গাইবান্ধায় অবকাঠামোহীন স্কুল ও কলেজের নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতানোর চেষ্টা

S M Ashraful Azom
0
গাইবান্ধায় অবকাঠামোহীন স্কুল ও কলেজের নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতানোর চেষ্টা



 : নেই শ্রেণিকক্ষ, নেই কোন চেয়ার-টেবিল বা ব্রেঞ্চ। অনুমোদন তো দূরের কথা, নেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করার মতো উঁচু জায়গাও। শুধুমাত্র একটি সাইনবোর্ড তৈরি করে তা বাড়ীর সামনে ফেলে রেখে অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে আয়া পর্যন্ত মোট ৫৫ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এজন্য আবেদনের সময় জমা দিতে হবে বেশ মোটা অংকের টাকা (ব্যাংক ড্রাফট)। আর তাতে করে প্রতিষ্ঠানটির হাতে চলে যাবে তিন লক্ষাধীক টাকা। আশ্চর্য এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠানটির নাম কাটাবাড়ী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। নামসর্বস্ব এ প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের কাটাবাড়ী গ্রামে। 

গত ২৩ জুলাই পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, গাইবান্ধা ও বগুড়ার দুটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ইমাম ইদ্রিস। সেই নিয়োগে অধ্যক্ষ পদের জন্য দুই হাজার টাকা, প্রভাষক (২৪ জন) হিসেবে দেড় হাজার, প্রদর্শক (৬ জন), ল্যাব সহকারী (৪ জন) ও সহকারী শিক্ষক (১৪ জন) হিসেবে এক হাজার করে এবং অফিস সহকারী (২ জন), নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরী ও আয়া (৪ জন) পদের জন্য ৫০০ টাকা করে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড গোবিন্দগঞ্জ শাখার একটি চলতি হিসাব নম্বরে জমা প্রদান করতে বলা হয়েছে। নিয়োগে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদেরই শুধুমাত্র আবেদন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোন বেতনকাঠামোর কথাও উল্লেখ নেই। আর তাই হিসেব করে দেখা গেছে, প্রতি পদে কমপক্ষে ৫ জন করে আবেদন করলেও প্রতিষ্ঠানটির হাতে চলে যাবে তিন লক্ষাধীক টাকা। মূলত আবেদনকারীর সংখ্যা আরও বেশিই হবে। 

মূলত এ নিয়ে জানতে বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বাগদা বাজার থেকে পাকা সড়ক ধরে এক কিলোমিটার দূরে এগিয়ে গেলে রাস্তার বাম পাশে একটি পাকা বাড়ীর সামনে চোখে পড়বে প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ড। মাটিতে পড়ে থাকা সাইনবোর্ডটিতে ‘ক্যাম্পাস’ ও প্রতিষ্ঠাকাল হিসেবে ২০১৮ সাল লেখা রয়েছে। সভাপতি হিসেবে ইমাম ইদ্রিস ও অধ্যক্ষ হিসেবে ছামিউল আলম রাসু লেখা রয়েছে। আর এই বাড়ীটি অধ্যক্ষ ছামিউল আলম রাসুর। 

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ছামিউল আলম রাসু বলেন, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি চালু করার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরের বছর করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করলো। ফলে সবকিছু পিছিয়ে যায়। যে জমিতে অবকাঠামো হবে সেখানে এখন পানি। পানি শুকিয়ে গেলে জায়গাটি মাটি ভরাট করে টিনশেড ঘর তৈরি করা হবে। আপাতত আমি অধ্যক্ষ হিসেবে আছি। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে নতুন অধ্যক্ষকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেব। আশেপাশে সাত-আট কিলোমিটারের মধ্যে কোন গার্লস স্কুল ও কলেজ নেই। কিন্তু এখানে এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের দরকার। গাইবান্ধা সদরের হাসান মাহমুদ রাশেদসহ গোবিন্দগঞ্জের কয়েকজন চাকরি প্রত্যাশী বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখলাম সাইনবোর্ড ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কোন অস্তিত্বই নেই। তাই এখন আর আবেদন করবো না। যেখানে কোন অবকাঠামোই নেই, শুধুমাত্র অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী চাওয়া হয়, আবার বেতনকাঠামোও উল্লেখ নেই এমন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নানান প্রশ্নের জন্ম দেয়। 

গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের এক কলেজশিক্ষক বলেন, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আবেদনকারীরা সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে বেতনসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধায় বনিবনা নাও হতে পারে। পরে হয়তো কেউ চাকরিই করলেন না। এজন্য কৌশলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদেরই শুধুমাত্র আবেদন করতে বলা হয়েছে এবং বেতন কাঠামোও উল্লেখ করা হয়নি। পরে আবারও তিনি আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেবেন। এতে করে চাকরির আবেদনের সময় জমা নেওয়া টাকায় লাভবান হবেন সভাপতি। এটা একটা ব্যবসার ধান্দা হতে পারে। 

পাশ্ববর্তী দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ইমাম ইদ্রিস বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা। প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রæয়ারি তিন বিঘা জমি দানপত্র করেছেন ফাইম ফয়সাল সজীব। আগামী বছরের জানুয়ারিতে ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হবে। ইন (ইআইআইএন) নম্বরের জন্য গত ২৩ মে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। স্থানীয় সাংসদের ডিওলেটার হয়েছে। রেজুলেশন কমিটি ও এলাকার গণস্বাক্ষর হয়েছে। এমপিওর জন্য আবেদন করবো। যেভাবে প্রতিষ্ঠান চলে সেভাবেই আমরা চালাবো। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী ও বেতন কাঠামো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী চাইতেই পারি, চাওয়ার সময় বেশিই চাইবো। আসলে কি তারা আসবে। আসলে তারা যদি আমাদের শর্তে রাজি থাকে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ফি, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কিছু ডোনেট করবে, জমিদাতারা টাকা দেবে। এভাবে আমরা চাঁদাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান চালাবো। তারপর সরকার যখন এমপিওভুক্ত করবে, সরকারি বেতনভাতা তখন তারা পাবে। অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা বিনাবেতনে কাজ করার জন্য যোগাযোগ করছেন বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ইমাম ইদ্রিস। 

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম পারভেজ বলেন, পাঠদানের অনুমতি না থাকলে তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে না। এখানে যেন কেউ দরখাস্ত না করে। অবকাঠামো নেই, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী ওখানে কি জন্য যাবে। আমি আগামী রবিবার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতদের অফিসে ডেকে নেব। 



শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top