে বাবার নামের জায়গায় বীরমুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরের নাম ব্যবহার করছেন এক গৃহবধূ। শুধু তাই নয়, তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তার পদ। তৈরী করেছেন জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম সনদ। হয়েছেন দ্বৈত ভোটার। অর্জন করেছেন এসএসসি ও এইচএসসি পাশের শিক্ষা সনদ। সম্প্রতি অনুসন্ধানে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
জানা গেছে, উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের শ্যামগাঁতী গ্রামের লিপি খাতুন। তার জন্মদাতা বাবার নাম মতিউর রহমান, মাতার নাম তারাবানু। দুই বোনের মধ্যে লিপি খাতুন বড়। ২০০৬ সালে একই গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালম আজাদের ছেলে সনেট সরকারকে বিয়ে করেন তিনি। তার শ্বাশুড়ির নাম ফরিদা খাতুন। বিয়ের পর ২০০৮ সালে লিপি খাতুন, বাবা মতিউর রহমান ও মা তারাবানু নাম দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করেন (নম্বর-১৯৮৪১০১২৭৮৫৬৮৪৫১২)।
পরবর্তীতে ভর্তি হন হাজি কাজেম-জোবেদা টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড বিএম কলেজের নবম শ্রেণীতে। ভর্তি খাতায় লিপি খাতুন নাম পরির্তন করে কাজল খাতুন, বাবার নাম বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ও মাতার নাম ফরিদা খাতুন লেখান। তিনি কাজল খাতুন নামে ২০১৮ সালে এসএসসি ও ২০২০ সালে এইচএসসি পাশ করেন। কর্মক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ব্যবহার করে সুবিধা পেতে শিক্ষা সনদ অনুযায়ী ২০১৭ সালে পুনরায় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে (নম্বর-১৯৯৭১০১২৭৮৫০০০৪৫৩) দ্বৈত ভোটার হয়েছেন।
তিনি ২০১৭সালে মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কাজল খাতুন নামে জন্ম সনদ (নম্বর-১৯৯৭১০১২৭৮৫১০৫৯৬৭) নিয়েছেন। বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়ে তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তার পদ। লিপি খাতুনের ছোট বোন রিতা খাতুন। অথচ জন্ম সনদ অনুযায়ী ছোট বোন রিতার ২বছর ৮মাস ১১দিনের ছোট বড় বোন লিপি। লিপি খাতুন বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য নিজের জন্মদাতা বাবার নামের স্থলে শ্বশুর বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদের নাম কৌশলে ব্যবহার করছেন। ইতিমধ্যে ২০০৪ সালে বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ইন্তেকাল করেছেন।
এসব অসংগতির বিষয় জানতে পারেন একই এলাকার পিরহাটি গ্রামের শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ মল্লিকের সন্তান রেজাউল হক মিন্টু। বীরমুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দ্বৈত ভোটার হওয়ার কারণে লিপি খাতুনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান রেজাউল হক মিন্টু বলেন, এভাবে বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার কৌশল খুবই দুঃখজনক। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস হারিয়ে যাবে। এ কারণে লিপি খাতুনের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করছি।
এ বিষয়ে লিপি খাতুন (কাজল খাতুন) বলেন, বিয়ের পর বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য আমার শ্বাশুড়ির পরামর্শে নিজের নাম ও মা-বাবার নাম পরিবর্তন করেছি। এটা বড় ধরণের অপরাধ করেছি। ভুল বুঝতে পেরে আমার জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদ ও শিক্ষা সনদ সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি।
উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদ সেলিম বলেন, লিপি খাতুন প্রকৃত নাম পরিচয় গোপন রেখে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্ম সনদ ও উদ্যোক্তার পদে কাজ করছেন। পরে এ বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করেছে।
ধুনট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোকাদ্দেস আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে দ্বৈত ভোটার হওয়া লিপি খাতুনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।#
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।