রৌমারীতে ওদের জীবন হুইলে বন্দি ; তারা চেয়ে আছে সরকারের দিকে

S M Ashraful Azom
0
রৌমারীতে ওদের জীবন হুইলে বন্দি ; তারা চেয়ে আছে সরকারের দিকে


শফিকুল ইসলাম: কুড়িগ্রাম জেলাধীন রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ও চরশৌলমারী ইউনিয়ন এবং উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার একসময় তাঁত পেশার সাথে জড়িত ছিল। তাঁতীদের স্বল্প লাভে ঋণ সুবিধা ও  উৎপাদিত পণ্য সূলভ মূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা না থাকা।

কিছু কিছু তাঁত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবাহের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁতী পেশা ছেড়ে তাঁতীরা ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন শহরে বছরে প্রায় ছয় মাস শ্রম বিক্রয় করে উপার্জিত অর্থে অতিকষ্টে এক বছর সংসার চালান তারা। পর্যায়ক্রমে তাঁত ঘর বন্ধ রেখে অধিকাংশ মানুষ এ পেশা থেকে ভিন্ন পেশা গ্রহন করছেন। আর যারা বাপ দাদার তাঁতী পেশা অতি কষ্টের মধ্যেও ধরে রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনরাত শ্রম দিয়ে তৈরী করছেন আমাদের জন্য শীতের চাঁদর, মাফলার, বাহারী রঙ্গীন শাড়ী, লুঙ্গী ও গামছা।  

তাদের প্রয়োজনীয় সংকটের দিকে কেউ সুনজর দেয়নি। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকট, বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরের অতিরিক্ত ব্যয়, বিনিয়োগের অভাব, সুদের চাপ, বিক্রিত পন্যের টাকা বকেয়া, মধ্যসত্ত¡ভোগীদের দাপট, বাজারজাতকরনে প্রতিবন্ধকতা এমন হাজারও সমস্যা থাকলেও হুইলেই যেন বন্দি থেকে গেলো ওদের জীবন। বাপ দাদার এ পেশা পারছেনা ধরে রাখতে, পারছেনা ছেড়েও দিতে। সর্বশান্ত পরিবারগুলো সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছে। চায় রৌমারীর তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে। ফিরে আনতে চায় কাকডাকা ভোর থেকেই গ্রামের পর গ্রামজুড়ে তাঁতীবাড়ির খট্ খট্ শব্দ। 

তাই এখন তারা দৃষ্টি কামনা করছে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রৌমারী উপজেলার নামাজেরচর, চরকাজাইকাটা, ওয়াহেদ নগর, চরশৌলমারী, সাহেবের আলগা, মিয়ারচর, সোনাপুর, ফুলকারচর, দক্ষিণ নাজেরচর, মশালেরচর, দইখাওয়াচরসহ অনেক গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, তাঁতীদের প্রায় সংখ্যক তাঁত বন্ধ। যদিও শীতের চাঁদর তৈরীর জন্য এখন তাঁতগুলো রাত-দিন চালু থাকার কথা। তাঁতীদের চোখে মুখে রাজ্যের হতাশা। গোটা এলাকা জুড়েই নিরবতা আর শূণ্যতা। এদের মধ্যে কেউ কেউ কিছু জমি বন্ধক, জমি বিক্রি, ধারে, ও সুদের টাকা নিয়ে সুতার ব্যবস্থা করে। তাঁতগুলোতে বছরভর জমে থাকা ধুলোবালির আস্তরণ মুছে নতুন আশায় শুরু করেছিল। এখানে সাধারনত শাড়ি, লুঙ্গি, শীতের চাদর ও মাফলার তৈরি করেন ওরা। এ ভরা শীতে একটি চাদর বিক্রি হয়েছে ৪’শ থেকে ৪২০ টাকায়। লুঙ্গি ১’শ থেকে ৩’শ টাকায়। মাফলার ১’শ থেকে দেড় ’শ টাকায়। শাড়ির বাজার তেমন ভাল নয় বিধায় সেটির কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পাটের মাদুর বিছিয়ে খোলা দোকানে বিক্রয় করেন কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এ শীতে তাদের তৈরী লুঙ্গি, শীতের চাদর শুধু টাঙ্গাইল জেলায় নিয়ে ছোট ছোট কাপড়ের দোকানে পাইকারী দরে ও বাকিতে বিক্রয় করা হয়। বার বার টাকার জন্য যেতে হয় টাঙ্গইলে। 

স্বাধীনতার পর থেকেই পরিবর্তন হয়েছে অনেক সরকার। ভোট পেয়ে সংসদ সদস্যের গদি দখল করেছেন সংসদ সদস্য। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি, ঘটা করে সমাবেশ ও প্রতিশ্রæতির। পরে সব আগের মতই। এমনকি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরাও এর বাইরে নন। ভোটের আগে তাঁতীদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়েছেন তারাও। ভোটের পর নিজের সীমাবদ্ধতার অজুহাত দিতে কার্পন্ন করেননি। একপর্যায়ে তাঁতীরা ধর্ণা দিতে শুরু করেন উচ্চ পদস্থ আমলাদের দ্বারে। যারা রৌমারীর সন্তান, তারাও প্রতিশ্রতি দিয়েছেন আকাশ ছোঁয়া। তাঁতীরা আবার বুক বেঁধেছেন নতুন আশায়। কিন্তু ‘যাহা বায়ান্ন তাহা তেপ্পান্ন’র মতোই অবস্থা। তাঁতীদের কপাল আর ফেরেনি। একদিকে তাঁতগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে শীতের শেষে ঋনদাতারা মাথার উপরে খড়গ নিয়ে হাজির হবে। কিছুই বুঝতে চাবে না। এমনটাই জানালেন পশ্চিম মিয়ারচর গ্রামের জুলফিকার তাঁতী। 

তিনি আরও বলেন এখন যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের উপর একটু নজর দেন, তাহলেই আমরা এই তাঁত শিল্পকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে পারি। 

চরশৌলমারী গ্রামের মোরতুজ আলী  বলেন, টাইঙ্গলের এক মহাজনকে ২ লাখ টাকার চাদর বাকিতে দিছি  ১বছর আগে। হ্যায় টাকা দিছে মোডে ১ লাখ। বাকি টাকা এহনতুরি পাই নাই। 

চরশৌলমারী গ্রামের মমিনুল ইসলাম বলেন, সুদে টাকা নিয়ে তৈরী শাড়ি, লুিঙ্গ, শীতের চাদর ও মাফলার বাকিতে বিক্রি করতে হয়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার সরকার যদি আমাদের তাঁতের তৈরী পোশাকের ন্যায মূল্যে সরাসরি বিক্রয়ের ব্যবস্থা করত তাহলে আমরা লাভবান হবো। তাঁতী পেশা টিকে থাবে পবিরাব পরিজন নিয়ে একটু শান্তিতে বাঁচতে পারবো এখন শুধু সে আশা টুকু করি।

ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে গিয়ে তাদের কষ্ট দেখে শতকরা দশ হারে সরল ঋণ প্রথমে নয় জনকে ৫০হাজার টাকা করে ঋণ প্রদান করেন। সঠিক সময়ে তারা ঋণ পরিশোধ করায় এখন বারো জনকে ৬০ হাজার টাকা করে দ্বিতীয় ধাপে ঋণ দেওয়া হয়েছে।

চরশৌলমারী তাঁত সমিতির সাধারন সম্পাদক রমজান আলী বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক এখন আমাদের কিছু কিছু ঋণ দিচ্ছে প্রতিজনকে ৫০ হাজার টাকা করে। এতে আমার সুদের টাকা কমনিতে হচ্ছে সরকারের সব তফশীলি ব্যাংক আমাদের দিকে তাকালে আর সুদের বোঝা বইতে হবে না।

চরশৌলমারী তাঁত সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ১৮৭ পরিবার আমরা মাসিক ৫০টাকা করে জমা করি।  কিন্তুু কিছু দরিদ্র তাঁতীর মেয়ে বিবাহ, কোন তাঁতী অসুস্থ্য হলে তার চিকিৎসা জন্য আমরা সমিতির তহবিল থেকে ক্ষুদ্র আকারে আর্থিক সহযোগীতা করি। কারন উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে সহযোগীতা চাইলে তারা আমাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়। সরকার যদি আমাদের এককালিন অনুদান, বিদ্যুতের সুব্যবস্থা এবং মধ্যসত্ত¡ভোগীদের হাত থেকে আমাদের বাঁচালে আমরা আগের মতো আবারও বাঁচিয়ে তুলতে পারবো হারিয়ে যাওয়া তাঁত শিল্পকে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান জানান, তাতঁ শিল্পগুল অর্থের অভাবে বিলুপ্তের পথে। তারা সরকারের সকল প্রকারের সহযোগীতার দাবী জানিয়েছেন। আমি আমার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমত শিল্পগুলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করব।


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top