৪০ ঘন্টায়ও পুরো সচল হয়নি পল্লীবিদ্যুৎ, জেনারেটরই সুপেয় পানির ভরসা
🕧Published on:
![]() |
সরল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার প্রবাসী আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে জেনারেটর বসিয়ে পানি উত্তোলন, ভীড় জমেছে সহস্র লোকের |
শিব্বির আহমদ রানা : চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে বিদ্যুতের লাইন। কোথাও কোথাও বৈদ্যুতিক খুঁটি ট্রান্সফরমার সহ, কোথাও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে গাছের ডালপালা পড়ে গত বুধবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৮ টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত পুরা বাঁশখালী জুড়ে অন্ধকারে ছিল।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের বিশেষ টিম লাইন চালুর চেষ্টা করেও পুরো বাঁশখালীতে বিদ্যুতের লাইন সচল করতে সক্ষম হয়নি। তবে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুতের লাইন চালু হলেও দীর্ঘক্ষণ ঠিকছেনা বিদ্যুতের লাইন। ঘন্টায় ১৫-২০ বারের অধিক ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট অনেক গ্রাহক।
চলছে পবিত্র রমজানের মাস। পুরোমাস জুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ইবাদত বন্দেগীতে রাতদিন অতিবাহীত করে ধর্মপ্রান মুসল্লিরা। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে সাহরী ও ইফতারের সময় কারো কারো বাড়িতে দু'টাকার শলাকা দিয়ে মোমবাতি জালিয়ে, কেউ আবার পুরানো জীর্ণশীর্ণ চেরাগ ও হারিকেন জ্বালিয়ে অতীকষ্টে জীবনযাপন করছে। অনেক এলাকায় মাদরাসা-মসজিদের মোটরচালিত যন্ত্র বিদ্যুৎ না থাকায় অযু-কালাম করতে চরমভাবে হিমশীম খাচ্ছে। বিশেষ করে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানীর জন্য চরম হাহাকারে পড়েছে সহস্রাধিক জনসাধারণ।
সরে জমিনে দেখা যায়, বাঁশখালীর সরল, গন্ডামারা, শেখেরখীল, চাম্বল, শিলকূপ, বাহারছড়া, পুইছড়ি, ছনুয়াসহ বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে জেনারেটর বসিয়ে মোটর থেকে পানি উত্তোলন করে সুপেয় পানির চাহিদা মেঠাচ্ছে এলাকার লোকজন। এতে পানীর জন্য ভীড় জমাচ্ছে পাড়ার বৌ-ঝিরা। প্রায় ৪০ ঘন্টা অতিক্রম হলেও এখনো বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের দেখা নেই।
চাম্বল থেকে মিশকাতুল ইসলাম জানিয়েছেন, গতকাল রাতে চাম্বলের কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ আসলেও বেশীক্ষণ বিদ্যুৎ স্থায়ী থাকেনা। এখনো চাম্বলের ধুইল্যাজিরি, ৪ নম্বর ওয়ার্ড আজানি পাড়া ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আজবধি বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি।
গন্ডামারা আল-কোরআন মডেল একাডেমী ও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মু. হুমায়ুন জানান, গতকাল বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর প্রভাবে বিদ্যুৎ বিহীন ছিল আমাদের পুরো গন্ডামারা এলাকা। আজ সন্ধ্যায় বিদ্যুতের লাইন চালু হলেও ঘনঘন লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে। এতে চরম দূর্বিসহ যন্ত্র্রণায় পানীয় জলের সংকটে পড়ছে এলাকার লোকজন।
সরল ইউনিয়ের বাসিন্দা বায়তুল ইরফান আদর্শ মাদরাসার শিক্ষা পরিচালক মু. কামাল উদ্দীন জানান, এখনো পর্যন্ত সরলের ১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় বিদ্যুতের দেখা নেই। নলকূপের বিকল্প হিসেবে মোটরচালিত বৈদ্যুতিক শ্যালোতে নির্ভরশীল এলাকার লোকজন পানীর জন্য হাহাকার হয়ে পড়েছে। সুপেয়ে পানির জন্য অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে জেনারেটর বসিয়ে পানি উত্তোলন করছে। জমেছে মানুষের উপচে পড়া ভীড়।
এ দিকে সরল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার উত্তর সরল নতুন বাজার সংলগ্ন রশিদা বরঅ বাড়ীর সৌদি প্রবাসী আব্দুল কাদের এর উঠানে স্থাপিত বৈদ্যুতিক শ্যালো মেশিন থেকে গতকাল থেকে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেনারেটর বসিয়ে পানীয় জলের সু-ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন ওই এলাকার প্রবাসীর পরিবার। এতে পানীর জন্য সরলের তিন ওয়ার্ডের সহস্রাধিক মানুষের হাহাকার ও ভীড় ছিল দেখার মতো।
সরলের পাইরাং থেকে রুজি আক্তার বলেন, গতকাল থেকে আমরা বিদ্যুতের দেখা পাইনি। খাবার পানি সংকটে আছি আমরা। অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে আনতে হচ্ছে । কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সচল হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ওই গৃহবধু।
শিলকূপ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসীন্ধা বাবু প্রকাশ বড়ুয়া বলেন, কালবৈশাখীর প্রভাবে বাঁশখালীর অনেক এলাকায় এখনও পর্যন্ত বিদ্যুতের লাইন সচল হয়নি। এ জন্যে তিনি বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ি করেন।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) ঋষি কুমার ঘোষ বলেন, কালবৈশাখীর প্রভাবে আমাদের বৈদ্যুতিক লাইনে গাছের ডালপালা পড়ে, খুঁটিসহ ট্রান্সফরমার মাটিতে পড়ে প্রায় জায়গায় লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে। ঘটনার পরপরই আমাদের বিশেষ টিম রাত-দিন নিরলসভাবে সংযোগ চালু করতে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা চেষ্টার ত্রুটি রাখছিনা। আশা করছি খুব শিঘ্রই পুরো বাঁশখালীতে দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে সক্ষম হবো। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
0comments
মন্তব্য করুন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।