সেবা ডেস্ক : মারপিট, যৌতুক, নারী নির্যাতনসহ পারিবারিক নানা ঝামেলা নিয়ে স্বামীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ৫০ নারী। দীর্ঘদিন পর এসব মামলার রায় দিয়েছেন বিচারক। মিল করে দিয়েছেন স্বামী-স্ত্রীদের। এরপর আদালত প্রাঙ্গণ থেকে স্বামীদের নিয়ে ফুল হাতে বাড়ি ফিরেছেন নারীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে ৫০ মামলার রায় দেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। এতে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেল ৫০টি পরিবার।
আদালত কোনো আসামিদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংসার জীবন চালিয়ে যাওয়ার শর্তে বাদীদের সঙ্গে আপস করান। পরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফেরেন স্বামীরা।
আদালতের কর্মচারীরা তখন তাদের ফুল দিয়ে শুভকামনা জানান। ব্যতিক্রমী এ রায়ে মামলার বাদী-বিবাদী সবাই খুশি।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, বিচারক পৃথক ৫০টি নারী-শিশু নির্যাতন দমন মামলা একসঙ্গে আপসে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। এসব মামলা ছিল পারিবারিক বিরোধের মামলা।
এতে ৫০টি পরিবারের স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকার সুযোগ পাবেন। এর আগেও বিচারক দুবার অনেকগুলো মামলা আপসে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। এতে ৫০টি পরিবারে শান্তি ফিরবে ও আদালতের মামলাজট কমবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, যৌতুকসহ পারিবারিক নানা ঝামেলায় নির্যাতনের শিকার হয়ে সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন সময়ে জেলার বিভিন্ন এলাকার ৫০ নারী তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন।
বিভিন্ন সময়ে মামলার শুনানি করে বিচারক উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে তাদের সন্তানদের এবং তাদের মঙ্গলের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন ধরে রাখার ব্যবস্থা করেন। এরপর একসঙ্গে মঙ্গলবার এসব মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় সব মামলার বাদী-বিবাদী, তাদের আইনজীবী ও পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
রায়ে ৫০ দম্পতিকে পারিবারিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন। মামলাগুলো আপসে নিষ্পত্তি হওয়ায় আদালত সব আসামি খালাস পেয়েছেন। এতে স্বামীর ঘরে ফিরেছেন স্ত্রীরা।
সন্তানরাও মা-বাবার সঙ্গে থাকার সুযোগ পেয়েছে। তবে এসব দম্পতিকে মানতে হবে কয়েকটি শর্ত।
আদালতের আপসনামায় ৫০ দম্পতি অঙ্গীকার করে বলেছেন, সন্তানাদি নিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার ধর্ম পালন করবেন তারা। সংসারে শান্তি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করবেন না। স্বামী-স্ত্রী উভয়কে যথাযোগ্য মর্যাদা দেবেন।
স্বামী তার স্ত্রী বা তার মা-বাবা ও অভিভাবকের কাছে যৌতুক দাবি করবেন না। পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমানিল্য ও বিরোধ দেখা দিলে নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করবেন। স্বামী কখনো স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না।
একটি মামলার বাদী-বিবাদী ছিলেন দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের রনারচর গ্রামের জুনাইদ মিয়া ও আম্বিয়া বেগম। তারা বলেন, পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমাদের মধ্যে মামলা চলছিল। আজকে জজ সাহেব আমাদের মামলা আপসে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। আমরা দুজনই খুব খুশি।
সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি আইনুল ইসলাম বাবলু বলেন, এ রায়ের সুফল আমরা পাচ্ছি। এ আপস রায়ের ফলে পারিবারিক সহিংসতা কমবে ও বাদী-বিবাদী উপকৃত হবে।
এর আগে একইভাবে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ৫৪টি ও ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর আরো ৪৭টি পৃথক মামলার রায়ে ৪৭ দম্পতিকে একত্রে সংসার করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন একই আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।