“প্রাচ্যের দ্বিতীয় ডান্ডি” বলা হতো জামালপুরের সরিষাবাড়ীকে

S M Ashraful Azom
0
“প্রাচ্যের দ্বিতীয় ডান্ডি” বলা হতো জামালপুরের সরিষাবাড়ীকে



: ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাই ও যমুনা নদীর পলল দ্বারা গড়ে উঠেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ভূঅঞ্চল। ব্রিটিশ আমলে সরিষাবাড়ীতে গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দর ছিল। এখানে ব্রিটিশ ও মারোয়াড়ীদের বেলিং কুটির ছিল। সে সময় সরিষাবাড়ী ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। সরিষাবাড়ীকে বলা হতো দ্বিতীয় নারায়ণগঞ্জ। প্রাচ্যের দ্বিতীয় ডান্ডিও বলা হতো সরিষাবাড়িকে।


১৯০১ সালে ভারতের রাজ্য পুতনার অধিবাসী কুনিরাম শেঠী সর্বপ্রথম সরিষাবাড়িতে ‘কুনিরাম শেঠী এন্ড কো:’ নামে একটি পাটক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেন। ১৯০৫ সালের মধ্যে এই মহকুমার একমাত্র সরিষাবাড়ীতেই ভারতীয় ব্যবসায়ী মালিকানায় বিড়লা ব্রাদার্স লি:, মেসার্স লক্ষী নারায়ন মুদ্রা লি:, লুইচ ডেফার্স এন্ড কোং  ও বেঙ্গল জুট বেলিংসহ কয়েকটি জুট প্রেস হাউজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কলকাতা ও ইউরোপ কেন্দ্রিক ব্যবসায় প্রসার লাভের কারনে সরিষাবাড়ী এলাকাটি বাণিজ্যিক রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে উপমহাদেশের দেশগুলোর কাছে পরিচিতি ছিল। ব্রহ্মপুত্রের ধারে সদর থানার ইটাইল নদীবন্দর হতে এক সময় পাট নিয়ে নৌকা কলকাতা, মাদ্রাজ ও হুগলী যেত। সরিষাবাড়ীতে উৎপাদিত পাট নেওয়ার জন্য হাজার হাজার নৌকা  যমুনা নদীতে ভীড় করতো। 

এখানকার পাট খুবই উন্নত জাতের হত। পাটের আবাদ এখানে বেশী হওয়ার ফলে এখানে বেশকিছু কোম্পানী পাট কল গড়ে তুলে। সরিষাবাড়ী আলহাজ্ব  জুট মিলস, পপুলার জুট মিলস, ইস্পাহানী জুট বেলার্স, বিজেএমসি,বিজেসিসহ অনেক সংস্থা পাটের ব্যবসা করত। ইংরেজগণ সরাসরি এখানকার পাট নৌ পথে রপ্তানী করত। পাট শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হত।

পাটশিল্প সমৃদ্ধ সরিষাবাড়ীতে ২২টি পাটের কুঠি ছিল। প্রায় ২২,০০০ বাইশ হাজার শ্রমিক পাটের কুঠিগুলোতে কর্মরত ছিল। বাংলাদেশের পাট ব্যবসায়ী কেন্দ্র হিসেবে নারায়নগঞ্জের পরই সরিষাবাড়ীর স্থান ছিল। আজ তা বিলুপ্তির পথে। ধীরে ধীরে অধিকাংশ পাটকল বন্ধ হয়ে যায়। পৌরসভা এলাকায় আলহাজ জুট মিলস লিমিটেড, এআরএ জুট মিলস লিমিটেড ও পপুলার জুট মিলস লিমিটেড চালু ছিল। আরামনগর বাজারে কেএইচবি ফাইবার লিমিটেড ও পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া এলাকায় মিমকো জুটমিল নামে দুটি প্রতিষ্ঠান চালু হয়। গত কয়েক বছরের মধ্যেই আলহাজ জুট মিল, এআরএ জুট মিল ও মিমকো জুট মিল বন্ধ হয়ে গেছে। কারখানা বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবার। মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে সাবেক এই পাটশিল্প নগর।

বিশ্বের প্রথম পাটের পাতা থেকে তৈরি জৈব পানীয় (চা) এর জন্য কারখানার নির্মাণ কাজ চলছে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ঝালুপাড়ায়। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের অর্থায়নে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে।

একদিকে সোনালি আঁশ, অন্যদিকে রুপালি কাঠি-দুয়ে মিলে সম্ভাবনাময় শিল্প পাট।  প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে শুধু মাত্র পাটের ব্যাগের চাহিদাই রয়েছে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন। পাটকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে বর্তমান সময়োপযোগী পাটপণ্য উৎপাদন করার ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা পেলে প্রাচ্যের দ্বিতীয় ডান্ডি খ্যাত 'সরিষাবাড়ি' অতীতের মতো আবারও এই শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ। 

তথ্য: দৃষ্টিতে সরিষাবাড়ি



শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top