মোহাম্মদ নাসিম ।। রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ

S M Ashraful Azom
0
মোহাম্মদ নাসিম ।। রাজনীতির প্রবাদ  পুরুষ
মোহাম্মদ নাসিম ।। রাজনীতির প্রবাদ  পুরুষ



আবদুল জলিল:  ‘স্মৃতিই একমাত্র স্বর্গ যেখান থেকে কাউকে তাড়িয়ে দেয়া যায় না। ’ মানব জীবনে স্মৃতিছাড়া বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবশ্য স্মৃতির রকম ফের জনে জনে আলাদা। তার পরতে পরতে রঙের ছড়াছড়ি। কর্মময় জীবনের নানা রঙের সাথে স্মৃতির রঙের বিস্তৃতি, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ঘটে। যার কর্ম পরিধি কোন ভূগোলের সিমার ধার ধারে নি, যার অতীত সমৃদ্ধ অসীম, যিনি জীবনের যৌবন থেকে শুরু করে শেষ সময় পর্যন্ত সবটুকু নিংড়ে দিয়েছেন মানুষের কল্যাণে, যার কর্মের সম্ভারে কাজিপুরের নদী, পানি, বালি পলি সব উর্বর হয়ে উঠেছে, তিনি একজনই বাংলাদেশের রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র মোহাম্মদ নাসিম। জন্ম রাজনৈতিক পরিমন্ডলে। মানুষের সখ্যতার পাঠ তার ছোটবেলার নিত্যদিনকার পাঠ্যতালিকায় ছিলো। বাংলা নামের দেশটিকে স্বাধীন করতে যাদের অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, তাদের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহিদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী তার পিতা। 
 জাতীয় সংসদের সিরাজগঞ্জ-১ আসনে  ছয়বারের নির্বাচিত এমপি তিনি। অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সাথে সামলেছেন। গোটা উত্তরবঙ্গের রাজনীতির প্রধান মুরব্বী ছিলেন তিনি। তার ক্লান্তিহীন পরিশ্রম ও নির্দেশনায় উন্নয়নের পথে এগিয়েছে কাজিপুরসহ গোটা উত্তরবঙ্গ। 
 তিনি নিজ এলাকার মানুষের কথা প্রথমে ভেবে রাখেননি কখনও। সবার উন্নতির পথেই নিজের আনন্দ অনুভব করেছেন। শেষ দিকে এসে তিনি পুরো কাজিপুরের উন্নয়নে এককভাবে মনোযোগী হন।  আইএইচটি, পরিবার পরিকল্পনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টেক্সটাইল, পর্যটনকেন্দ্র, ইকোপার্ক, পল্লীবিদ্যুৎ ভবন, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, আঞ্চলিক সড়ক প্রশ্বস্তকরণসহ চরাঞ্চলের ছয় ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ তিনি শুরু করেন। এমনকি কাজিপুর উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনটির নির্মাণ কাজের তিনি উদ্বোধন করেছেন। জেলাতেও যেমনটি নেই ঠিক তেমন একটি আধুনিক পাঁচতলা ডাকবাংলো এবং অত্যাধুনিক একটি অডিটোয়িাম নির্মাণ কাজের শুরু করেছিলেন তিনি। এতোসব উন্নয়নের মাঝে একবিন্দু অতৃপ্তি তার রয়েই গেছে। উন্নয়নের রোলমডেলের পথে কাজিপুরকে তুলে দিয়ে নিজে চলে গেছেন আমাদের আদর ভালোবাসা নিয়ে দূর আকাশের তারার মাঝে। কিন্তু ছোটগল্পের মতোই তার জীবনের অযূত কাজের মাঝে একটি এখনও অসফলই রয়ে গেছে। অথচ যে কাজটি তিনি আগ্রহ সহকারে করার কথা জানিয়েছিলেন। 
 ২০১৮ সালের জুন মাসের কোন এক সকাল।  কাজিপুর উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষ প্রস্তুত। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সভাকক্ষে ঢুকলেন। আর ঢুকলেন উপজেলায় কর্মরত সকল দপ্তরের অফিসারগণ। যথারীতি সভাপতির আসনে তৎকালিন কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ঢুকলেন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ডাক পড়লো কাজিপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরও। সভা শুরু হলো। একের পর এক আলোচনা আসছে। মাননীয় মন্ত্রী রসিকতা করে সেসব কাজ ও কথার এমনভাবে জবাব দিচ্ছিলেন যে মনে হচ্ছে এই সভাটি শুধুই আনন্দের। অথচ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেদিনের সেই সভায়। অফিসারগণ তাদের প্রিয় অভিভাবকে বন্ধুর মতো পরিবেশে ও ব্যবহারে পেয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথাগুলো প্রাণ খুলে তুলে ধরলেন।  সবশেষে  সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে মাননীয় মন্ত্রী রসিকতার ছলে বললেন, ‘ এই সভাপতি সম্পাদক তোমরা বলো। তোমাদের জন্যে কি করার আছে। এসময় সভাপতির অনুরোধে সম্পাদক হিসেবে আমি দাঁড়াই। সালাম বিনিময়ের পরে সবিনয়ে নিবেদন করি, মাননীয় মন্ত্রী , কাজিপুর প্রেসক্লাবের কোন ভবন নেই। আমরা অস্থায়ীভাবে এখানে সেখানে বসে কাজ করি। 
 ব্যস, এইটুকুই। আমার মুখ থেকে তিনি কথা শেষ না হতেই  ইউএনও’র দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বললেন, এই ইউএনও, তুমি দ্যাখো, কোথায় জায়গা খালি আছে। জানাও। আমি ঘর করে দেবো। আর তুমি (ইউএনও) আপাতত সাংবাদিকদের বসার ব্যবস্থা করে দাও।
 এই মোহনীয় ও বাস্তবধর্মী কথার রেশ না ফুরোতেই অযাচিতের মতো একজন দাঁড়িয়ে গেছেন।  মাননীয় মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, সাংবাদিকদের ঘর দেবার আগে কথা আছে। ওরা আমাদের উন্নয়ন নিয়ে কিছু লেখে না। শুধু বিরোধিতা করে। আমাদের কাজের মাঝে বিঘœ সৃষ্টি করে। কাজেই এসব শোনাজানা করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। 
 পুরো সভাকক্ষ নিরব। মনো হলো ক্ষণিকের জন্যে উপস্থিত সবাই হতচকিয়ে গেলেন।  সভার আনন্দঘন পরিবেশ হঠাৎ গুমোট হয়ে উঠলো।  মন্ত্রী মহোদয় আর কথা বাড়ালেন না। সেদিনের মতো সভা শেষ হলো। মন্ত্রীর শেষ কথাটি তৎকালিন ইউএনও বাস্তবায়ন করলেন। অস্থায়ী বসার একটা ব্যবস্থা উনি করে দিলেন। যা টিকেছিলো মোটে চার মাস। পরে সেই ঘরটিও ভেঙ্গে ফেলা হয়। 
 আর যে কাজটির জন্যে মন্ত্রী মহোদয় কথা তুললেন, আমরাও বললাম, সেটি আর আলোর মুখ দেখলো না। 
 দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রেসক্লাবের ভবন রয়েছে। সেখানে সাংবাদিকগণ নিজের মতো করে তাদের কাজগুলো করতে পারেন। অথচ এমন একজন মন্ত্রী পেয়েও আমরা প্রেসক্লাবের ভবন পাইনি। এই ব্যর্থতা আমাদের।  কাজিপুরের উন্নয়ন আমরা তুলে ধরি না, এই অপবাদের যন্ত্রণাও আমাদের মাঝে আছে। উন্নয়ন সাংবাদিকতায় পুরস্কার কপালে জুটেছে। কিন্তু  সেই উন্নয়নের রূপকার, কাজিপুরের মাটি ও মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন, এক কঠিন বিশ্বাসের জায়গা প্রিয় নেতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিম আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন। রেখে গেছেন  আস্থার শিকড়। সেই শিকড়ের পরিচর্যায় কাজিপুরবাসী আবারো হারানোর বেদনাকে শক্তিতে রূপান্তর ঘটিয়েছে। প্রমাণ দিয়েছে উপ নির্বাচনে ইভিএম ভোটের ইতিহাস সৃষ্টি করে। এখন সেই আস্থার শিকড় আমাদের ভয়মুক্ত উন্নয়নের পথে দেবেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নেবার অফুরন্ত অক্সিজেন- এটাই কামনা ।  নেতার চিন্তার প্রেসক্লাব আজ বিভক্তির বিষবাষ্পের কালিমায় ঢেকে যেতে বসেছে। তাই ফিরে যাই, ফিরে চাই সেই আস্থার শিকড়ের নিকটে যার প্রজ্ঞায় আমরা পিতার চিন্তার প্রতিফলন- কালিমামুক্ত  সাংবাদিক বান্ধব সাংবাদিকদের প্লাটফর্ম প্রেসক্লাব  পাবো ;এই বিশ্বাসে প্রয়াত নেতার  অপূর্ণ কর্মের সমাপ্তিতে শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক- এই কামনা করছি। 
 

শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top