ধ্বংসের মুখে খলিষাগাড়ী বিলের জীববৈচিত্র্য

S M Ashraful Azom
0
ধ্বংসের মুখে খলিষাগাড়ী বিলের জীববৈচিত্র্য


রাজু আহমেদ সাহান-উল্লাপাড়া প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের প্রাকৃতিক জলাভুমি সৌন্দর্য্যের এক অনন্য নাম বাখুয়ার খলিষাগাড়ী বিল। বর্ষা মৌসুমে পানিতে নিমজ্জিত থাকে পুরো বিল। আর শুকনো মৌসুমে থাকে সবুজে ঘেরা ধানক্ষেত। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার বিঘা ফসলি ভুমি নিয়ে পৌরশহরের মধ্যে খলিষাগাড়ী বিলের অবস্থান। দুই মৌসুমেই এই প্রাকুতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভুমি থেকে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করতো বিল পারের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। তবে বিলের মুল যে বৈচিত্র্য, সেই মৎস্য সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আর আগের মতো নেই। প্রানীজ সম্পদের ভান্ডার নামে খ্যাত খলিষাগাড়ী বিলটির বুক খালি হয়ে দিন দিন হারাতে বসেছে তার প্রকৃত রূপ। ফলে সরিষাগাড়ী বিলের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা কৃষক ও মৎস্যজীবিদের পেশা পরিবর্তন করে ভিন্ন পেশায় যেতে হচ্ছে। ভরাট হয়ে যাওয়া বিল থেকে আগের মতো কৃষি পণ্য ও মাছ না পাওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা আর মেটাতে পারছে না এই বিলটি। 
অপরিকল্পিত ভবণ নির্মাণ ও নির্বিচারে মৎস্য এবং প্রাণীজ সম্পদ আহরণের ফলে বিলের সঙ্গে যুক্ত থাকা অসংখ্য ছোট-বড় নালা ভরাট করে বিলের বুকে গড়ে উঠেছে ইট-পাথরের নির্মিত বহুতল ভবন। মধ্য বিলে পানি ভরাট করে অপরিকল্পিত খামার, বসতবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে আশষ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে বিলের মৎস্য ও প্রাণীজ সম্পদ। সংকোচিত হয়ে পড়েছে বিশাল বিল এখন মরা খালে। বিলের জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভর করেই বিল সংলগ্ন গ্রামগুলোর মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম ছিল। এখন পুরোটাই বন্ধ হওয়ার পথে। ফলে বিপাকে পড়েছে বিল পারের মানুষ। 
প্রায় ১৫ হাজার মানুষের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই খলিষাগাড়ী বিল। প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য্যরে জলাভুমি এখন প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। আগের মতো উৎপাদন হয় না কৃষিপণ্য ও নানা প্রজাতির মাছসহ বিভিন্ন প্রাণীজ সম্পদ। বিলুপ্তের পথে নানা প্রজাতির মাছসহ প্রাকৃতিক সম্পদগুলোও। শীত মৌসুমে আর আসে না অতিথি পাখির দল। তাদের বিচরণ চোখে পড়ে এলাকার মানুষের। নির্বিচারে আহরণের কারণে নেই শামুক-ঝিনুকসহ কচ্ছপের মতো প্রাণীও। স্থানীয়দের ভাষায় খলিষাগাড়ী বিল এখন ভান্ডার খালি হয়ে শূণ্যর পথে। 
বিল পারের স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, খলিষাগাড়ী বিলটিতে আগের মতো তেমন আর পানি থাকে না। পানি প্রবেশের পথগুলো ভরাট করে বসতি স্থাপন করায় বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই বিলে পানির পরিমান কমে গেছে। এমন কি বর্ষা মৌসুমেও পানি প্রবেশ করতে পারে না এই বিলে। ছোট-বড় জলাশয় ও ফসলি জমি ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবণ। দেখার যেন কেউ নেই। স্থানীয়রা আরো জানান, শুকনো মৌসুমে বিলের জমিতে রাসায়নিক ও কীটনাশক সার ব্যবহার করে ধান চাষ করা হয়। ফলে পানি বিষাক্ত হয়ে নানা প্রজাতির মাছসহ জলজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে দিন দিন।
স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক পরিবেশবাদী হাফিজুর রহমান বাবলু জানান, আগের দিনে খলিষাগাড়ী বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বর্ষা মৌসুমে নৌকা চলাচল করতো কিন্তু বর্তমানে পানি প্রবেশের নালাগুলো ভরাট হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানিও নেই - মাছ নেই। ফসলি জমিতে নির্মাণ করছে ইট-পাথরের বহুতল ভবণ। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাতœকভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বিলকে ভরাট করে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত উপ-শহর। যা আগামী প্রজ্জম্মের জন্য বিষম ভয়াবহের বিষয়।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আজমল হোসেন জানান, উপজেলার খলিষাগাড়ী বিলটি আগে সদর ইউনিয়ন এরিয়ার মধ্যে ছিল। বর্তমানে পৌরসভা এলাকা হওয়ায় বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। ফলে বিল ভরাট হয়ে ইট-পাথরে নির্মিত ভবনে শহরে পরিণত হচ্ছে।  
উল্লাপাড়া পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী সাফিউল কবির জানান, বিল ভরাট করে ভবন নির্মান করার কোন সুযোগ নেই। গড়ে ওঠা উপ-শহরটি যদি আবাসিক এলাকায় না হয়, তবে নতুন করে কোন স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে না। সংশিষ্ট বিষয়টি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।     


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top