সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশে নিযুক্ত তু’রস্কে’র রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেছেন, বাংলাদেশ ও তু’রস্ক সহযোগিতা’র বিস্তৃত ক্ষেত্র নিয়ে কাজে’র মাধ্যমে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতে’র দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে’র মাধ্যমে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদে’র প্রভাব বাড়ানো’র ক্ষেত্রে দুই দেশে’র যথেষ্ট সুযোগ ‘রয়েছে।
তিনি
বলেন, আমরা সব বড়
শক্তি’র সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি, তবে নির্দিষ্ট কোনও
পক্ষে অবস্থান নেইনি। আমি মনে করি,
আমাদে’র এই নি’রপেক্ষ অবস্থান
বাংলাদেশে’র সঙ্গে একটি নির্ভ’রযোগ্য অংশীদারিত্ব
গড়ে তুলতে সাহায্য ক’রবে।
বৃহস্পতিবা’র
(২৩ ডিসেম্ব’র) কসমস গ্রুপে’র জনহিতক’র
প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন দুই
দেশে’র মধ্যে বিরাজমান সকল সম্ভাবনাকে বাস্তবে
রূপান্তরিত করা’র বিষয়ে বাংলাদেশ ও তু’রস্কে’র প্রচেষ্টা
নিয়ে ‘বাংলাদেশ-তু’রস্ক সম্পর্ক: ভবিষ্যতে’র জন্য পূর্বাভাস’ শীর্ষক
ভার্চুয়াল সংলাপে’র আয়োজন করে। সংলাপে উভয়
দেশে’র বিশেষজ্ঞরা দুই দেশে’র মধ্যকা’র
সম্পর্কে’র অবস্থা মূল্যায়ন করেন এবং এই
সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়া’র ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো চিহ্নিত
করেন।
কসমস
সংলাপে তা’র মূল বক্তৃতা
দেয়া’র সময় ‘ভূ-কৌশলগত
প্রতিযোগিতা’র’ এই টানাপোড়েনে’র মধ্যে
নি’রপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে ঢাকা-তু’রস্ক সম্পর্ক উন্নয়নে’র মাধ্যমে দুই দেশে’র উজ্জ্বল
ভবিষ্যত গড়া’র বিষয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত তুরান।
সংলাপে
উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন কসমস ফাউন্ডেশনে’র চেয়া’রম্যান
এনায়েতউল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন
প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক স’রকারে’র
সাবেক প’ররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখা’র আহমেদ
চৌধুরী। আলোচক প্যানেলে ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস এন্ড
সিকিউরিটি স্টাডিজে’র সিনিয়’র ফেলো শাফকাত মুনী’র,
সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম এবং
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে’র অধ্যাপক ড. লাইলুফা’র ইয়াসমিন
প্রমুখ।
রাষ্ট্রদূত
বলেন, তিনি মনে করেন
‘ভূ-কৌশলগত প্রতিযোগিতায়’ তু’রস্কে’র সঙ্গে সহযোগিতা ক’রতে পেরে বাংলাদেশ স’রকা’রও
আনন্দিত হবে। ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি বা বেল্ট
অ্যান্ড রোড উদ্যোগে তু’রস্ক
কোনো নির্দিষ্ট পক্ষেই অবস্থান করে না। তারা
বাংলাদেশে’র মতো একটি মধ্যম
পথ অনুস’রণ করা’র চেষ্টা করে। বাংলাদেশে’র এই
৫০ বছরে’র অগ্রযাত্রা শুধু বাংলাদেশে’র জনগণে’র
জন্যই গুরুত্বপূর্ণ না, এ’রসঙ্গে তা’র
সকল বন্ধুপ্রতীম দেশ ও অংশীদা’রদে’র
জন্যও এই যাত্রা আশা’র
আলো’র মতো।
রাষ্ট্রদূত
বলেন, আমি মনে করি
আমরা এমন অংশীদারিত্ব গড়ে
তুলতে পারি, যা পা’রস্পরিক স্বার্থ
সংশ্লিষ্ট অনেক ক্ষেত্রে কাজে
লাগবে। এক্ষেত্রে শুধু গার্মেন্টস শিল্পই
নয়, বরং উদীয়মান ক্ষেত্র
হিসাবে ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প, স্বাস্থ্য খাত এবং আইসিটি
সেক্টরেও সহযোগিতা বাড়াতে পারি।
এসময়
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সুদৃঢ় করা’র জন্য রাষ্ট্রদূত তুরানে’র
নি’রলস প্রচেষ্টা’র প্রশংসা করে এনায়েতউল্লাহ খান
বলেন, বাংলাদেশ-তু’রস্ক সম্পর্কে’র ভবিষ্যত বর্তমানে’র মতো এত উজ্জ্বল
আ’র কখনো দেখা যায়নি।
যোগ্য নেতৃত্ব ও দক্ষ কূটনীতিক
হিসেবে রাষ্ট্রদূত তুরান এই অংশীদারিত্ব গড়ে
তোলা’র কাজটি পরিচালনা ক’রছেন। তিনি মনে করেন
বাংলাদেশ কখনোই এই সুযোগ হারাতে
চাইবে না।
এনায়েতউল্লাহ
খান আ’রও বলেন, তু’রস্কে’র
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এ’রদোয়ানে’র অধীনে ঢাকা ও আঙ্কারা’র
মধ্যকা’র সম্পর্ক সুদৃঢ়
হয়েছে। এটা
সর্বজনবিদিত যে জাতি’র পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু’র ‘রহমান
আধুনিক তুর্কি রাষ্ট্রে’র প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কে’র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
রোহিঙ্গা
ইস্যুতে তু’রস্কে’র ভূমিকা তুলে ধরে এনায়েতউল্লাহ
খান বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তু’রস্কে’র প্রেসিডেন্ট এ’রদোয়ানে’র দৃঢ় ও ধারাবাহিক
অবস্থান প্রশংসনীয়। প্রেসিডেন্ট এ’রদোয়ানে’র নেতৃত্বাধীন ওআইসি’র সদস্য রাষ্ট্র গাম্বিয়া ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক
বিচা’র আদালতে মিয়ানমারে’র সেনাবাহিনী’র বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যা’র অভিযোগ
এনে বাংলাদেশে’র পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।
দুই
দেশে’র মধ্যকা’র সম্পর্ক জো’রদা’র করা’র জন্য রাষ্ট্রদূত তুরানে’র
প্রতিশ্রুতি ও নিষ্ঠায় মুগ্ধতা
প্রকাশ করে ড. ইফতেখা’র
আহমেদ চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রদূত
তুরানে’র প্রচেষ্টা নিশ্চিত ঢাকা-আঙ্কারা দ্বিপক্ষীয়
সম্পর্ককে আ’রও এগিয়ে নিয়ে
যাবে। তু’রস্ক
তাদে’র নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছে এবং প্রেসিডেন্ট এ’রদোয়ান
তাদে’র হৃদয়ে একটি ‘স্থায়ী আসন’ নিয়ে আছেন।
তিনি
বলেন, বাংলাদেশ ও তু’রস্কে’র মধ্যে
রাজনীতি, অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক যোগসূত্র, অভিন্ন মূল্যবোধ প্রভৃতি বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তৈরি’র উচ্চ সম্ভাবনা ‘রয়েছে।
ডি-৮ (উন্নয়নশীল-৮)
এ’র গুরুত্ব তুলে ধরে এই
প’ররাষ্ট্র বিষয়ক বিশ্লেষক ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই জোটটি’র যথাযথভাবে
ব্যবহা’র ও এ’র বিপুল
সম্ভাবনা’র কথা জানান।
বাংলাদেশ
ইনস্টিটিউট অফ পিস এন্ড
সিকিউরিটি স্টাডিজে’র সিনিয়’র ফেলো শাফকাত মুনী’র
দুই দেশে’র মধ্যকা’র সম্পর্ক জো’রদারে তু’রস্কে’র রাষ্ট্রদূত তুরানে’র ভূমিকা’র প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তা’র
(তুরানে’র) নেতৃত্বে বাংলাদেশে অবস্থিত তু’রস্কে’র দূতাবাস ঢাকা-আঙ্কারা সম্পর্ককে
আ’রও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া’র জন্য
অসাধা’রণ কাজ করেছে।
প্রতি’রক্ষা
সহযোগিতা
এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, প্রতি’রক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা
গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র। তু’রস্কে’র
দূতাবাস আঙ্কারা ও ঢাকা’র সম্পর্র্ককে
অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে।
শাফাকাত
মুনী’র আ’রও বলেন, ৭০
এ’র দশক থেকেই বাংলাদেশ
ও তু’রস্কে’র মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিনিময় হয়ে আসছে। তবে
আমরা প্রতি’রক্ষা ও প্রযুক্তি’র ক্ষেত্রে
দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা’র যে প্রেক্ষিত দেখছি,
নিঃসন্দেহে তা অতীতে’র যে
কোনও সময়ে’র চেয়ে অনেক এগিয়ে।
তিনি
বলেন, সম্প্রতি সামুদ্রিক যান অধিগ্রহণ বিষয়ে
যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা’র ভিত্তিতে বাংলাদেশ
ও তু’রস্কে’র মধ্যে আলোচনা
চলছে এবং দুই দেশে’র
মধ্যে বিমান বাহিনী’র সহযোগিতা বাড়ানো’র বিষয়েও কথা হচ্ছে।
অন্যদিকে,
রোহিঙ্গা সংকট পঞ্চম বছরে
পদার্পণ করা বিষয়ে তিনি
বলেন, এই সমস্যা’র শান্তিপূর্ণ
সমাধানে’র জন্য বাংলাদেশ গ্লোবাল
ফোরামে বা ওআইসি-তেও
আঙ্কারা’র অব্যাহত সহযোগিতা ও সমর্থন আশা
ক’রবে।
ড. লাইলুফা’র ইয়াসমিন বলেন, তু’রস্ক একটি কার্যক’র বৈদেশিক
নীতি গ্রহণ করেছে। কা’রণ এটি একটি মধ্যম
শক্তি বা আন্তমহাদেশীয়
দেশ। সুতরাং, আমরা বিশ্বাস করি
একটি মধ্যম শক্তি হিসেবে তু’রস্কে’র এই ভূ-রাজনৈতিক
পরিস্থিতি ও ভূ-রাজনৈতিক
অবস্থান; আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমাদে’র সক্রিয় ভূমিকা পালন ক’রতে সাহায্য
ক’রবে।
অন্যান্য
বক্তাদে’র কথা তুলে ধরে
তিনি আ’রও বলেন, বাংলাদেশ-
তু’রস্ক আন্তসম্পর্ক বর্তমানে’র চেয়ে কখনো বেশি
ভালো ছিল না।
তু’রস্ক
তা’র প’ররাষ্ট্রনীতি’র অংশ হিসাবে ‘এশিয়া
এ নিউ ইনিশিয়েটিভ’ গ্রহণ
করেছে এবং অগ্রাধিকারে’র ভিত্তিতে
এশিয়া’র সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হচ্ছে।
প্রযুক্তি
হস্তান্ত’র বা যৌথ উদ্যোগে’র
বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে
তিনি বলেন, এগুলো থেকে বাংলাদেশে’র প্রতি’রক্ষা
খাতও উপকৃত হতে পারে।
রাষ্ট্রদূত
তারিক করিম তুর্কি রাষ্ট্রদূতে’র
সঙ্গে সম্মতি জানিয়ে বলেন, আমি তা’র বক্তব্যে’র
সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমি ইতোমধ্যে দেশটি
থেকে প্রচু’র সহযোগিতা পাওয়া’র সম্ভাবনা দেখছি।
মধ্য
শক্তি
সাবেক
কূটনীতিক তারিক করিম বলেন, এটি
একটি মধ্যম শক্তি বা একটি সেতু।
যা পূর্ব ও পশ্চিমে’র মধ্যে
সেতুবন্ধনে ভূমিকা রাখে। এবং আমরা (বাংলাদেশ)
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া’র
মধ্যে একটি সেতু’র ভূমিকা
রাখি। এ ক্ষেত্রে আমাদে’র
দুই দেশে’র একই ধ’রনে’র ভূমিকা
পালন ক’রতে হয়।
করোনা’র
ভ্যাকসিন বিনিময় এবং ভ্যাকসিন উন্নয়নে’র
বিষয়ে তারিক করিম বলেন, এ
বিষয়ে দুই দেশ একসঙ্গে
কাজ ক’রতে পারে।
সাবেক
এই কূটনীতিক বলেন, প্রেসিডেন্ট এ’রদোয়ান জাতিসংঘে এক বার্তায় জানিয়েছেন,
তু’রস্ক মহামারি ও ভ্যাকসিন সংক্রান্ত
গবেষণা ক’রছে। গবেষণা’র কাজ শেষ হলে
তিনি নিজেই বিশ্ববাসীকে এ বিষয়ে বিস্তারিত
জানাবেন।
রোহিঙ্গা
ইস্যুতে তু’রস্কে’র রাষ্ট্রদূত তুরান বলেন, তু’রস্ক নিজেও শ’রণার্থীদে’র জন্য তাদে’র দ’রজা
খুলে দিয়েছে এবং বর্তমানে তু’রস্কে
৪০ লাখে’রও বেশি শ’রণার্থী আশ্রয়
নিয়েছে।
তিনি
বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিক
একই কাজ করে 'মাদা’র
অব হিউম্যানিটি' খেতাব অর্জন করেছেন। নিজ দেশে’র সেনাবাহিনী’র
নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড থেকে
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদে’র জন্য
বাংলাদেশ নিজে’র সীমান্ত খুলে দিয়ে, অনেকগুলো
নির্যাতিত মানুষকে বাঁচা’র সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, তারা বর্তমানে ‘তুর্কিভ্যাক’ নামে তাদে’র নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি ক’রছে। এটি তৈরি হলে অবশ্যই বিশ্বজুড়ে তাদে’র অংশীদা’রদে’র সঙ্গে সেই প্রযুক্তি বিনিময় ক’রবে তু’রস্ক। কা’রণ তারা মানবতা’র সেবা ক’রতে এবং ভ্যাকসিনকে বিশ্ববাসী’র কল্যাণে’র হাতিয়া’র হিসাবে ব্যবহা’র ক’রতে চায়। আ’র এই বৈশ্বিক কল্যাণে তাদে’র সঙ্গে যোগ দিতে বিশ্বে’র অনেক নেতাকে আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।