মেলান্দহে বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ধর্মঘটে অচলাবস্থা

S M Ashraful Azom
0

 : জামালপুরের মেলান্দহে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদের অপসারণ দাবির আন্দোলনকে ঘিরে ক্যাম্পাস অচলাবস্থা বিরাজ করছে। 

মেলান্দহে বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ধর্মঘটে অচলাবস্থা



 শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগে ভিসির আর্থিক সুবিধাগ্রহণ, অযোগ্য-অদক্ষ এবং নিজের সন্তানকে নিয়োগ দেয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ধর্মঘট পালন করছেন শিক্ষকরা। ২ নভেম্বর থেকে শিক্ষকরা ১০ দফার দাবিতে এই আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। ভিসির একান্ত আস্থাভাজন শিক্ষক-ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এইচএম মাহবুবুর রহমান এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ায় চমক সৃষ্টি করলেও; পরিক্ষা এমনকি ক্লাশ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন, হতাশায় ভোগছেন। মাহবুবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির সদস্য এবং পরিবহন পরিচালনা কমিটিরও আহবায়ক। এর আগে তিনি সিন্ডিকেট কমিটির মেম্বারও ছিলেন। এই আন্দোলনের বিপক্ষে বিবৃতি প্রদানসহ শিক্ষকদের নেতৃত্বদানকারি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমানকেও অপসারণের দাবি করেছেন কর্মচারি পরিষদ এবং অফিসার্স এসোসিয়েশন। প্রক্টর অফিসের শৌচাগারের দেয়ালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মির্জা আজম এমপি’র ছবি টাঙ্গানোর ক্ষোভে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে এই অবস্থান নেয়া হয়। 

অবশ্য ভিসির বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা-ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এই আন্দোলন ভিসি হিসেবে (আমাকে) পূণ: নিয়োগ পেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির নীল নকশা। ভিসির বিরুদ্ধে নানা-অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-অর্থকেলেংকারিসহ শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন এবং অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ভিসির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাল্টা প্রেস রিলিজও প্রদান করা হচ্ছে। 


উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে আলহাজ মির্জা আজম এমপি’র প্রতিষ্ঠিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজটি ২০১৭ সালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসির নিয়োগ পান প্রফেসর ড. সৈয়দ শামসুদ্দিন আহমেদ। আগামী ১৭ নভেম্বর এই ভিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে।


আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ, ২ নভেম্বর ১০ দফার দাবিতে ধর্মঘট চলাকালে ভিসির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ১০ দফা দাবির মধ্যে অর্থ কমিটির ১২ তম সিন্ডিকেট সভায় আলোচনার সিদ্ধান্তকে বিকৃত করে উপস্থাপন, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ, ডাইনিং এ ভর্তুকি, লাইব্রেরিতে রেফারেন্স পুস্তকাদি সরবরাহ, অনৈতিক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, গবেষণার খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষক-কর্মচারিদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, পৃথক যানবাহন ব্যবস্থা, ঢাকা অফিসের রুমসহ আনুসাঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধি, গবেষণার কাজে অর্থসহ আনুসাঙ্গিক সুযোগ সৃষ্টি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঠিক আয়-ব্যায়ের হিসাব প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্তি, অভিজ্ঞদের পদোন্নতি প্রদান, বঙ্গমাতা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন উল্লেখযোগ্য।


৬ নভেম্বর ভিসির সাথে আন্দোলনরত শিক্ষকদের দিনভর বৈঠকেও নিস্পত্তি হয়নি। একপর্যায়ে শিক্ষকরা ভিসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের সুনির্দিষ্ট ১৬টি অভিযোগ প্রকাশ করেন। এরমধ্যে স্বজনপ্রীতি-আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে শিক্ষক-কর্মচারিদের নিয়োগ, নিজের ছেলে এবং সাবেক রেজিস্ট্রার, বর্তমানে পরিচালক (অর্থ ও হিসাব)’র মেয়েকে নিয়োগ প্রদান, যানবাহনের ফুয়েল খাতে অস্বাভাবিক ব্যায়, বিশ^বিদ্যালয়ের গাড়ি নিজের পরিবারের কাজে ব্যবহার, বিশ্ববিদ্যালয়ে না এসে ঢাকার অফিসে অবস্থান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাত, শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার আবেদনকে তোয়াক্কা না করা ইত্যাদি।


আন্দোলনকারিদের মধ্যে ফিশারিজ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও মির্জা আজম হলের প্রভোস্ট ড. সাদিকুর রহমান ইমন জানান-ফিশারীজ কলেজটি বিশ^বিদ্যালয়ে উন্নীত হবার পর; ২০১৯ সালে দলিলমূলে হস্তান্তর করার সময় ৪২ জন শিক্ষক-কর্মচারিদের যোগ্যতা অনুযায়ী আত্মীকরণ কথা। কিন্তু সময়মত এবং যোগ্যতার মাপকাঠিতে আত্মীকরণ করা হয়নি। এটাও ক্ষোভের কারণ। 


  আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারি শিক্ষক ড. এএইচএম. মাহবুবুর রহমান বলেন-গত অর্থ কমিটির সিদ্ধান্তকে বিকৃতভাবে রেজুলেশন করা হয়েছে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পারিতোষিক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি ভিসিকে ক্ষমতায়ন করা হলো লেখা হয়েছে। অনুমোদন দেয়া লিখলেই বিতর্ক হতো না। তিনি বলেন-আমাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কথাও বলা হয়েছে। ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১০টা পানির ফিল্টারও স্থাপন করেননি। ভিসি বলেন একটা, করেন অন্যটা। যোগ্য লোকবল নিয়োগের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এবং সহযোগি অধ্যাপক নিয়োগ দিচ্ছেন না। ভিসির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি তদন্তেরও দাবি জানিয়ে বলেন, ভিসি আমার বিরুদ্ধে কর্মচারিদের লেলিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়টি সামনে রেখে ক্লাশ-পরিক্ষা বর্জন না করেও; শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে না যাবার বিষয়ে তিনি বলেন-আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোন পথ ছিল না। এই পরিস্থিতির জন্য ভিসিই দায়ি।

ভিসির নিজ নামে, ছদ্মনামে, মেয়ে মাইশা আহমেদের নামে, ছেলে সৈয়দ তাহসিন আহমেদের নামে এমনকি স্ত্রী সিতারা পারভীনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে অন্ততঃ ১৫/২০টি একাউন্টে এফডিআর, সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস ছাড়াও অর্থ জমা করেছেন মর্মে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষামন্ত্রনালয়, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ভিসি প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ জানান-বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় আলহাজ মির্জা আজম এমপিকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকেই আন্দোলনকে রহস্যজনক মনে করছি। শিক্ষকদের ১০ দফার দাবির অন্তরালে প্রায় ৪০ দফা বিদ্যমান। কিছু দাবি দ্রুতই পূরণ সম্ভব। কিছু দাবি বাস্তবায়নে ইউজিসি, সিন্ডিকেট সভা এবং অর্থ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষ। আগামী ১৪ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভা, ১৫ নভেম্বর অর্থ কমিটির সভার আহবান করা হয়েছে। আন্দোলনকারিরা সেই সময় দিচ্ছেন না। 

ভিসির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম এবং বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমার বিষয়ে বলেন-ঠিকানাবিহীন অভিযোগদাতা আ: জব্বার, মোস্তাফিজুর রজমান এবং খলিলুর রহমান নামে কাওকেই চিনেন না। ষড়যন্ত্রকারিদের সাজানো অভিযোগ এটি। আমার চাকরির বয়স প্রায় ৪০ বছর। আমি বিদেশেও কাজ করেছি। আমি কি উপার্জন করিনি? আল্লাহর রহমতে আমি এবং আমার স্ত্রীও বিত্তশালী পরিবারের লোক। আমাদের পৈত্রিক সম্পদও বিদ্যমান। ব্যাংকে আমাদের অর্থ থাকা মানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ মিন করবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ অনিয়মের কোন সুযোগও নাই। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ অন্যের নামে ব্যাংকে রাখারও সুযোগ নাই। আমার বিরুদ্বে আনীত অভিযোগ বানোয়াট, মিথ্যা, অপপ্রচার, ষড়যন্ত্রমূলক। তিনি অপপ্রচারের বিচারের দাবি করেছেন। 



শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top