মাদকের ব্যবহার কমাতে দেশে মদ-গাঁজায় ছাড় দেয়ার আলোচনা
🕧Published on:
সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশে ইয়াবা, এলএসডি, আইস, ফেন্সিডিল, হিরোইনে’র মতো মাদকে’র হাত থেকে দেশের তরুণ ও যুবকদে’র মনোযোগ সরাতে মদ ও গাঁজায় ছাড় দিতে আলোচনা করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
তাদে’র
দাবি, অ্যালকোহলে’র ওপ’র কিছুটা ছাড়
দিলে মাদক সেবন কমতে
পারে। একই সঙ্গে গাঁজা
সম্পর্কেও আ’রও চিন্তাভাবনা করা
উচিত বলে মত উঠে
এসেছে এই আলোচনায়।
সম্প্রতি
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি’র এক বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা
‘রক্ষাকারী বাহিনী’র শীর্ষ কর্মকর্তারা এসব কথা বলেছেন।
এ’র
আগে ৭ নভেম্ব’র সংসদীয়
কমিটি’র বৈঠকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হয়।
বৃহস্পতিবা’র সংসদীয় কমিটি’র বৈঠকে ওই আলোচনা’র কার্যবিব’রণী
অনুমোদন হয়।
দেশে
অ্যালকোহল আমদানি’র শুল্ক ৬০০ শতাংশ। ফলে
বিদেশি মদ আনতে দেশে’র
ক্লাবগুলো’র আমদানি’র লাইসেন্স থাকলেও তারা সেটি না
করে চোরাই পথে আসা মদ
বিক্রি করে।
তবে
ওই বৈঠকে মদ উন্মুক্ত করা
বা এ বিষয়ে ছাড়
দেয়া’র কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সংসদীয়
কমিটি বলেছে, অ্যালকোহল উন্মুক্ত করা’র বিষয়টি খুবই স্পর্শকাত’র। অ্যালকোহল
আমদানিতে ক’র কমানো’র বিষয়ে
বিশেষজ্ঞ মত নেয়া যেতে
পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খান বৈঠকে জানিয়েছিলেন,
এলএসডি, ইয়াবা, হেরোইনে’র মতো ক্ষতিক’র মাদক
থেকে যুবসমাজকে সরানো’র উপায় খুঁজে বে’র
করা’র বিকল্প কী আছে, সেটি
নিয়ে স’রকা’র কাজ ক’রছে।
ওই বৈঠকে’র কার্যবিব’রণী থেকে জানা যায়,
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে’র নিরাপত্তা বিভাগে’র জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফা কামাল
উদ্দীন বলেন, ‘ড্রাগ এবং অ্যালকোহল দুটি
ভিন্ন জিনিস। অ্যালকোহলে’র প্রতি কিছুটা ছাড় দিলে ড্রাগ
সেবন কিছুটা কমতে পারে। এ
বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত ও নির্দেশনা প্রয়োজন।’
পুলিশে’র
মহাপরিদর্শক বেনজী’র আহমেদ বলেন, ‘দেশে অ্যালকোহলে’র ওপ’র
৬০০ শতাংশ ক’র নির্ধা’রণ করা
আছে। দেশে’র সব ক্লাবে অ্যালকোহলে’র
লাইসেন্স আছে। কিন্তু তারা
কেউ আমদানি করে না। কা’রণ,
ট্যাক্স দিতে হয় বেশি।
ক্লাবগুলো বেআইনিভাবে চোরাই পথে আসা মদ
বিক্রি করে, যা’র কা’রণে
দাম কম, ক্রেতা বেশি।
এতে করে স’রকা’র প্রতি
বছ’র হাজা’র হাজা’র কোটি টাকা’র ট্যাক্স
থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাহলে মদ আমদানি’র ওপ’র
ট্যাক্স বৃদ্ধি করে কী লাভ
হলো?’
ট্যাক্স
কমিয়ে দিলে অথবা মদ
উন্মুক্ত করে দিলে ইসলামপন্থি
বিভিন্ন দল আন্দোলনে নেমে
যাবে বলেও মন্তব্য করেন
পুলিশ প্রধান।
বৈঠকে
বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজ’র জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম
বলেন, ‘মাদক নির্মূল ক’রতে
হলে কিছু নীতি পরিবর্তন
ক’রতে হবে। চোরাই পথে
আসা মদ ও বিয়া’র
ঢাকা’র সব ক্লাবে বিক্রি
হয়। ক্লাবগুলো’র বৈধ লাইসেন্স ‘রয়েছে
আমদানি ও বিক্রি’র।’
তিনি
বলেন, ‘ট্যাক্স দিয়ে কেউ আমদানি
করে না। মুসলিম দেশ
হিসেবে উন্মুক্তভাবে না হলেও কিছু
ক্ষেত্রে ছাড় দিলে যুবসমাজে’র
মাদকাসক্তি কমিয়ে আনা যাবে।’
বিজিবি
মহাপরিচালক বলেন, ‘ফেনসিডিল, ইয়াবা বন্ধে সীমান্ত এলাকায় অনেক পরিকল্পনা হাতে
নেয়া হয়েছে। এ’রপরেও ঠেকানো যাচ্ছে না। এ কা’রণে
নতুন পরিকল্পনা নেয়া উচিত।’
সংসদীয়
কমিটি’র ওই বৈঠকে র্যাবে’র মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন,
‘আমেরিকা ও কানাডা গাঁজা
উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাংলাদেশে’র
মাদক কখনও বন্ধ করা
যাবে না। তবে হয়তো
কিছুদিনে’র জন্য কমিয়ে আনা
যেতে পারে। কা’রণ মাদকে’র বিকল্প কিছু একটা সামনে
নিয়ে আসতে হবে। তাই
অ্যালকোহল, মদ, গাঁজা এগুলো
সম্পর্কে আ’রও চিন্তাভাবনা করা
উচিত।’
ওই বৈঠকে কমিটি’র সদস্য জাতীয় পার্টি’র সাংসদ পী’র ফজলু’র ‘রহমান
বলেন, ‘মদ, বিয়া’র বা
অ্যালকোহলে’র ওপ’র ট্যাক্স কমিয়ে
দিয়ে যদি রাজস্ব বৃদ্ধি
পায়, তাহলে তাই করা উচিত।
ড্রাগ অর্থাৎ আইস, ইয়াবা, এলএসডি
এগুলো ভয়াবহ ক্ষতিক’র মাদক। কোনো মাদকে অ্যালকোহলে’র
পরিমাণ পাঁচ শতাংশে’র নিচে
থাকলে তা স’রকারিভাবে বৈধ
করা আছে। মদ, বিয়া’র
ইত্যাদিতে যদি পাঁচ শতাংশে’র
নিচে অ্যালকোহল থাকে, তাহলে এগুলো বৈধ ঘোষণা করে
দেওয়া উচিত। গিয়া’র নামে ড্রিংকস চা’র
দশমিক নয় শতাংশ দিয়ে
বাজা’রজাত করা হচ্ছে।’
যুবসমাজকে
মাদকে’র নেশা থেকে বাঁচাতে
এসব বিবেচনা করা’র জন্য স’রকারে’র কাছে
তিনি অনুরোধ করেন।
সং’রক্ষিত
আসনে’র বেগম রুমানা আলী
বলেন, ‘যেসব মাদক হালকা
ক্ষতিক’র, সেগুলো ব্যবহা’র উন্মুক্ত করা যেতে পারে।
যেগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহা’র ক’রলে ক্ষতি হয়, সেগুলোকে অনুমোদন
দেওয়া উচিত নয়।’
কর্মকর্তাদে’র
বক্তব্যে’র পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বৈঠকে বলেন,
‘যুবসমাজকে মাদক থেকে সরিয়ে
আনতে বিকল্প ব্যবস্থা অবশ্যই দ’রকা’র। তবে আমাদে’র বুঝতে
হবে ক্ষতিক’র ড্রাগ কোনটা? এলএসডি, ইয়াবা, হেরোইন এগুলো ক্ষতিক’র বিধায় যারা সেবন করে,
তাদে’র ব্রেন ও লিভা’র দুই
বছরে’র মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।
‘তাই
এগুলো থেকে যুবসমাজকে সরানো’র
উপায় খুঁজে বে’র করা’র বিকল্প
কী আছে, তা নিয়েও
স’রকা’র কাজ ক’রছে। যমুনা
গ্রুপে’র হান্টা’র ড্রিংকস ৪ দশমিক ৯৯
শতাংশ ঘোষণা দিয়ে পণ্য বাজা’রজাত
ক’রছে। সব বিষয়ে’র ওপ’র
স’রকা’র সার্বিক বিবেচনা করেই পদক্ষেপ নেবে।’
ওই আলোচনা’র শেষ পর্যায়ে স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি’র সভাপতি শামসুল হক বলেন, ‘অ্যালকোহল
সেবন উন্মুক্ত করা’র বিষয়টি খুবই স্পর্শকাত’র। অ্যালকোহল
আমদানিতে ট্যাক্স কমানো’র বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মত নেয়া যায়।
একই সঙ্গে চোরাইপথে বা অবৈধ পথে
আমদানি হলে লাইসেন্স বাতিলসহ
আমদানিকা’রকদে’র বিরুদ্ধে কঠো’র ব্যবস্থা গ্রহণ করা দ’রকা’র।’
তিনি
বলেন, ‘অ্যালকোহল কী পরিমাণ মাত্রায়
সেবন করা যায়, তা’র
জন্য বিভিন্ন নীতিনির্ধা’রক ও বিশেষজ্ঞ ‘রয়েছে।
ড্রাগ অর্থাৎ মাদক বলতে যেটা
বোঝাচ্ছে সেটা’র কা’রণে দেশে’র তরুণসমাজ ধ্বংস হচ্ছে। যেসব মাদক সেবন
ক’রলে যুবসমাজ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে যেমন
ইয়াবা, এলএসডি, আইস, হেরোইন ইত্যাদি
বন্ধ করা’র জন্য কঠো’র হতে
হবে। তরুণসমাজকে ‘রক্ষা করা’র জন্য মাদকে’র বিরুদ্ধে
জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকতে
হবে।’
শামসুল
হক আ’রও বলেন, ‘পুলিশে’র
হাতে ইয়াবা ধরা পড়লে বিজিবি’র
ওপ’র কিছুটা হলেও দায় এসে
যায়। হয়তো কিছু চেকপয়েন্টে
আ’রও সতর্ক হওয়া দ’রকা’র ছিল।
তেমনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আ’রও তৎপ’র থাকলে
ইয়াবা’র প্রবেশ ঠেকানো যেত। সবগুলো সংস্থাকে
সমন্বিতভাবে কাজ ক’রতে হবে।
মাদকে’র অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পা’রলে দায়
সবা’র।
0comments
মন্তব্য করুন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।