কাজিপুর প্রতিনিধি: শতভাগ অনলাইন আপডেট ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্র, সপ্তাহে একদিন গনশুনানি আর দ্রুততম সময়ের মধ্যে জমির নামজারিসহ নানামুখী সেবায় পাল্টে গেছে কাজিপুর উপজেলা ভূমি অফিস।
সেবা নিতে নেই তৃতীয় পক্ষের দৌরাত্ম। কোন হয়রানী ছাড়াই মিলছে জমির প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র। কাজিপুর উপজেলা ভূমি অফিসের নানামুখী সেবা পেয়ে খুশি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।
যারা এক সময় তৃতীয়পক্ষের সহায়তা ছাড়া জমির কোন কাজই করতে পারতেন না, তারাই এখন নিজের সমস্যার কথা নিজেরাই ভূমি অফিসে এসে বলতে পারছেন।
সেবাগত এই পরিবর্তনের সাথে একটি চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিয়ে ভূমি অফিসের পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলছে।
সোমবার (১৫ মার্চ) উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে কথা হয় যমুনা চরের মনসুরনগর ইউনিয়ন থেকে ১৯ কিলোমিটার পথ নৌকায় ও পায়ে হেঁটে নামজারি করতে আসা জমির মিয়ার সাথে।
তিনি জানান,
‘তিন বছর আগে একবার খারিজ চ্যায়া চারদিন এহানে আসা নাইগছে। হের পর এরে ওরে (দালাল) ধইরা অনেক ট্যাহা দিয়া কাজ হরছি। আর এবার তারিখ দিছিলো আইজক্যা। আইলাম আর পায়া গেলাম। ট্যাহাও রশিদ দিয়া নিছে।’
জমির মিসকেসের শুনানীর জন্যে আসা উপজেলার সোনামুখী গ্রামের আছিয়া খাতুন জানান,
আমার জমির বিষয়ে সমস্যা জানিয়ে দরখাস্ত দিছিলাম। গতকাল ভূমি স্যার (উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি) নিজে আমাকে ফোন দিছে। ফলাফল যাই হোক স্যার আমাকে ফোন দিয়ে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছেন এতে আমি অনেক খুশি।’
উপজেলা ভূমি অফিসসূত্রে জানা গেছে, প্রায় চারবছর যাবৎ এই অফিসের বন্ধ হওয়া গণশুনানী বর্তমানে চালু হয়েছে। সেইসাথে উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও একটি পৌর ভূমি অফিসেও লেগেছে এই পরিবর্তনের হাওয়া। ভোগান্তি ছাড়া স্বল্পসময়ের মধ্যে সেবা প্রার্থীরা কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন এখন। শুনানীকালে কোন পক্ষের কাগজপত্রের ঘাটতি থাকলে আবেদন বাতিল না করে তাকে সময় দেয়া হচ্ছে।
কোন কাগজের নকল পেতেও কোন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়না। নানামুখী এসব সেবার পাশাপাশি উপজেলা ভূমি অফিসের পরিবেশগত ও অবকাঠামোগত পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সহকারী কমিশনার ভূমির উপস্থাপিত নকশা ও কর্মপদ্ধতির প্রশংসা করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ।
জরাজীর্ণ ভূমি অফিসের মূল কাঠামো ঠিক রেখে চলছে সংস্কার কাজ। এতে করে সেবাগ্রহিতারা এই অফিসে এসে দ্রæত সেবা যেমন পাবে তেমনি রোদে কিংবা বৃষ্টিতে তাদের কষ্ট করতে হবে না।
বর্তমান ইউএনও’র সহায়তা ও সার্বিক পরামর্শে সামনে থেকে এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাজিপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম আরিফুল ইসলাম।
তিনি জানান, এখানে যোগদানের পর থেকে ডিসি স্যার ও ইউএনও স্যারের সহায়হায় ভূমি সংক্রান্ত সকল ফাইল ও সেবা অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে।
যিনি সেবাপ্রার্থী কেবলমাত্র তাকেই অফিসে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে করে তৃতীয়পক্ষের ভোগান্তি থেকে তারা রক্ষা পাবে।
সেবার বিষয়ে তিনি জানান, যে সেবা অফিস থেকে দেয়া সম্ভব তাৎক্ষণিক তা দেয়া হচ্ছে।
যেটাতে সময় লাগবে সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এসএমএস অথবা ফোনে নির্ধারিত তারিখ বলে দেয়া হচ্ছে। আর যে সেবা এখান থেকে দেয়া সম্ভব নয় সেই সেবা প্রাপ্তির বিষয়ে সঠিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, ‘ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একজন অফিসার চাইলে উপজেলার অনেক উন্নতি ঘটাতে পারেন। বিষয়টি আমাদের নাড়া দিয়েছে। সৃজনশীল কাজ করার মানসিকতা যেমন আছে, তেমনি ডিসি স্যার ও বর্তমান এমপি স্যার সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। এ কারণে ভূমি অফিসের সেবার মান পরিবেশ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। ’
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।