আশরাফুল ইসলাম গাইবান্ধা : গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস পুরোটাই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবে রেখেছেন দলিল লেখক সমিতি নামে সংগঠনটি এমন অভিযোগ উপজেলার সর্বত্র।
এ সমিতির কর্তা থেকে কর্মচারী এমনকি সদস্য মহুরি (দলিল লেখকগণ) সবারই পকেট ভারীর হয় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে।
বিগত সময় হতে ভুয়া দলিলে প্রকৃত উত্তারাধিকারীরা নিঃস্ব হয়ে আদালতে ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছেন, চলমান রয়েছে এরকম একাধিক মামলা মোক্কাদমা।
আবার ভুয়া দাতা-সনাক্তকারী-দলিল লেখককে আটকের পরও অদৃশ্য কারণে ছাড় পাচ্ছেন।
চালিয়ে যাচ্ছেন পলাশবাড়ী দলিল লেখক সমিতিতে দলিল সম্পাদনের কার্যক্রম।
দলিল সম্পাদনের কার্যক্রম বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকার পরেও রয়েছেন পলাশবাড়ী দলিল লেখক সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক পদে। অন্য দলিল লেখকের নামে চালিয়ে যাচ্ছেন দলিল সম্পাদনের কাজ কর্ম।
তিনি পলাশবাড়ী পৌর এলাকার মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিক বাদশার পুত্র আ. কাফী সরকার যাহার দলিল লেখক হিসাবে সনদ নম্বর (২০/০৬)।যিনি গত ২০ জুন ২০২১ সালে গোবিন্দগঞ্জ সাব রেজ্রিস্ট্রি অফিসে মৃত ব্যক্তিকে দাতা দেখিয়ে দলিল নম্বর ৭৪৬৪/২০২১ মূলে হেবার ঘোষণাপত্র সম্পাদন করেন।
তার দাপটে ও বেপরোয়া চলাচলে দলিল লেখকগণ ক্ষিপ্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল লেখকগণ জানান, অতিরিক্ত টাকা নিয়ে অল্প টাকা দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করে তিনি হয়ে গেছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। রকম একাধিক অভিযোগ তার রয়েছে বর্তমানের তার নামে বেনামে রয়েছে জমা জমি সহ পৌর শহরে একাধিক বাসাবাড়ী।
পলাশবাড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অধীন মহুরি বা দলিল লেখকদের দুর্দান্ত দাপট রয়েছে এখানে তারা জোটবদ্ধ কেউ কারো বিরুদ্ধে বা কোন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে চান না প্রকাশ্যে কোন সদস্য। যে কোন ধরা বাধা নিয়ম ও অনিয়ম মধ্যে তাদের নিত্য দিনের কার্যক্রম পরিচালিত হয় ।
স্থানীয় দলিল লেখক সমিতির নিয়ম অনুসারে প্রতিটি দলিল সম্পাদন আদায় করা হয় অতিরিক্ত অর্থ। পলাশবাড়ী সাবরেজস্ট্রি অফিসে কখনো এমন ঘটনা ধরা পড়েনি বিধায় এখানে নিরাপত্তা সহিত এমন কাজ চলমান রেখেছেন বলে দাবী করেন সচেতন মহল।
এ কারণেই মহুরিরা (দলিল লেখক) ভুয়া দলিল সম্পাদন করে বড় কর্তার টেবিলে উপস্থাপন করার সাহস দেখান।
তেমনি পলাশবাড়ীর মহুরি সব ম্যানেজ করে মৃত ব্যক্তিকে দাতা দেখিয়ে সম্পাদিত দলিল উপস্থাপন করে সম্পাদনার পর এখনো দলিল সম্পাদনের দুঃসাহস দেখাচ্ছেন এবং এখনো উক্ত দলিলের সম্পাদনে জড়িতরা সকলেই রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
জানা যায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ৮ নম্বর নাকাই ইউনিয়নের ডুমুরগাছা মৌজার ৩ একর ৩৩ শতক জমি দান করেছেন মৃত হাবিবুর রহমান প্রধান। তিনি গত ১৪ জুন ২০২১ তারিখে মৃত্যু বরণ করেন।
যা ইউনিয়ন পরিষদে মৃত্যু রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই মৃত ব্যক্তিই ২০ জুন ২০২১ তারিখে গোবিন্দগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল নম্বর ৭৪৬৪/২০২১ মূলে হেবার ঘোষণাপত্র সম্পাদন করেন। এই দলিলটি পলাশবাড়ী উপজেলার মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিক বাদশার পুত্র আ. কাফী সরকার (সনদ নম্বর ২০/০৬) ১১ পাতার এ দলিলটি সম্পাদন করেন।
দলিলটিতে সাক্ষী করেন পলাশবাড়ী দলিল লেখক অফিসের কম্পিটার অপারেটর ফরহাদ রঞ্জু ও সহকারি সেলিম মিয়া কে।
তারা বলেন, উক্ত দলিলে সাক্ষী হওয়ার বিষয়ে তারা নিজেরা জানেন না। তবে দলিল সম্পাদন কারী দলিল লেখক আ. কাফি সরকার তাদের নাম সাক্ষী হিসাবে দিয়েছেন উক্ত দলিলে।
মৃত ব্যক্তিকে দাতা দেখিয়ে দলিল সম্পাদনা হওয়ার এ বিষয়ে জানা জানি হলে সে সময় দায়িত্বে থাকা গোবিন্দগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার সোহরাব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, প্রকৃত দাতা সনাক্তে বায়োমেট্রিক বা অন্য কোনো যন্ত্র আমাদের এখানে নেই। তারপরেও দলিল লেখকদের একটি দায়বদ্ধতা থাকে।
সে কারণে সম্পৃক্তদের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, পাশ হওয়া দলিল আমি বাতিল করতে পারি না। তবে, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দলিল লেখক আ. কাফি সরকার বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না অফিসে থেকে জেনে নেন। তবে তার এ কার্মকান্ডের নিউজ বন্ধের জন্য এ প্রতিবেদকের নিকট একাধিক ফোন আসে উপজেলার বাসিন্দা বিভিন্ন মহলের কর্তাব্যক্তির নিকট হতে। এতেই বোঝা যায় ব্যাপক খুটির জোড়েই তিনি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
পলাশবাড়ী সাব রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন তার পর দেখে মন্তব্য দিবো। তবে পলাশবাড়ী দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম সরকার রানা বলেন,আমরা এ বিষয়ে কোন চিঠিপত্র পায়নি।
দলিল লেখক আ: কাফি সরকার দলিল সম্পাদন করছেন নিয়মিত এবং তিনি আমাদের সমিতিতে সহ সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রয়েছেন।
অপরদিকে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান জানান,আ. কাফি সরকারের কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে তার জানা নেই তবে তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে।
তিনিও বলেন, আমাদের কাছে কোন নির্দেশনা না আসায় আ.কাফি সরকার স্বপদে রয়েছেন।
এদিকে কার্যক্রম বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকার পরেও দলিল সম্পাদনা করছেন ও দলিল লেখক সমিতির নেতা হিসাবে পলাশবাড়ী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এ বিষয়ে জেলা রেজ্রিস্টার সাইফুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে বিধায় বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার সুযোগ নেই।
তবে আমাদের অফিসিয়াল ভাবে নির্দেশনা যেমন রয়েছে তেমনি উক্ত ঘটনায় তদন্ত চলমান রয়েছৈ।এসময় তার ভিডিও বক্তব্য চাইলে তিনি বলেন, আদালতে মামলা চলমান রয়েছে আদালতের ভিডিও বক্তব্য নেন।
উল্লেখ্য, পলাশবাড়ী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সকল অনিয়ম বন্ধ হোক; ভুয়া বা জাল দলিল সম্পাদনাকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমনটাই আশা করেন সচেতন মহল।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।