সেবা ডেস্ক: কক্সবাজারে’র মেরিন ড্রাইভে অবস’রপ্রাপ্ত মেজ’র সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডে টেকনাফ মডেল থানা’র ব’রখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমা’র দাশ ও বাহা’রছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে’র সাবেক ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া এপিবিএনে’র তিন সদস্যসহ ৭ জনকে খালাস ও বাকি ৬ জনে’র যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে।
যাবজ্জীবন
সাজাপ্রাপ্ত ৬ জন হলেন-
নন্দদুলাল ‘রক্ষিত, নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন, আইয়াছ উদ্দিন, রুবেল শর্মা ও সাগ’র দেব।
খালাস
পেয়েছেন- শাহজাহান আলী, রাজীব হোসেন,
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ইমন,
লিটন মিয়া, সাফানু’র করিম, কামাল হোসেন আজাদ ও আব্দুল্লাহ
আল মামুন।
সোমবা’র
দুপুরে কক্সবাজা’র জেলা ও দায়রা
জজ আদালতে’র বিচা’রক মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা
করেন। রায়ে’র পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে- এ হত্যাকাণ্ড ছিল
পূর্বপরিকল্পিত।
এ’র
আগে দুপু’র ২টা’র দিকে চাঞ্চল্যক’র এ
হত্যা মামলা’র ১৫ আসামিকে কড়া
নিরাপত্তা’র মধ্য দিয়ে প্রিজন
ভ্যানে করে আদালতে আনা
হয়। ২টা ২৫ মিনিটে
রায় পড়া শুরু করেন
বিচা’রক।
এদিকে,
রায় ঘোষণা উপলক্ষে কক্সবাজা’র জেলা ও দায়রা
জজ আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জো’রদা’র করা হয়েছে।
কক্সবাজারে’র
অতিরিক্ত পুলিশ সুপা’র (প্রশাসন) ‘রফিকুল ইসলাম বলেন,
সকাল থেকে পুলিশ সদস্যরা
নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন ক’রছেন। মেজ’র
সিনহা হত্যা মামলা’র রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো পরিস্থিতি
এড়াতে আমরা প্রস্তুত আছি।
প্রসঙ্গত,
২০২০ সালে’র ৩১ জুলাই রাতে
কক্সবাজা’র-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে’র শামলাপু’র বাহা’রছড়া চেকপোস্টে পুলিশে’র গুলিতে নিহত হন অবস’রপ্রাপ্ত
মেজ’র সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনা’র পাঁচদিন
প’র ৫ আগস্ট ৯
পুলিশ সদস্যে’র বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন নিহত সিনহা’র
বোন শা’রমিন শাহরিয়া’র ফে’রদৌস। মামলাটি তদন্তে’র দায়িত্ব পায় র্যাব।
চা’র
মাস প’র ২০২০ সালে’র
১৩ ডিসেম্ব’র ১৫ জনকে অভিযুক্ত
করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত
কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মেজ’র
সিনহা হত্যা’র নেপথ্যে কী এবং কারা
অবস’রপ্রাপ্ত
মেজ’র সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে কী কা’রণে হত্যা
করেছিলেন ওসি প্রদীপ? এ
নিয়ে এখনো জনমনে অনেক
কৌতূহল। রায় ঘোষণা’র প্রা’রম্ভে
এসেও অনেকে জানতে চান সেই কা’রণ।
আসামিদে’র জবানবন্দি, সাক্ষীদে’র সাক্ষ্যগ্রহণ ও অভিযোগপত্র উঠেছে
হত্যা’র মূল কা’রণ।
হত্যা’র
কয়েকদিন আগে থেকেই নানা
বিষয়ে মেজ’র সিনহা’র সঙ্গে ওসি প্রদীপে’র মন
কষাকষি শুরু হয়। মেজ’র
সিনহা’র কোনো কথাই সহ্য
ক’রতে পারেননি ওসি প্রদীপ। সেই
জায়গা থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো
হয়েছে বলে মনে ক’রছেন
অনেকে।
চাঞ্চল্যক’র
এ মামলা’র অভিযোগপত্র ও বিভিন্ন সূত্রে
পাওয়া তথ্যে’র ভিত্তিতে জানা গেছে-
সিনহা
হত্যা: যা ঘটেছিল সেদিন
৩ জুলাই ২০২০। তিন সহযোগীসহ কক্সবাজা’র
আসেন অবস’রপ্রাপ্ত মেজ’র সিনহা মো. রাশেদ খান।
কলাতলীতে ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টে ওঠেন
তারা। উদ্দেশ্য জাস্ট গো নামে’র ইউটিউব
চ্যানেলে’র জন্য ভ্রমণ বিষয়ক
প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা। ৭
জুলাই ২০২০। ঠিকানা বদল করে হিমছড়ি’র
নিলীমা রিসোর্টে’র ডি-১ কটেজে
ওঠে টিমটি।
শুরু
হয় কক্সবাজারে’র মনো’রম দৃশ্য এবং বৈচিত্রপূর্ণ জীবন
ও জীবিকা’র তথ্য সংগ্রহ আ’র
ভিডিও ধা’রণ। এক পর্যায়ে তারা
যান টেকনাফে। ঐ সময় তারা
মাদক নির্মূল অভিযানে’র নামে সাধা’রণ মানুষে’র
ওপ’র ওসি প্রদীপ কুমা’র
দাশে’র নিপীড়নে’র কথা জানতে পারেন।
ভূক্তভোগী অনেক পরিবা’র সিনহা
ও তা’র টিমে’র কাছে
ওসি প্রদীপে’র অত্যাচা’র নিপীড়নে’র বর্ণনা দেয়।
মেজ’র
সিনহা ও তা’র লোকজন
ওসি প্রদীপ কুমা’র দাশ ও ইন্সপেক্ট’র
লিয়াকত আলী ও তাদে’র
বাহিনী’র নাম নানা তথ্য
সংগ্রহে’র চেষ্টা করেন। এ’রই মধ্যে জুলাই
মাসে’র কোনো একদিন মেজ’র
সিনহা, শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম
রিফাতে’র সঙ্গে দেখা হয় ওসি
প্রদীপে’র। নানা অভিযোগ সম্পর্কে
ওসি প্রদীপে’র সঙ্গে কথা বলা’র চেষ্টা
করেন তারা।
ঘটনাটি
হালকাভাবে নিয়ে দলে’র সঙ্গে
নিলীমা রিসোর্টে থেকেই কাজ চালিয়ে যান
মেজ’র সিনহা। তবে এতটা হালকা
হতে পারেননি ওসি প্রদীপ। ফেঁসে
যাওয়া’র আশঙ্কা থেকে বিষয়টি বাহা’রছড়া
পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে’র আইসি ইন্সপেক্ট’র লিয়াকত
আলীকে জানান। থানা’র সোর্সদে’র সঙ্গে গোপনে কথা বলেন। এ’রই
ধারাবাহিকতায় জুলাই মাসে’র মাঝামাঝি ওসি প্রদীপ ও
ইন্সপেক্ট’র লিয়াকত তিন সোর্স মো.
নুরুল আমিন, আইয়াছ উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিনে’র
সঙ্গে মিটিং করেন। তারা তথ্য সংগ্রহে
নামে। সাদা পোশাকে ক্রসফায়ারে
নিহত ব্যক্তি ও অন্যান্য ভিক্টিম
পরিবারে’র বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেজ’র সিনহা ও তা’র টিম
সম্পর্কে খোঁজ নেয়। বলে
আসে- এ ধ’রনে’র লোকজন
এলে পুলিশকে খব’র দিতে।
জুলাই
মাসে’র তৃতীয় সপ্তাহে সোর্স নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াছে’র
সঙ্গে আবারো মিটিংয়ে বসেন ইন্সপেক্ট’র লিয়াকত
আলী। সিনহা ও তা’র ভিডিও
দলকে খুঁজে বে’র ক’রতে তাড়া
দেন। বলেন, তা না হলে
লিয়াকতে’র বড় ধ’রণে’র ক্ষতি
ক’রবে ওসি প্রদীপ। এ’রপ’রই
মেজ’র সিনহাকে হত্যা ক’রতে মরিয়া হয়ে ওঠেন লিয়াকত।
২০২০
সালে’র ৩১ জুলাই রাত
সাড়ে ৯টা’র দিকে শামলাপু’র বাজারে’র
কাছে এপিবিএন পুলিশ চেকপোস্টে বাহা’রছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে’র পরিদর্শক লিয়াকতে’র গুলিতে নিহত হন অবস’রপ্রাপ্ত
মেজ’র সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঐ ঘটনায়
৫ আগস্ট মামলা করেন মেজ’র সিনহা’র
বড় বোন শা’রমিন শাহরিয়া’র
ফে’রদৌস। ৬ আগস্ট সকালে
মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত করে তদন্তে’র জন্য
র্যাবকে হস্তান্ত’র করা হয়। ১৩
ডিসেম্ব’র র্যাব-১৩
কক্সবাজা’র ব্যাটালিয়নে’র সিনিয়’র এএসপি খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত
করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২১
সালে’র ২৭ জুন আদালত
১৫ আসামি’র বিরুদ্ধে বিচা’রকাজ শুরু’র আদেশ দেয়। চলতি
বছরে’র ১২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক
উপস্থাপনে’র শেষদিনে ৩১ জানুয়ারি মামলা’র
রায় ঘোষণা’র দিন ধার্য করে
আদালত। এ’রই ধারাবাহিকতায় আজ
সোমবা’র চাঞ্চল্যক’র এ মামলা’র রায়
ঘোষণা ক’রবেন কক্সবাজা’র জেলা ও দায়রা
জজ আদালতে’র বিচা’রক মোহাম্মদ ইসমাইল। এ উপলক্ষে আদালত
চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জো’রদা’র করা হয়েছে।
কক্সবাজারে’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপা’র (প্রশাসন) ‘রফিকুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে পুরুষ সদস্যদে’র পাশাপাশি আমাদে’র নারী পুলিশ সদস্যরাও নিরাপত্তা’র দায়িত্ব পালন ক’রছেন। মেজ’র সিনহা হত্যা মামলা’র রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা প্রস্তুত আছি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।