শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: বাঁশখালী উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়ার এলাকার কাজী ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী মারা গেছেন। হতদরিদ্র্য পরিবারের কর্তা মরহুম ইব্রাহীম রেখে গেছেন ৩ কন্যা সন্তান। বাবার রেখে যাওয়া বসত ভিটেই তার তিন মেয়ে তাদের স্বামী নিয়ে বিয়ের পর থেকে বসবাস করছেন। বর্ষাকালে বাড়িতে বৃষ্টির পানি ডুকে তাদের দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে কাটে কষ্টের দিন। শীতকালে বাড়িতে কুয়াশা পড়ে। কনকনে শীতে কষ্টে দিন কাটছে তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে। নেই কোন তাদের আশ্রয়স্থল।
নুর জাহানের স্বামী ৭০ ববছর বয়স্ক সাহাব মিয়া ও তাদের ছোট ছোট ৪ সন্তান এবং পাখি আক্তারের স্বামী ৫৫ বছর বয়স্ক মনির আহমদ ও তাদের ৪ সন্তান, খালেদা আক্তার সহ তার স্বামীকে নিয়ে বাবার রেখে যাওয়া ভিটেই বসবাস করে যাচ্ছেন। স্বামীদের বয়সের সাথে সাথে কমে যায় তাদের কর্মক্ষমতা। তারা মানুষের বাড়িতেই গৃহ পরিচারিকার কাজ করে কোন রকম অসহায় ভাবে জীবন যাপন করছে। থাকার জায়গাটা স্বরনার্থী শিবিরকেও হার মানায়। চারটা খুঁটির উপর ভর করে লবণ মাঠের তেরপাল কে (প্লাস্টিকের তাঁবু) ছাউনি করে তিন পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে। এভাবে তাঁবুতেই আজ পর্যন্ত পাঁচ বছর ধরে বসবাস করে আসছে। বৃষ্টিতে ভিজে আর কনকনে শীতের সাথে লড়াই করে অসহায় পরিবারগুলো দিনযাপন করে যাচ্ছে। এরা জনপ্রতিনিধিদের কাছে বহুবার ধর্না দিয়েও সহযোগীতার আশ্বাস পায়নি।গ্রামের বহু মানুষের সরকারি বাড়ি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেই বাড়ির তালিকাতেও নাম নেই এনাদের। তাই ভাঙা বাড়িতেই বসবাস করছেন তারা তিন বোনের পরিবার।
নুর জাহানের স্বামী বয়সের ভারে কর্মহীন, পাখি আক্তারের স্বামী ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাত, কিন্তু করোনার মহামারিতে স্কুল-মাদরাসা বন্ধ হয়ে পড়ায় তার ঝালমুড়ি বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। বয়সের কাছে কর্মদক্ষতা হার মানিয়েছে। যখন যা কাজ পায় তাই করে কোনও রকমে দিন কাটে। বহুবার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও বাড়ির ও সরকারি ভাতার ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
নুর জাহান বলেন, ‘‘গ্রামে বহু মানুষের সরকারি বাড়ি তৈরি হচ্ছে। মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মাথাগোঁজার জায়গা ও বসতঘর পাচ্ছে কিন্তু আমাদের কেউ বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে না। গ্রামের অনেক মানুষ রয়েছেন যারা সরকারি ভাতাও পাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কেউ এই ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না।’’ সাহাব মিয়া বলেন, ''একসময় শরীরে শক্তি ছিল, কাজ করেছি। এখন হাঁটাচলাফেরা করতেও কষ্ট হয়। খাবার যোগাড় করতে পারিনা। বাড়ির অবস্থা এত খারাপ বৃষ্টি হলেই ভিতরে জল পড়ে। কিন্তু উপায় নেই, তাই বাধ্য হয়ে এই বাড়িতেই দিন কাটাচ্ছি। যখনই গ্রামে কেউ আসে বাড়ি ও ভাতা দেওয়ার কথা বলেন। তারপর ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে হারিয়ে যায়।’’
শিলকূপ ইউপির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মহসিন বলেন, 'আমার কাছে সরকারী কোন বরাদ্ধ নাই। তারা অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছে। অসহায়দের জন্য সরকারী কোন ঘরের বরাদ্ধ আসলেই পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সহযোগীতা করবো। এখন আমার কাছে কোন বরাদ্ধ নেই। তাদের এহেন মানবেতর জীবন যাপন সত্যিই সভ্য সমাজের জন্য হিতকর নয়। তাদের বয়সের প্রমাণপত্র যাছাই করে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।'
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।