বাঁশখালীর পাহাড়ী অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষ, চাষীদের মুখে হাসি

S M Ashraful Azom
0
বাঁশখালীর পাহাড়ী অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষ, চাষীদের মুখে হাসি

ক্যাপশন: বাঁশখালী ইকোপার্ক সংলগ্ন পাহাড়ি জমিতে আদা চাষ।। ছবি: শিব্বির আহমেদ রানা 




শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী প্রতিনিধি: বাঁশখালী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষ হয়েছে। 

চলতি বছরের রবি মৌসুমের শেষের দিকে উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর, জঙ্গল গুনাগরী, বৈলছড়ি, জঙ্গল পাইরাং, জঙ্গল জলদী, পূর্ব শীলকূপ, পূর্ব চাম্বল, পূর্ব নাপোড়া পাহাড়ি এলাকায় এবার প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের পাহাড়ি আদার চাষ হয়েছে। 

অপেক্ষাকৃত উঁচু ও পতিত জমিতে আদা চাষে তেমন বেশি সারের প্রয়োজন এবং পরিশ্রম লাগেনা। তাই এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় এ ফসল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

নির্ধারিত জমি থেকে কাঙ্ক্ষিত আদা উৎপাদনের সম্ভাবনা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। হেক্টরপ্রতি ১৩ থেকে ১৫ মেট্রিক টন আদা উৎপাদন করা সম্ভব।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, 'বিশেষ করে ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত সময়ে আদার বীজ লাগানো যায়। সাধারণত ১২-১৫ গ্রাম ওজনের ১-২টি কুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ লাগানো হয়। 

৪০-৪৫ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ২০ সে.মি. দূরে ৫ সে.মি. গভীরে আদা লাগানো হয়। কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ১০০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। 

বাঁশখালী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় আদা চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণ উপযোগী জমি রয়েছে। এখানকার জমির মাটি উর্বর হওয়ায় নানা ধরনের সবজির চাষাবাদ বেড়েছে। 

আদা মূলত দামি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি মসলা। দেশে আদা চাহিদার তুলনায় বড় একটি অংশ অন্যদেশ থেকে আনতে হয়। 

বিশেষ করে ছায়াযুক্ত জমিতে অন্য জমির চেয়ে ২০ ভাগ বেশি আদার উৎপাদন হয়। এমন ধারণা থেকে এবার পাহাড়ি জমিতে আদার চাষ হয়েছে। 

আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় এবছর চাষীরা আদা চাষে ভাল ফলন হবে, ভাল ফলনে চাষীরা সফল হবে এমনটাই ধারণা করছে। 

বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৭৫০ হেক্টর পাহাড়ি উঁচু নিচু জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়। 

আদার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া দরকার। অল্প ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষাবাদ ভালো হয়। উঁচু বেলে দোআঁশ, বেলে ও এঁটেল দোআঁশ মাটিত আদার ভাল ফলনের জন্য উপযোগী।'

উপজেলার শিলকূপের স্থানীয় আদা চাষী বাদশা, শামশুল আলম, শাহেদ সরোয়ার, প্রণবের সাথে আলাপ করে জানা যায়, 'মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে তারা আদার বীজ রোপণ করেছেন। 

নভেম্বর-ডিসেম্বর দিকে ফলন ঘরে তুলবেন। পতিত ও পরিত্যক্ত জমিতে এর চাষ হওয়ায় জমির শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। 

এক শতাংশ জমির জন্য ৪ কেজি আদার বীজ প্রয়োজন হয়। আর একটি গাছ থেকে আড়াই কেজি বা তারচেয়ে বেশি আদা পাওয়া যায়। তাই পরিশ্রম কম হওয়াতে আদা চাষে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। 

শুধু শিলকূপের পাহাড়ি এলাকায় এবার ৫০ কানির অধিক জমিতে আদার চাষ হয়েছে বলে জানান তারা। তারা আরো জানান, পাহাড়ি পতিত উঁচু জমিকেই আমরা আদা চাষের জন্য নির্ধারণ করেছি। 

বৃষ্টি হলেও পানিটা নেমে যায়। যা আদার জন্য অতি প্রয়োজন। ইতোমধ্যে উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ভালো মানের আদার গাছ হয়েছে। 

মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসাররা সব ধরণের পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি এবছর ব্যাপক ফলন আসবে।'

পাহাড়ি আদা চাষী বাদশা জানান, 'আদা চাষে তেমন পরিশ্রম করতে হয়না। পাহাড়ের উঁচু জমিতে ও বিভিন্ন গাছ বাগানের ছায়াযুক্ত স্থানে তিনি আদার আবাদ করেছেন। 

জমি প্রস্তুত করার সময় মাটিতে সার দিতে হয়, এছাড়া কোন সার দিতে হয়না। বর্ষা মৌসুমে ছত্রাক আক্রমণ করার সম্ভাবনা থাকে তাই এ সময়টাতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হয়। আর তেমন কোন পরিশ্রম নেই। 

তিনি প্রায় ৩ কানি পরিমাণ জমিতে আদার চাষ করেছে। আশা করছেন ভালো ফলন পাবেন।'

অপর কৃষক শামশুল আলম বলেন, 'তিনি এবছর ক্ষুদ্র পরিসরে আদার চাষ করলেও আগামীতে তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। 

এখান থেকেই তিনি বীজ সংরক্ষণ করে রাখবেন বলে জানান।' তিনি আরো বলেন, 'উৎপাদন খরচ প্রতিকানি জমিতে আদা ও শ্রমিকসহ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। 

ভালোমতো ফলন হলে কানিপ্রতি ব্যয় বাদে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়।'

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক বলেন, 'বাঁশখালী আদা চাষের জন্য সম্ভাবনাময়ী একটি কৃষি জোন।বাঁশখালীতে এবার প্রচুর পরিমাণ আদার চাষ হয়েছে। 

প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়েছে এবার। অন্য ফসলের সাথেও আদা চাষের সুযোগ রয়েছে। তাই চাষীদের আদা চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। 

গুবড়ি পোকার আক্রমণ না হলে আদার ভাল ফলন হয়। পাহাড়ী অঞ্চলের কৃষকেরা আদা চাষে আগ্রহ দেখাতে আদা চাষের ক্ষেত্রও বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। 

আদা লাগানোর ৯-১০ মাস পর উঠানোর উপযোগী হয়। গাছের প্রায় সব পাতা শুকিয়ে গেলে আদা তোলা হয়। ফলন প্রতি হেক্টরে ১৩-১৫ টন। 

বাজারে আদার ভালো মূল্য থাকলে চাষীরা বেশ উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।'

 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top