পিলখানা হত্যা মামলার পথচলা

S M Ashraful Azom
0
পিলখানা হত্যা মামলার পথচলা



সেবা ডেস্ক: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। সকাল সাড়ে ৯টা। প্রচণ্ড গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে পিলখানার তৎকালীন বিডিআর বর্তমান বিজিবি সদর দফতরের দরবার হলসহ আশপাশের এলাকা। পিলখানা ছাপিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ঢাকাসহ সারা দেশে। বিদ্রোহের নামে প্রথমেই তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকে হত্যা করা হয়। এরপর বিভীষিকাময় দুদিনে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, নারী-শিশুসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।


এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করে ৮৪৬ জনকে আসামি করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। 


আর ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ ১৩৯ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শেষ হওয়ার ৭ মাস পর দেয়া রায়ে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হয়।


বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসামির ফাঁসির আদেশ সংবলিত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ৩ জন বিচারপতি রায় নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। প্রায় ৩৩ হাজার পৃষ্ঠার এই রায়ে কোনো ভুলত্রুটি রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়।


২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।


গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিডিআর বিদ্রোহে সরকার পতন হলে একটি স্বার্থন্বেষী মহলের লাভবান হওয়ার বিষয়টিই স্পষ্টভাবে সর্বাগ্রে চলে আসে। মামলার সংরক্ষিত প্রাসঙ্গিক দলিলাদি পরীক্ষাসহ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ঘটনার পেছনের ঘটনা খোঁজ করলে এ রূপ একটি নির্মম চিত্র পরিস্ফুটিত হয়। বহুল আলোচিত বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি ) বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা মামলায় ১৩৯ জনের মৃত্যুদন্ড ও ১৮৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে।


রায়ে মৃত্যুদন্ডসহ মাট ৫৫২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড প্রদান করা হয়। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ রায় এটি। ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দুদিনে এ রায়টি প্রদান করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানি শুরু হয়ে ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল ৩৭০ কার্যদিবসে শেষ হয়। বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন: বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার। 


পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাস প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে। তিনি বলেন রায়ের পর্যালোচনায় একাধিক দিকনির্দেশনা রয়েছে। রায়ে পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে অন্যতম পরিকল্পনাকারী ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ জনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ বহলা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুসহ ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৯৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। 


রায়ে বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী তার পর্যবেক্ষণে, বিডিআর বিদ্রোহ দমনে সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে সেনা, বিমান এবং নৌবাহিনীরও প্রশংসা করেছে। বিডিআর বিদ্রোহের ভয়াবহতা ও আকস্মিকতায় সদ্য নির্বাচিত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসীম ধৈর্য, বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার সঙ্গে দৃঢ় মনোবল নিয়ে শক্ত হাতে বিদ্রোহ দমনের যৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত ছিল দূরদর্শিতাপূর্ণ। বাংলাদেশ রাইফেলসের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নের লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ধ্বংসের চক্রান্ত রুখে দেয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রনায়কচিতভাবে গৃহীত দৃঢ় পদক্ষেপ ছিল সময়োপযোগী। পাশাপাশি আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রশিক্ষিত দক্ষ ও সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনী দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত বিশ্বাস ও অবিচল আস্থা রেখে চরম ধৈর্যের সঙ্গে উদ্ভূত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবেলার মাধ্যমে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে সমগ্র দেশবাসীর ভালবাসা ও সুনাম অর্জন করেছে।






শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top