গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের আওতাভুক্ত সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে সাঁওতালদের বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয় আদিবাসি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি ও সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি।
প্রথমে ঢাকা, রংপুর, বগুড়া ও নাটোরসহ প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ও কাটাবাড়ী অধ্যুষিত মাদারপুর ও জয়পুরসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে সাঁওতাল-বাঙালিরা একসাথে বাসযোগে গাইবান্ধা জেলা শহরে আসেন। তারা গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের সুখশান্তির বাজার এলাকায় নেমে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। সেখানে সাঁওতাল-বাঙালিদের প্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমানের হাতে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের জমিতে ইপিজেড বাতিলসহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি তুলে দেন। এসময় জেলা প্রশাসক তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবগত করবেন বলে আশ্বাস দেন। এরপর তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত¡রে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে তির-ধনুক, ফেস্টুন ও ব্যানার হাতে দেড় শতাধিক সাঁওতাল-বাঙালি নারী-পুরুষ অংশ নেন।
কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন, জাতীয় আদিবাসি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, রংপুর বিভাগ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাথিয়ার্স মারডি, জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মারুফ মনা, গাইবান্ধা আদিবাসি-বাঙালী সংহতি পরিষদের আহবায়ক আইনজীবি সিরাজুল ইসলাম বাবু, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জাহাঙ্গীর কবির তনু ও সদস্য সচিব মোরশেদ হাসান, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার আহবায়ক সন্তোষ সিং বাবু ও নাটোর জেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ লাকড়া, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুণ মোন্ডা, জেলা জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কবীর রানা, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেস সরকার, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুফল হেমব্রম, সদস্য প্রিসিলা মুরমু, ব্রিটিশ সরেন, রংপুরের আদিবাসী নেতা কৃষিবিদ মিল খানকো প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ইপিজেডের নামে সাঁওতালদের বাপ-দাদার জমি সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ভেতরে তিন ফসলি জমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। শহীদ শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মারডির রক্তে ভেজা জমিতে ইপিজেড করা চলবে না। কেননা এই জমি সাঁওতাল-বাঙালিদের বাপ-দাদার। ১৯৬২ সালে তৎকালীন সরকার রিক্যুইজিশন ফর প্রপার্টি অ্যাক্ট ১৯৪৮ মোতাবেক সাঁওতাল ও বাঙালিদের কাছ থেকে নেওয়া ১৮৪২.৩০ একর জমি নিয়ে একটি চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়। এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, যে কাজের জন্য (ইক্ষুচাষ) জমি রিক্যুইজিশন করা হয়েছে তা করা না হলে খেসারতসহ পূর্বমালিকদের কাছে ফেরত দিতে হবে। তাই যেহেতু এই জমি ইক্ষুচাষ না কলে ইজারা প্রদান করা হয়েছে তাই এই ১৮৪২.৩০ একর জমি এখন সাঁওতাল-বাঙালিদের ফেরত দিতে হবে। কোনভাবেই এই জমিতে ইপিজেড করা যাবেনা। বর্তমানে এই জমির উপর ইপিজেডের যে ঘোষণা করা হয়েছে তা বাতিল করে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের সাঁকোয়া ব্রীজ এলাকায় ইপিজেড করার দাবি জানান বক্তারা।
রংপুর চিনিকল সূত্র ও সাঁওতালরা জানায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতাধীন ১ হাজার ৮৪২ দশমিক ৩০ একর জমি আছে। এই জমি সাঁওতাল-বাঙালিদের। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। একসময় চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হলে জমি ইজারা দেওয়া হয়। পরে শর্তভঙ্গের অভিযোগ তুলে জমি ফেরতের দাবিতে সাঁওতাল-বাঙালিরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মারডি নিহতসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এ পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) কর্তৃপক্ষকে ইপিজেড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বেপজা সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থানীয় সাঁওতালরা এখানে ইপিজেড না করার জন্য আন্দোলন করছেন। এদিকে চিনিকলের জমিতে ইপিজেড নির্মাণের বিরোধিতা করে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। তখন থেকে ওই কমিটির উদ্যোগে ইপিজেড না করতে আন্দোলন চলছে। তারা চিনিকলের জমিকে বাপ-দাদার সম্পত্তি দাবি করে তা ফেরত দেওয়া জন্য এই কমিটি গঠন করে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।