ক্যাটওমেন বা বিড়াল নারী: কমিকসের প্রথম নারী সুপারভিলেন
🕧Published on:
সেবা ডেস্ক: সেলিনা কাইল নামে’র আকর্ষণীয় চেহারা’র সেই মেয়েটি’র জন্ম গোথামে’র জীর্ণশীর্ণ এলাকায় বসবাস’রত এক দরিদ্র পরিবারে। তা’র মায়ে’র নাম মারিয়া এবং বাবা’র নাম ব্রায়ান।
ম্যাগি নামে’র ছোট এক বোন ছিল তা’র। শত দরিদ্রতা’র মাঝে বড় হতে থাকে দুই বোন। দুজনে’র একজনও ঠিকমতো পায়নি বাবা’র স্নেহ, মায়ে’র মমতা। মেয়েদে’র রেখে নিজে’র পোষা বিড়ালদে’র নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতো তাদে’র মা। অত্যাচারি বাবা’র প্রধান কাজ ছিল মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে থাকা আ’র স্ত্রী’র সাথে ঝগড়া করা। পারিবারিক সহিংসতা এড়াতে তাই স্কুল ছুটি’র প’র অধিকাংশ সময় জিমনেশিয়ামে কাটাতো সে।
একদিন
স্কুল থেকে ফেরা’র প’র
মাকে ডাকছিল সেলিনা, বেশ ক’বা’র
ডাকাডাকি করা’র প’র তা’র সাড়া
না পেয়ে সে উদ্বিগ্ন
হয়ে গেলো। এমনটা তো হওয়া’র কথা
না। হঠাৎ সে বাথরুম
থেকে ‘রক্তে’র ধারা আসতে দেখে
সেদিকে এগিয়ে গেলো। এ’রপ’র দ’রজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ
ক’রতেই ভয়ে চিৎকা’র করে
উঠলো সেলিনা। বাথরুমে বাথটাবে’র উপ’রই পড়ে আছে তা’র
মায়ে’র লাশ। আ’র লাশে’র
ডান হাতে’র কাটা শিরা দিয়ে
গলগল করে বেরিয়ে আসছে
তাজা ‘রক্ত। মায়ে’র মৃত্যু’র প’রই তা’র জীবনে
আসে অমূল পরিবর্তন। এদিকে
স্ত্রী’র মৃত্যু’র প’র নিজে’র উপ’র
আ’রও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ব্রায়ান। সেলিনা
দেখতে অনেকটা তা’র স্ত্রী’র মতো
ছিল বলে তাকেও সে
ঘৃণা ক’রতে শুরু করে। দিন
দিন তা’র মদ্যপানে’র পরিমাণ
বাড়তে থাকে। অবশেষে অ্যালকোহলে’র বিষক্রিয়ায় ম’রণ হয় তা’রও।
বিছানায় মৃত বাবাকে পড়ে
থাকতে দেখে পুলিশকে ফোন
করে সেলিনা। কথা বলা শেষ
করে একটা ব্যাগে নিজে’র
দ’রকারি জিনিসপত্র বাড়ি থেকে পালিয়ে
যায় সে এবং তা’র
বোনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অনাথাশ্রমে।
গোথামে’র
রাস্তা’র রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো’র জীবন
শুরু হয় সেলিনা’র। পেটে’র
দায়ে বিভিন্ন মুদি দোকানে খাবা’র
চুরি ক’রতে শুরু করে সে।
কয়েকদিন যেতে না যেতেই
এক দোকানে চুরি করা’র সময়
ধরা পরে গেলে তাকেও
পাঠিয়ে দেয়া হয় সেই
অনাথাশ্রমে। সেখানেও নানা’রকমে’র ঝামেলা বাধানো’র কা’রণে শেষমেশ তাকে পাঠিয়ে দেওয়া
হয় জুভেনাইল হলে (শিশু-কিশো’রদে’র
জন্য তৈরি বিশেষ বন্দিশালা)। তা’র বয়স
১৩ বছ’র পূর্ণ হবা’র
প’র তাকে আবা’র অনাথাশ্রমে
ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে পৌঁছা’র কিছুদিন প’র সে বুঝতে
পারে যে, লোকচক্ষু’র আড়ালে
আশ্রমে’র নিয়ন্ত্রকরা টাকা আত্মসাৎ করে
নিজেদে’র পকেট ভারী ক’রছে।
তাদে’র কার্যকলাপ লুকিয়ে লুকিয়ে পর্যবেক্ষণ ক’রতে গিয়ে একদিন ধরা
পড়ে যায় সেলিনা। তাকে
বস্তা’র মধ্যে ভরে গুণ্ডা দিয়ে
নদীতে ফেলে দিয়ে আসা
হয়। বহু কষ্টে সেই
বস্তা’র ভেত’র থেকে নিজেকে মুক্ত
করে আবা’রও আশ্রমে ফিরে এসে সেখানে
লুকিয়ে থাকে সে। সুযোগ
বুঝে একদিন রাতে’র অন্ধকারে আশ্রমে’র অফিসে ঢুকে তাদে’র টাকা
আত্মসাতে’র বেশ কিছু তথ্য
জোগাড় করে সেলিনা এবং
সেগুলো পুলিশে’র কাছে ফাঁস করে
দেয়।
বয়স
হবা’র প’র দারিদ্র্যে’র অভিশাপে
সেলিনা শেষমেশ পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে
নেয়। খদ্দে’রদে’র চাহিদা পূ’রণে’র ফাঁকে ফাঁকে চালাক সেলিনা হাতিয়ে নিতো মূল্যবান অলঙ্কারাদি,
দামী ঘড়ি কিংবা টাকা
পয়সা। দিন দিন তা’র
চৌর্যবৃত্তি’র পরিধি বাড়তে শুরু করে। একসময়
সে বিভিন্ন জাদুঘ’র ও ধনী ব্যক্তিবর্গে’র
বাসাবাড়ি থেকে গয়না এবং
হীরা চুরি ক’রতে শুরু
করে। এভাবেই চলে যাচ্ছিল তা’র
জীবন। একদিন এক জাদুঘ’র থেকে
মহামূল্যবান টোট্যাম চুরি করে পালানো’র
সময় হঠাৎ এক নিনজা
এসে তা’র চুরি করা
টোট্যামটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সেলিনা
সেই নিনজাকে অনুস’রণ করে এক ওয়্যা’রহাউজে
গিয়ে পৌঁছায়। ভেতরে প্রবেশ করে দেখে, ওয়্যা’রহাউজটি
আসলে একটি মার্শাল আর্ট
একাডেমি। তাকে ঢুকতে দেখে
কাই নামে’র সেই নিনজাটি সেখানকা’র
মার্শাল আর্ট শিক্ষককে (সেন্সেই)
বলে যে, অনুপ্রবেশকারী এই
মেয়েটি একটি চো’র এবং
তা’র গুরুত’র শাস্তি হওয়া উচিৎ।
সেলিনাকে
দেখে প্রথম ঝলকেই মুগ্ধ হয়ে যান সেন্সেই।
তিনি সেলিনা’র কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ
ক’রলেন তা’র একাডেমিতে যোগদানে’র
জন্য। তিনি তাকে মার্শাল
আর্টে’র সব জটিল নিয়ম
কানুন শিক্ষা দেওয়া’র প্রতিশ্রুতি দেন। সেলিনা এই
প্রস্তাবে অভিভূত হয়ে গেলো। সে
সাথে সাথেই সেন্সেইয়ে’র প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। নতুন করে শুরু
হয় সেলিনা’র পথচলা। তবে খুব দ্রুত
নতুন কায়দা’র সাথে নিজেকে মানিয়ে
নেয় সেলিনা। তা’র অগ্রগতি দেখে
সেন্সেই নিজেই অভিভূত হয়ে যান। কিন্তু
বাধ সাধে কাই, তা’র
সাথে সম্পর্ক দিন দিন খারাপ
হতে থাকে সেলিনা’র। কাই
তাকে সবসময় ঘৃণা’র দৃষ্টিতে দেখতো এবং প্রশিক্ষণে’র সময়
ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে আঘাত ক’রতো।
তা’র শত অবহেলা আ’র
ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও, ধীরে ধীরে সেলিনা
হয়ে ওঠে সেন্সেইয়ে’র সবচেয়ে
পছন্দে’র ছাত্রী।
একরাতে
টেলিভিশনে একটি খব’র প্রকাশিত
হয় যে, ব্যাটম্যান ‘রবিনসন
পার্কে গেছে। কৌতুহলবশত সেলিনা সেই পার্কে চলে
যায় এবং একঝলকে’র জন্যে
ডার্ক নাইট তা’র নজরে
আসে, প’রমুহূর্তেই কোথায় যেন মিলিয়ে যায়।
কিন্তু সেই এক ঝলকই
ছিল তা’র জন্যে যথেষ্ট।
ব্যাটম্যানকে দেখা মাত্রই তা’র
বুক ধক করে উঠে।
নতুন এক ভাবনা খেলে
যায় তা’র মাথায়। সে
চিন্তা করে দেখে, ব্যাটম্যান
যদি এমন বেশ ধরে
একই সাথে মানুষে’র আনন্দে’র
এবং ভয়ে’র কা’রণ হতে পারে, তাহলে
সে পা’রবে না কেন? যে-ই ভাবা, সেই
কাজ; ব্যাটম্যানে’র মতো করে সে-ও কোনো এক
চরিত্র ধা’রণ ক’রতে সিদ্ধান্ত নেয়। মায়ে’র বিড়ালপ্রীতি’র
কথা মাথায় রেখেই হয়তো সেলিনা তা’র
জমানো সব অর্থ ব্যয়
করে নিজে’র জন্যে একটি বিড়াল সদৃশ
পোশাক তৈরি করে এবং
কাজ হিসেবে চুরিবিদ্যাকে পুনরায় গ্রহণ করে নেয়।
একবা’র
স্থানীয় এক জুয়েলারি দোকানে
ডাকাতি ক’রতে গেলে একদল নিরাপত্তা
কর্মী তাকে আটক করে
এবং তাদে’র মাঝে একজন তাকে
‘ক্যাটওমেন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। নামটি তা’র
ভীষণ পছন্দ হয়, সেদিনই যেন
জন্ম হয় ক্যাটওমেনে’র। ব্যাটম্যানে’র
প্রতি আকর্ষণ বাড়তে থাকে তা’র। ঐদিকে
চুরি’র অপরাধে তা’র পেছনে লাগে
ব্যাটম্যানও। বেশ কয়বা’র সংঘর্ষে’র
ফলে তাদে’র পরিচয় হয়। প’রস্পরে’র প্রেমে
পড়ে যায় তারা। তবে
দুজন দুজনকে প্রচণ্ড ভালবাসলেও তাদে’র মধ্যকা’র দ্বন্দ্ব ও নীতিগত পার্থক্যে’র
কা’রণে তা’র কখনো এক
হতে পারেনি।
কমিকসবুকে’র
ইতিহাসে’র সর্বপ্রথম নারী সুপা’রভিলেন হিসেবে
ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করে নেওয়া এই
ক্যাটওমেনকে প্রথমবারে’র মতো কমিকস জগতে
নিয়ে আসা হয়েছিল সেই
১৯৪০ সালে। ডিটেকটিভ সিরিজ থেকে আলাদা করে
বে’র করা’র ব্যাটম্যান একক সিরিজে’র প্রথম
ইস্যুতে দেখা মেলে ক্যাটওমেনে’র।
তা’র সৃষ্টি’র পেছনে অবদান রেখেছেন ব্যাটম্যানে’র দুই স্রষ্টা বিল
ফিঙ্গা’র এবং বব কেইন।
কমিকস বইয়ে’র কোনো নারী চরিত্রে’র
সহিষ্ণুতা’র বিকাশ ঘটানো ছিল কমিকস কোড
কর্তৃপক্ষে’র আচ’রণ বিধি’র পরিপন্থি, তাই প্রথমদিকে ‘ক্যাট’
হিসেবে তাকে পরিচয় করিয়ে
দেওয়া হয়। পরে ১৯৫৪
সালে কমিকস কোড কর্তৃপক্ষ তাদে’র
সেই নিয়ম তুলে নিলে
ক্যাটকে পাঠকদে’র কাছে ‘ক্যাটওমেন’ হিসেবে নতুন করে পরিচয়
করিয়ে দেওয়া হয়।
ক্যাটওম্যান
এবং জোকা’র এই দুজনেই ছিল
ব্যাটম্যান সিরিজে’র প্রথম দুই ভিলেন। শুরু’র
দিকে তাকে সুপা’রভিলেন হিসেবে
তুলে ধরা, প’রবর্তীতে তাকে
খানিকটা এন্টিহিরো ভাব নিয়ে আসা
হয় তা’র চরিত্রে। তাছাড়া
সময়ে’র সাথে সাথে ডিসি
কমিকস তাদে’র সিরিজগুলো কিছুটা পরিবর্তন ও পরিমার্জিত করে
প্রকাশ করা’র কা’রণে কমিকস চরিত্রগুলোতেও দেখা যায় লক্ষ্যণীয়
পরিবর্তন। সেই সব একটু
খতিয়ে দেখলে তাকে সরাসরি ব্যাটম্যানে’র
শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে না।
কেননা, গল্পে’র খাতিরে প্রায়ই তাকে দেখা গেছে
ব্যাটম্যানে’র প্রেমিকা এবং বড় দুর্বলতা’র
একটি হিসেবে।
কমিকস
বই এবং অ্যানিমেশন সিনেমা
বাদেও মোশন ছবিতে ক্যাটওমেন
হিসেবে হাজি’র হওয়া’র সৌভাগ্য হয়েছে বেশ কয়েকজন অভিনেত্রী’র।
তবে সবাই যে সফল
হয়েছেন তা না। ষাটে’র
দশকে টিভিতে প্রচারিত ব্যাটম্যান টিভি সিরিজে এই
চরিত্রে অভিনয় করেন তিনজন অভিনেত্রী,
জুলি নিউমা’র, লি মেরিওয়েদা’র এবং
এর্থা কিট। তাদে’র অসাধা’রণ
পা’রফর্মেন্সে’র কা’রণেই সেলুলয়েডে’র পর্দায় ক্যাটওমেনে’র জনপ্রিয়তা’র সূচনা হয়। পরে ১৯৯২
সালে নির্মিত ‘ব্যাটম্যান রিটার্নস’ সিনেমায় ক্যাটওমেন চরিত্রে মিশেল ফাইফারে’র দুর্দান্ত অভিনয় সেই জনপ্রিয়তা আ’রও
বাড়িয়ে দেয়।
তবে সেই জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ক্যাটওম্যান’-এ’র কা’রণে। হ্যালি ব্যারি অভিনীত সেই সিনেমাটি দর্শক কিংবা সমালোচক কারো’রই মন জয় ক’রতে পারেনি। এমনকি ১০০ মিলিয়ন ডলা’র বাজেটে’র সেই সিনেমা বক্স অফিসেও তেমন সুবিধা ক’রতে পারেনি। প’রবর্তীতে ২০১২ সালে অ্যানা হ্যাথওয়ে ক্যাটওমেনে’র ক্ষুণ্ণ হওয়া সেই জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধা’র করেন। বর্তমানে টিভিতে প্রচারিত গোথাম সিরিজে ক্যাটওম্যান হিসেবে আছেন ১৮ বছ’র বয়সী অভিনেত্রী ক্যামরেন বিকনডোভা।
0comments
মন্তব্য করুন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।