সংসদে নির্বাচন কমিশন বিল পাস
🕧Published on:
সেবা ডেস্ক: বহুল আলোচিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’র নিয়োগ বিল-২০২২’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
বৃহস্পতিবা’র
আইন, বিচা’র ও সংসদ বিষয়ক
মন্ত্রী আনিসুল হক সংবিধানে’র ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’র
নিয়োগ বিল-২০২২’ পাসে’র
প্রস্তাব ক’রলে তা কণ্ঠভোটে পাস
হয়। এ’র আগে বিরোধী
দলীয় কয়েকজন এমপি বিলটি জনমত
যাচাই-বাছাইয়ে’র জন্য কমিটিতে পাঠানো’র
প্রস্তাব তুললে তা নাকচ হয়ে
যায়।
এদিন
সকালে স্পিকা’র ড. শিরীন শা’রমিন
চৌধুরী’র সভাপতিত্বে সংসদে’র বৈঠক শুরু হয়।
সংসদে উত্থাপিত এ বিলটি অধিকত’র
পরীক্ষা-নিরীক্ষা’র জন্য আইন, বিচা’র
ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি উত্থাপিত
বিলে দুটি সংশোধনী এনে
পাসে’র সুপারিশ ক’রলে ধারা দুটি সংশোধন
করে বিলটি পাস হয়।
সংসদে
উত্থাপিত বিলে প্রধান নির্বাচন
কমিশনা’র (সিইসি) ও কমিশনা’রদে’র যোগ্যতা
সংক্রান্ত ৫(গ) ধারায়
বলা আছে, সিইসি ও
কমিশনা’র হতে গেলে কোনো
গুরুত্বপূর্ণ স’রকারি, বিচা’র বিভাগীয়, আধা স’রকারি বা
বেস’রকারি পদে অন্যূন ২০
বছ’র কাজে’র অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এ ধারায় স’রকারি, বিচা’র বিভাগীয়, আধা স’রকারি বা
বেস’রকারি পদে’র পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’
যুক্ত করা’র সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। আ’র অযোগ্যতা’র ক্ষেত্রে
৬(ঘ) ধারায় বলা
আছে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে
অন্যূন দুই বছরে’র কারাদণ্ডে
দণ্ডিত হলে সিইসি ও
কমিশনা’র হওয়া যাবে না।
আরো
পড়ুন> দক্ষ জনবল না
থাকায় এনআইডিতে কিছু ভুল হচ্ছে:
আইনমন্ত্রী
এখানে
দুই বছরে’র কারাদণ্ড উঠিয়ে শুধু কারাদণ্ডে’র সুপারিশ
করেছে কমিটি। অর্থাৎ নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে যেকোনো মেয়াদে’র সাজা হলেই সিইসি
বা কমিশনা’র হওয়া’র ক্ষেত্রে ‘অযোগ্য’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এ’র
আগে গত ২৩ জানুয়ারি
বিলটি সংসদে উত্থাপিত হয়। খসড়া বিলে
সার্চ কমিটি’র কাজ সম্পর্কে বলা
হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা
ও নি’রপেক্ষতা’র নীতি অনুস’রণ করে
দায়িত্ব পালন ক’রবে। আইনে
বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা
করে প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র ও নির্বাচন কমিশনা’র
পদে নিয়োগে’র জন্য রাষ্ট্রপতি’র কাছে
সুপারিশ ক’রবে।
‘প্রধান
নির্বাচন কমিশনা’র ও নির্বাচন কমিশনা’র
নিয়োগ আইন-২০২২’-এ’র
সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে এ’র আগে গঠিত
সব নির্বাচন কমিশনে’র বৈধতাও দেওয়া হবে। এ সার্চ
কমিটি সিইসি ও কমিশনা’রদে’র প্রতি
পদে’র জন্য দুজন করে
ব্যক্তি’র নাম সুপারিশ ক’রবে।
কমিটি গঠনে’র ১০ কার্যদিবসে’র মধ্যে
সুপারিশ রাষ্ট্রপতি’র কাছে দেবে বলে
খসড়া বিলে উল্লেখ করা
হয়েছে।
বিলে
বলা হয়েছে, সার্চ কমিটি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনা’র
পদে যোগ্যদে’র অনুসন্ধানে’র জন্য রাজনৈতিক দল
এবং পেশাজীবী সংগঠনে’র কাছ থেকে নাম
আহ্বান ক’রতে পা’রবে।
এতে
আরো বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি
ছয় সদস্যে’র অনুসন্ধান কমিটি গঠন ক’রবেন, যা’র
সভাপতি হবেন প্রধান বিচা’রপতি
মনোনীত আপিল বিভাগে’র একজন
বিচা’রক। সংবিধানে’র ১১৮(১) অনুচ্ছেদ
অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’র
নিয়োগে’র জন্য বিলটি আনা
হয়েছে।
বিলে
বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র এবং অন্যান্য নির্বাচন
কমিশনা’রদে’র শূন্যপদে নিয়োগদানে’র জন্য এ আইনে
বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদে’র নাম সুপারিশ করা’র
উদ্দেশ্যে ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে
একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন ক’রবেন।
কমিটিতে
থাকবেন- প্রধান বিচা’রপতি মনোনীত আপিল বিভাগে’র একজন
বিচা’রক, তিনি এ’র সভাপতিও
হবেন। প্রধান বিচা’রপতি মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগে’র একজন বিচা’রক, বাংলাদেশে’র
মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ
স’রকারি কর্ম কমিশনে’র চেয়া’রম্যান
এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক।
বিলে
বলা হয়, অনুসন্ধান কমিটি
তাদে’র সভা’র কার্যপদ্ধতি নির্ধা’রণ ক’রবে। অন্যূন তিন সদস্যে’র উপস্থিতিতে
অনুসন্ধান কমিটি’র সভা’র কোরাম গঠিত হবে। কমিটি’র
সভায় উপস্থিত সদস্যদে’র সংখ্যাগরিষ্ঠে’র ভোটে’র ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে এবং ভোটে’র
সমতা’র ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যে’র দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট
প্রদানে’র ক্ষমতা থাকবে। অনুসন্ধান কমিটি গঠনে’র ১০ কার্যদিবসে’র মধ্যে
এ’র সুপারিশ রাষ্ট্রপতি’র কাছে পেশ ক’রবে।
অনুসন্ধান
কমিটি’র দায়িত্ব ও কার্যাবলিতে বলা
হয়েছে, অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নি’রপেক্ষতা’র নীতি
অনুস’রণ করে দায়িত্ব পালন
ক’রবে এবং এ আইনে
বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সুনাম
বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন
কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’র
পদে নিয়োগদানে’র জন্য রাষ্ট্রপতি’র নিকট
সুপারিশ ক’রবে।
অনুসন্ধান
কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’র
পদে নিয়োগদানে’র উদ্দেশ্যে এ আইনে বর্ণিত
যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদে’র অনুসন্ধান ক’রবে এবং এজন্য রাজনৈতিক
দল এবং পেশাজীবী সংগঠনে’র
কাছ থেকে নাম আহ্বান
ক’রতে পা’রবে। অনুসন্ধান কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’র
নিয়োগদানে’র উদ্দেশ্যে প্রতিটি শূন্যপদে’র বিপরীতে রাষ্ট্রপতি’র কাছে দুজন ব্যক্তি’র
নাম সুপারিশ ক’রবে।
প্রধান
নির্বাচন কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনারে’র
যোগ্যতায় বলা হয়েছে- তাকে
বাংলাদেশে’র নাগরিক হতে হবে; বয়স
ন্যূনতম ৫০ বছ’র হতে
হবে; কোনো গুরুত্বপূর্ণ স’রকারি,
বিচা’র বিভাগীয়, আধা-স’রকারি বা
বেস’রকারি পদে অন্যূন ২০
বছরে’র কাজে’র অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
অযোগ্যতায়
বলা হয়েছে- প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’র
হিসেবে নিয়োগদানে’র জন্য কোনো ব্যক্তিকে
সুপারিশ করা যাবে না,
যদি তিনি কোনো উপযুক্ত
আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হন বা দেউলিয়া
ঘোষিত হওয়া’র প’র দায় হতে
অব্যাহতি লাভ না করে
থাকেন বা কোনো বিদেশি
রাষ্ট্রে’র নাগরিকত্ব অর্জন করেন অথবা কোনো
বিদেশি রাষ্ট্রে’র প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকা’র করেন।
এছাড়া
তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে
দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই
বছ’র কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, International Crimes
(Tribunals) Act, 1973 Act No. XIX of 1973) বা
Bangladesh Collaborators (Special Tribunals) Order, 1972 (President's Order No.
8 of 1972) এ’র অধীন যেকোনো অপরাধে’র
জন্য দণ্ডিত হলে বা প্রজাতন্ত্রে’র
কর্মে কোনো লাভজনক পদে
অধিষ্ঠিত থাকলেও পদে’র যোগ্য হিসেবে গণ্য হবেন না।
বিলটি’র
উদ্দেশ্য ও কা’রণ সংবলিত
বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধানে’র
১১৮(১) অনুচ্ছেদে বিধান
‘রয়েছে যে, প্রধান নির্বাচন
কমিশনা’র এবং অনধিক চা’রজন
নির্বাচন কমিশনা’রকে নিয়ে বাংলাদেশে’র একটি
নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে
প্রণীত কোনো আইনে’র বিধানাবলি
সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র ও অন্যান্য নির্বাচন
কমিশনা’রকে নিয়োগদান ক’রবেন।
সংবিধানে’র
ঐ বিধান বাস্তবায়নে প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র এবং অন্যান্য নির্বাচন
কমিশনা’র নিয়োগে’র ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নি’রপেক্ষতা নিশ্চিতে’র
উদ্দেশ্যে একটি আইন প্রণয়ন
করা আবশ্যক। সে লক্ষ্যে ‘প্রধান
নির্বাচন কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’র
নিয়োগ আইন-২০২২’ শীর্ষক
বিলে’র খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত
বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’র
নিয়োগদানে’র জন্য রাষ্ট্রপতি’র নিকট
সুপারিশ প্রদানে’র নিমিত্তে অনুসন্ধান কমিটি গঠন, অনুসন্ধান কমিটি’র
দায়িত্ব ও কার্যাবলি, প্রধান
নির্বাচন কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’র
নিয়োগদানে’র জন্য যোগ্যতা-অযোগ্যতা
সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া
প্রস্তাবিত বিলে অনুসন্ধান কমিটি
কর্তৃক রাষ্ট্রপতি’র নিকট প্রধান নির্বাচন
কমিশনা’র এবং নির্বাচন কমিশনা’রদে’র
নাম সুপারিশ করা’র ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী
সংগঠনে’র কাছ থেকে নাম
আহ্বান করা’র বিধান রাখা হয়েছে।
সংসদে পাস হওয়ায় বিলটিতে রাষ্ট্রপতি সই ক’রবেন। এ’র প’র গেজেট আকারে প্রকাশ হলেই প্রথমবারে’র মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনা’র ও নির্বাচন কমিশনা’র নিয়োগে আইন পাবে বাংলাদেশ।
0comments
মন্তব্য করুন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।