সেবা ডেস্ক: মাল্টিমিডিয়া প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি’র ব্যবহা’র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষকদেন পাঠদান পদ্ধতিকে সহজত’র করেছে। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এসব প্রশিক্ষণে’র মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অন্য সব শিক্ষার্থীদে’রই শিক্ষা দিতে পারেন।
জন্মগতভাবে
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষক উম্মে তানজিলা চৌধুরী মুনিয়া চট্টগ্রাম জেলা’র পটিয়া উপজেলা’র মোহসেনা মডেল স’রকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে’র শিক্ষক। ২০১৩ সালে সহকারী
শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
সেসময় শিক্ষার্থীদে’র পাঠদান ক’রতে গিয়ে অনেক বাধা’র
মুখোমুখি হন।
তবে ডিজিটাল কনটেন্ট
ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং প্রোগ্রাম তা’র পেশায় আলোকবর্তিকা
হয়ে এসেছে। ‘স্ক্রিন রিডা’র’ নামক একটি সফ্টওয়্যা’র
অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহা’র করে তিনি নিজেই
এখন বিভিন্ন বিষয়বস্তু তৈরি করেন। স্ক্রিন
রিডা’র এক ধ’রনে’র সহায়ক
প্রযুক্তি। যা’র মাধ্যমে তিনি
লেখা এবং ছবি’র বিষয়বস্তুকে
মুখে বলে এবং ব্রেইলে
রূপান্ত’র করে তা’র ছাত্রদে’র
সামনে উপস্থাপন করেন।
‘আমি
মাল্টিমিডিয়া’র সাহায্যে ক্লাসে আমা’র বাচ্চাদে’র পাঠকে আরো আকর্ষণীয় করে
তুলেছি। অনেক বাধা পেরিয়ে
এসে আমি এখন দৃষ্টি
প্রতিবন্ধী এবং অপ্রতিবন্ধী উভয়
ধ’রনে’র শিক্ষার্থীদে’র শিক্ষা’র আলো ছড়িয়ে দিতে
পা’রছি।’
‘চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্ত’র ডিগ্রি
অর্জনকারী মুনিয়া আরো বলেন, আমি
সবসময় সমস্যাগুলো খুঁজে বে’র করা’র চেষ্টা
করি। যাতে বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদে’র
কাছে আরো সহজ হয়ে
ওঠে। আমি কম্পিউটা’র বা
সংগীত সম্পর্কে যা জানি তাও
তাদে’র মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া’র চেষ্টা করি।’
ডেইজি
মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক এবং
তথ্য-প্রযুক্তি (আইটি) বিষয়ে তা’র প্রশিক্ষণকে কাজে
লাগিয়ে মুনিয়া শিক্ষার্থীদে’র শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
মুনিয়া
জানান, তিনি শিক্ষার্থীদে’র জন্য
পড়া সহজ করা’র লক্ষ্যে
অনেকগুলো বিষয়বস্তু তৈরি করেছেন এবং
তা’র তৈরিকৃত দশটি’রও বেশি ডিজিটাল বিষয়বস্তু
শিক্ষক বাতায়নে আপলোড করা হয়েছে। (শিক্ষক
পোর্টাল-www.teachers.gov.bd
একটি প্ল্যাটফর্ম যা পেশাদারী দক্ষতা
বিকাশে’র মাধ্যমে শিক্ষকদে’র ক্ষমতায়নে’র জন্য তৈরি করা
হয়েছে)।
তিনি
বলেন, আমরা যখন বিশেষায়িত
স্কুলে পড়তাম, তখন আমাদে’র ব্রেইল
বইয়ে’র জন্য অনেক দিন
অপেক্ষা ক’রতে হতো। মাসে’র প’র
মাস চলে যেত, কিন্তু
ব্রেইল বই পেতাম না।
এই বইগুলো কখন হবে আ’র
কখন আমরা পড়ব? তাই
আমরা সবসময় সাধা’রণ ছাত্রদে’র পিছনে পড়ে যেতাম। তবে
এখন বিভিন্ন ডিজিটাল বিষয়বস্তু’র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদে’র এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
মুনিয়া
এবং তা’র তিন বোন
জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মেয়েদে’র লেখাপড়া
করানো’র জন্য তাদে’র বাবা-মা গ্রাম থেকে
শহরে চলে আসেন। এখন
তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং
শিক্ষকতা পেশায় যোগদানে’র মাধ্যমে তারা দেশে’র শিক্ষাক্ষেত্রে
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
মুনিয়া
তা’র তিন বোনকে তথ্য-প্রযুক্তিগত শিক্ষা গ্রহণেও সহায়তা করেন। তারাও ‘টিচার্স কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পে’র অধীনে কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এটুআই এবং মাধ্যমিক ও
উচ্চশিক্ষা অধিদফত’র যৌথভাবে ২০১৬ সালে রাজধানী’র
টিচার্স ট্রেনিং কলেজে (টিটিসি) এ প্রশিক্ষণ আয়োজন
করে।
‘ডিজিটাল
বাংলাদেশ’ এজেন্ডা অর্জনে’র লক্ষ্যমাত্রা’র অংশ হিসেবে এটুআই
ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি’র আয়োজন ক’রছে। এটুআই দেশে’র মধ্যে সত্যিকারে’র সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো উন্মোচন করা’র লক্ষ্যে কাজ ক’রছে, যা
নাগরিকদে’র জীবনকে আরো সহজ ও
উন্নত ক’রতে পারে।
মুনিয়া
বলেন, আমি সারাজীবন অন্ধকারে’র
সঙ্গে লড়াই করেছি। তবে
শিক্ষা’র জন্য আমা’র উদ্যোগকে
কেউ থামাতে পারেনি।
এটুআই’’র ‘লিডা’রশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৬’ এবং ‘অনন্যা শীর্ষ
দশ ২০১৫’ বিজয়ী মুনিয়া’র সাফল্যে এটাই প্রতিফলিত হয়
যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজে’র বোঝা নয়, বরং
যথাযথ সুযোগ সুবিধা পেলে তারাও সমাজে
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
এটুআই
এ’র প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ
হুমায়ুন কবি’র বলেন, এ দেশে বিপুল
সংখ্যক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ ‘রয়েছে, যাদে’র অনেকেই এখন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
অধ্যয়ন ক’রছে।
তিনি
আরো বলেন, বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদে’র জন্য উপযুক্ত অধ্যয়নে’র
উপক’রণ না থাকায় তাদে’র
জন্য তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান ও উন্নতত’র শিক্ষা
অর্জন করা খুবই কঠিন।
এখানে একটি সফটওয়্যা’র অ্যাপ্লিকেশনে
কণ্ঠ সংশ্লেষণে’র মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদে’র কম্পিউটারে’র স্ক্রিনে পড়তে দেয়া হয়।
এতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদে’র কিছুটা অসুবিধা হয়।
হুমায়ুন কবি’র বলেন, ব্রেইল বইয়ে’র অবদান অতুলনীয়, কিন্তু পুরোপুরি ব্রেইলে’র উপ’র নির্ভ’রশীল হলে শিক্ষার্থীরা উচ্চা’রণ সমস্যা’রও সম্মুখীন হতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদে’র কাছে অধ্যয়নে’র উপক’রণগুলোকে একটি আকর্ষণীয় উপায়ে উপস্থাপন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা শিক্ষাকে এক ঘেয়ে করে তুলবে না।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।