শখের কুলচাষে ভাগ্যবদল বাঁশখালীর যুবক তারেক হোসাইনের

S M Ashraful Azom
0
শখের কুলচাষে ভাগ্যবদল বাঁশখালীর যুবক তারেক হোসাইনের
বাঁশখালীর যুবক তারেক হোসাইনের কাশ্মীরী আপেল কুলের বাগান। ছবি: শিব্বির আহমেদ রানা, সেবাহটনিউজ

শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মুহাম্মদ তারেক হোসাইন শখের বশে করেছিলেন কুলের বাগান। বাবা-মায়ের কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে দুই বিঘা জমিতে রোপন করেছিলেন চার শতাধিক কুলের চারা। 

সে বাগানের কুল মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকায় কিনা চেয়েছেন স্থানীয় ফলব্যবসায়ীরা। কাশ্মীরি আপেল কুলের এ বাগান দেখতে প্রায় নিয়মিত লোকজন ভীড় করছেন। 

আলোচিত এ কাশ্মীরি কুলের বাগানটি বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের সাহেবের হাট সংলগ্ন পূর্ব পাহাড়ি সমতল অঞ্চলে অবস্থিত। 

মুহাম্মদ তারেক হোসেন একজন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। সবেমাত্র মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পরিক্ষা শেষ করেছে। 

পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজে। ইন্টারেনেটে ইউটিউব দেখে কুল চাষে উদ্বুদ্ধ হয় যুবক তারেক হোসাইন।

তারেক হোসাইন জানান, অনেক আগে থেকেই কৃষির প্রতি আমার বেশ আগ্রহ ছিল।গতবছর ইউটিউবে কুল চাষের ভিডিও দেখে আগ্রহী হয়ে উঠি। বিষয়টি মা-বাবাকে জানালে তারা উৎসাহের পাশাপাশি অর্থসহ জমির যোগান দেন। পরে ফরিদপুর থেকে কাশ্মীরি আপেল কুল, বল সুন্দরী কুল, থাই আপেল কুলের ৪০০টি চারা সংগ্রহ করি। 

যাতায়তসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা চারা সংগ্রহের কাজে ব্যয় হয়। এরপর পাহাড়ি সমতল জায়গা থেকে ১২ হাজার টাকায় লিজ নেওয়া ২ বিঘা (৮০ শতাংশ) জমিতে ১০ ফুট দূরত্ব রেখে ৪০০ চারা রোপন করি। 

এখন পর্যন্ত এই বাগানে আমার ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। মাত্র আট মাস পরই গাছগুলোতে কুল আসতে থাকে। 

এখন প্রতিটি গাছ কুলের ভারে নুয়ে পরেছে।  প্রথমে শখ থাকলেও এখন বানিজ্যিকভাবে চাষ করার ইচ্ছা আছে। এখন বাগান দেখে তারেক নিজেই অভিভূত। আশেপাশে এলাকার লোকজন আগ্রহ নিয়ে আসছেন বাগান দেখতে। 

বাগানে যখন কিছু রোগ দেখা দেয় তখন বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু ছালেক ও কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে ও সঠিক পরিচর্যায় আমার বাগানের প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে কুল ধরেছে।

তারেক হোসাইন আরো জানান, ইতিমধ্যে একজন ফলব্যবসায়ী দুই লাখ ৭০ হাজার টাকায় বাগানটি কিনা চেয়েছেন। বাজারে অন্য কুল যখন শেষ তখনই এ জাতের কুলের মৌসুম শুরু হয়। 

একারণে বেশি দাম পাবার আশায় আছি। দুই বিঘা জমিতে চারা রোপনসহ নানা কাজে আমার ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। 

সেক্ষেত্রে লাভের অংশ অনেক বেশি থাকে। প্রথম দিক থেকে আমার বাগান থেকে ১২০ টাকা কেজী, পরে ১১০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজি পাইকারি দরে বিক্রয় করছি। 

এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার কুল বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে পুরোদমে বাগানের কুল বিক্রির উপযোগী হবে। এ বাগান থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবো বলে আশা করছি।

শিক্ষিত বেকার তরুণ-যুবকদের উদ্দেশ্যে তারেক হোসাইন বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করা যায়। আমি ইউটিউব দেখে কুল চাষের স্বপ্ন দেখেছি। 

প্রথমে শখের বসে কুল চাষ করলেও এখন আমার বাগানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে। আমি আরো ৮ বিঘা জমি লিজ নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। 

বিশেষ করে কুল চাষে শ্রম ও পুজি লাগে কম। কিন্তু লাভ হয় বেশি। প্রতিটি কুল গাছ দীর্ঘ ১০-১২ বছর সময় ধরে ফল দেয় এবং প্রতি বিঘা জমিতে ১৮০- ২০০টি চারা লাগানো যায়। 

এই কুল চাষে প্রতি বিঘায় ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে বছরে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করাও সম্ভব। আমি অনেকদূর থেকে চারা সংগ্রহ করায় খরচ একটু বেশী পড়েছে। যারা বাঁশখালীতে কুল চাষের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাদের খরচ অনেক কম পড়বে। 

আমি সীমিতভাবে কুলের চারা সরবরাহ করবো কম মুল্যে। আমার কাছে কাশ্মীরী আপেলকুল সহ নানা উন্নত জাতের কুলের চারা পাওয়া যাবে। 

প্রয়োজনে তরুণ-যুবদের এ কাজে আমার সহযোগীতা থাকবে সবসময়। তাছাড়া এই কুল সুস্বাধু ও মিষ্টি হওয়ায় মিনি আপেল নামে পরিচিত পাওয়া ও বাজারদর বেশি থাকায় বাড়তি লাভ করা যায়। 

এখান থেকে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশের কৃষিখাতকে এগিয়ে নেওয়া যাবে। 

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু ছালেক বলেন, কলেজ পড়ুয়া ছেলের কৃষির প্রতি ঝোঁক দেখে খুশি হয়েছি। 

শিক্ষিত বেকার যারা তারাও এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। শখের কাশ্মীরী সহ উন্নত জাতের আপেল কুলের চাষ করলেও তারেক হোসাইনের বাগানে এখন বাণিজ্যিকভাবে কুলের চাষ হয়েছে। 

সে নিজ উদ্যোগে ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কাশ্মীরি আপেল কুল, বল সুন্দরী কুল, থাই আপেল কুল চাষ করেছে যা কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করবে। তার এই কুল চাষ দেখে অনেক যুবক কৃষিতে আগ্রহ হচ্ছে। 

তাছাড়াও বাঁশখালী কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক তারেকের কুল বাগান পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে। 

যে কোন  প্রয়োজনে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top