সংসারের ঘানি টানতে নিজেরা টানেন তেলের ঘানি

S M Ashraful Azom
0
সংসারের ঘানি টানতে নিজেরা টানেন তেলের ঘানি



আব্দুল জলিল, সিরাজগঞ্জ:  নিজের পেট চালাতে পরিবারের ঘানি টানতে টানতে হয় তেলের ঘানি। চার যুগ ধরে এমনি করে গরুর পরিবর্তে পেটের সাথে ঘানির বাঁশ লাগিয়ে চক্রাকারে ঘুরছেন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার কুনকুনিয়া গ্রামের আব্দুল খালেক দম্পতি। 

নিজের তিন ছেলে সংসার পেতে আগেই আলাদা হয়ে গেছে। তাদের গতর খাটা(শ্রমিক) কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। 

কাজিপুরে তার মতো আরও কিছু পরিবার এই পেমার সাথে এখনও জড়িত। দশ কেজি সরিষা থেকে বের হয় তিন কেজি তেল। আর এই তেল বের করতেই বৃদ্ধ দম্পতিকে ঘানি টানতে হয় একটানা আট ঘণ্টা। 

এই অমানষিক পরিশ্রমের মাধ্যমেই ঘোরে তাদের সংসারের চাকা।  কড়ি কাঠের তৈরি কাতলার উপর প্রায় দুইশ কেজির পাথর বসিয়ে ঘাড়ে জোয়াল বেধে এই ঘানি টানেন তারা। 

ঘানির টানে ডালার ভিতর সরিষা পিষ্ট হয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় তেল পড়ে নিচে রাখা পাত্রের মধ্যে। স্থানীয় হাটে এই তেল বিক্রি করলেই চলবে সংসার। 

প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এভাবেই জীবন সংগ্রাম চালান হতদরিদ্র আব্দুল খালেক প্রামাণিক ও রাহালা দম্পতি।  

জমি বলতে তাদের ওই বাড়ির ভিটেটুকুই। বংশ পরম্পরায় তারা এই পেশা ধরে রেখেছেন। কয়েক বছর পূর্বে আব্দুল খালেকের এ্যাজমা ধরা পড়ে।  

চিকিৎসা করতে তিনি বিক্রি করেনে  নিজের কলুর বলদটি।  এরপর আর সামর্থ্য হয়নি গরু কেনার। কেউ সহায়তার হাতও বাড়ায়নি কখনো। দশ বছর বয়স থেকে তার বাবাকে সহযোগিতা করতে ঘানির জোয়াল টানা শুরু করেন। 

বয়স পঞ্চান্নতে এসে শরীর আর চলে না। তারপরও মাঝে মধ্যে স্ত্রীকে সহযোগিতা করেন জোয়াল টানতে। দু-তিন মিনিট টানতেই ক্লান্ত হয়ে যায় শরীর। 

এখন যে তার শরীরে হাজারো রোগ বাসা বেধেছে। অভাবের সংসারে একদিন ঘানি না টানলে যে সংসার চলে না। জোটেনা এক মুঠো ভাত। 

আজ(২১ সেপ্টেম্বর)মঙ্গলবার  দুপুরে কথা হয় আব্দুল খালেক প্রামাণিক দম্পতির সাথে। আব্দুল খালেক বলেন, স্থানীয় রতনকান্দি হাট থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে সরিষা কিনে আনি। 

এরপর ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘানি টেনে তেল বের করি। হাটে ৩০০ টাকা কেজি দরে এই তেল বিক্রি করে চাল কিনে আনি। তারপর পেটে ভাত যায়। 

প্রতিদিন এভাবেই আমাদের সংসার চলে। ঘানি টেনে যে তেল পাই তা বিক্রি করে তিন বেলা খাবার ও ঔষধপত্র জোটানো কঠিন। 

তিনি আরও বলেন, শরীরে নানা অসুখ বাসা বেধেছে। দু-তিন মিনিট জোয়াল টানলেই হাফসে যাই। কেউ যদি একটা গরু কিনে দিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে এই শেষ বয়সে আর এতো কষ্ট করতে হতো না। বুড়ো বুড়ি অনেক সুখে থাকতাম।

এ ব্যাপারে কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, বিষয়টা খুবই অমানবিক। আপনার মাধ্যমেই জানলাম। সরেজমিন দেখে  তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।# (ছবি আছে) 

 



 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top