এবার গোলায় উঠবেনা কোটি টাকার ধান, বাঁশখালী উপকূলে কৃষকের কান্না

S M Ashraful Azom
0

 : সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েকশত কৃষক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী প্রভাব পড়েছে উপজেলার শেখেরখীল উপকূলে।

এবার গোলায় উঠবেনা কোটি টাকার ধান, বাঁশখালী উপকূলে কৃষকের কান্না
ছবি: বাঁশখালী উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধানক্ষেত।



 এছাড়াও ছনুয়া, পুইঁছড়ি, পশ্চিম চাম্বল, গন্ডামারা, শীলকূপের পশ্চিমাংশ, সরল, কাথরিয়া, বাহারছড়া, খানখানাবাদ সহ উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকের ধানি জমি অতিরিক্ত জোয়ারের ফলে বেঁড়ীবাধ ভেঙে সমুদ্রের লবণাক্ত জলের স্রোতে তলিয়ে যায়। আধাপাকা আমন ধান ক্ষেত লবণের পানিতে ঝলসে গিয়ে যেন কেড়ে নিল কৃষকের নতুন ধান গোলায় তোলার স্বপ্ন। 


উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা যায়, 'চলতি মৌসুমে বাঁশখালীতে বোরো ধানের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার হেক্টর। উপজেলা জুড়ে ১৫ হাজার ৮শত ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গেল ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৮শত হেক্টর ধানি জমি সমুদ্রের লবণাক্ত জলে প্লাবিত হয়। যার মধ্যে আধাপাকা ৩শত হেক্টরের অধিক ধানক্ষেত একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিস।


প্রায় আড়াইশত কোটি টাকা ব্যয়ে বেঁড়ীবাধ নির্মাণ করা হলেও স্বপ্নের টেকসই বেঁড়ীবাধ এখনো অধরাই থেকে গেল। বাঁশখালীর প্রায় ২৬ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত এলাকার বৃহত্তম অংশ জুড়ে এখনো অরক্ষিত বেঁড়ীবাধ। প্রাকৃতিক দূর্যোগে, বন্যায় সহসা জোয়ারের মাত্রা বেড়ে গেলে বাঁধ ভেঙে সাগরের জল ডুকে পড়ে এ অঞ্চলের লোকালয়ে। প্রায় প্রতিবছরই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয় উপকূলের চাষিরা। নড়বড়ে বেঁড়ীবাধের কারণে কোটি টাকা মুল্যের মাছের ঘের, ফসলি জমি তলিয়ে যায়। চলতি মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে খানখানাবাদ, বাহারছড়া, সরল, গন্ডামারা, শীলকূপের জালিয়াখালী জলকদরখাল সংলগ্ন বেঁড়ীবাধ, বাংলাবাজার হয়ে শেখেরখীল ফাঁড়িরমুখ, ছনুয়াসহ এসব উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের লবণাক্ত জল ডুকে তলিয়ে যায় কৃষকের স্বপ্ন।


শেখেরখীল ইউপির চেয়ারম্যান মাও মোর্শেদুল ইসলাম ফারুকী বলেন, 'কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ আমাদের শেখেরখীল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শক করেন। এখানে প্রায় ৫ শত হেক্টর ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। উপকূলের বেড়ীবাঁধ ভেঙে সাগরের লবণাক্ত জল ডুকে পড়ায় ভেস্তে গেছে প্রান্তিক কৃষকের বেঁচে থাকার স্বপ্ন।


শেখেরখীলের টেকপাড়া এলাকার কৃষক মো. সোলতান বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে বেঁড়ীবাধ ভেঙে ধানি জমিতে জোয়ারের পানি ডুকে তলিয়ে যায়। আমার সাড়ে সাতকানি পরিমাণ আধাপাকা ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। আমার নিজস্ব জমি হওয়ায় এতে শ্রমিক সহ অন্যান্য খরচ পড়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। যা সঠিক সময়ে তুলতে পারলে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকার মতো ধান পেতাম। এখন জোয়ারের ফলে তলিয়ে যাওয়া সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।


এ ছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষক আব্দুল করিম, আবুল শামা, এনাম উদ্দিন, ফজলুল করিম বলেন, 'ধান পেকে যাওয়ার ঠিক যে সময় ধান কাটা মাড়াই করা হবে সেই সময়ে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমাদের অনেক জমির ধান মাটিতে হেলে ও শুয়ে পড়েছে। আর বেশীরভাগ ধানক্ষেত লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঝলসে গেছে। একটা ধানও তোলা যাবে না। এমন ক্ষতির সম্মূখী আমরা আর কখনো হইনি। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে অতিরিক্ত জোয়ারের ফলে জীবন-জীবিকার স্বপ্নের টমেটো ক্ষেত ডুবে যায়, তলিয়ে যায় কোটি টাকার মাছে ঘের।'


বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক বলেন,' ঘূর্ণিঝড়ের উপজেলার প্রায় ৮শত হেক্টর জমি প্লাবিত হয়। সম্পূর্ণ ক্ষতি এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ হেক্টর। এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। সহয়তার জন্য অধিদপ্তর বরাবর লেখা হয়েছে। ব্রি থেকে লবণ সহিষ্ণু জাতের ধানের বীজ চাওয়া হয়েছে যেন বোরো মৌসুমে আবাদ করতে পারে। তবে গতকাল ব্রি'র বিজ্ঞানীদের একটা টিম কে ভিজিট করালাম। মাটি, পানি পরীক্ষা করে তাতে লবণের মাত্রা অনেক বেশি পাওয়া গেছে। সামনে ভারী বৃষ্টি এবং মিঠা পানির সেচ না দিতে পারলে বোরো আবাদও বিঘ্নিত হতে পারে। সে জন্য টেকসই বাঁধ নির্মানের কোন বিকল্প নাই বলে জানান তিনি।'


শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top