সেবা ডেস্ক : বেশ কিছুদিন থেকে পুরো দেশ অনাবৃষ্টি ও তাপদাহের মধ্যে রয়েছে। অনেকে অসুস্থ হচ্ছে মারা যাচ্ছে কষ্ট পাচ্ছে সবাই। এটা আমাদের পাপের ফসল। আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব।
এই পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথক ভাবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখিয়ে দেয়া দু'রাকাত খোলা ময়দানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন এবং করছেন। অনেক জায়গায় সাথে সাথে কোন জায়গায় কিছু সময়ের মধ্যেই বৃষ্টি হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ
তারপরও যে ভাবে বৃষ্টি হওয়ার কথা এবং তাপমাত্রা কমার কথা তা কমছে না এর পিছনে অবশ্যই আমাদের কর্মের ফসল রয়েছে।
উপর থেকে বৃষ্টি বর্ষিত না হলে সারা পৃথিবী তামা হয়ে যাবে। মাটি পাথরের মতো শক্ত নিষ্প্রাণ হয়ে উর্বরতা হারাবে। পশু, পাখি, কীট, পতঙ্গ তথা স্থলভাগের সকল প্রাণী জীবন হারাবে। তাই যখন অনাবৃষ্টি দেখা দেয় তখন একে গজব হিসাবে বিবেচনা করা হয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, যদি অবলা প্রাণী ও গৃহপালিত পশুরা না থাকত তাহলে মানুষের নাফরমানির ফলে আজাব স্বরূপ আমি চিরতরে বৃষ্টি বন্ধ করে দিতাম। (আল হাদীস)।
এতে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা যায় এগুলো কামাই করা পাপের ফসল তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২২)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এই পানি থেকে তোমরা পান করো এবং এ থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাতে তোমরা পশুচারণ করো। এ পানি দ্বারা তোমাদের জন্য উৎপাদন করেন ফসল, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্বপ্রকার ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা নাহল : আয়াত ১০-১১)।
অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, অকাল বর্ষণ, পার্বত্য বন্যা, আগুনে বাতাস, কাল বৈশাখি ইত্যাদি আমাদের বোরো ও আমন ধান নষ্ট করে। আগুনে বাতাসে পাকা ধানের গাছ পুড়ে যায়, পরিপুষ্ট ধান চিটা হয়ে যায়। একফসলি জমির কৃষকের জন্য এর চেয়ে বড় আজাব আর কী হতে পারে?
এই আজাব আর গজব থেকে বাঁচতে
এমন খরা, দাবদাহ, অনাবৃষ্টির সময় আল্লাহর কাছে তওবা ইস্তেগফার করা এবং শাসক ও জনগণ একসাথে খোলামাঠে গিয়ে সুন্নাত অনুযায়ী দুই রাকাত বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ জামাতে আদায় করলে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়ে থাকে। এ নামাজকে বলা হয় ইসতিসকার নামাজ।
সমাজের বড় ছোট নেক নাফরমান নির্বিশেষে সব মানুষ নিজ নিজ গোনাহ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনার আশায় ইসতিসকার নামাজ পড়ার সুফল যুগে যুগে পেয়ে গেছে। এখন খরার সময় বৃষ্টির জন্য পবিত্র মক্কা মদিনার প্রধান দুই মসজিদে ইসতিসকার নামাজ পড়া হয়। সাথে সাথে বর্ষণও হতে দেখা যায়।
এই নামাজে রাষ্ট্রপ্রধান, শাসক বা তার প্রতিনিধি থাকলে দোয়া আরো দ্রুত কবুল হওয়ার নজির রয়েছে। ইসতিসকার নামাজ পড়ার সময় আল্লাহর নবী (সা.) নিজের পরনের চাদরের এক মাথা উল্টে অন্য মাথায় নিয়ে গিয়ে গোটা চাদরটিই আড়াআড়ি উল্টে গায়ে দেন। এটি আবহাওয়ার চলমান অবস্থাটি একশভাগ পাল্টে দিয়ে, আল্লাহ যেন বৃষ্টি দান করেন, তারই বাহ্যিক নমুনা এবং কার্যত প্রার্থনা। একবার নামাজ শেষে মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘরে ফিরতে হয়।
দেশ বা অঞ্চলের বিশিষ্ট মুত্তাকি পরহেযগার আলেমকে দিয়ে এ নামাজ পড়ানো এবং কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় প্রশাসক এ জামাতে শরিক থাকা বিধেয়। নিজেদের পশু পাখি ও ছোট্ট শিশুদেরও বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজের সময় মাঠে নিয়ে যাওয়ার বিধান রয়েছে। যেন আল্লাহ যার ওপরই হোক দয়া করে বৃষ্টি দান করতে পারেন। পাপী বান্দাদের ক্ষমা প্রার্থনায় আল্লাহ দ্রুত খুশি হয়ে গজব তুলে নেন। নেক বান্দাদের ওপর দয়া করেও তিনি রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন।
দাবদাহ, খরা, দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টির সময় উলামায়ে কেরাম, জনসাধারণ ও সমাজপতিদের কর্তব্য মহানবী (সা.) এর এই সুন্নাতকে জিন্দা করা। সবাইকে আহ্বান করে, জায়গায় জায়গায় ইসতিসকার নামাজ আদায় করা। আল্লাহর রহমত ক্ষমা ও করুণা লাভে এই সুন্নাত খুবই পরীক্ষিত ও কার্যকর।
তাই আমাদের দেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে ইউনিয়নের ওয়ার্ডের মেম্বার এবং সকল মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দ্যোগে ইসতিসকার নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।
যেহেতু আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৈদ্য খ্রিস্টান মিলে মিশে বসবাস করছি এবং সকলেই দেশ জাতীর স্বার্থে নিজেদের বাঁচাতে নিজ নিজ উপসনালয়গুলোতে প্রার্থনার ব্যবস্থা করা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করছি।
ইসলাম ধর্মে যেহেতু অনাবৃষ্টি ও তাপদাহ থেকে বাঁচতে ইসতিসকার নামাজ আদায়ের কথা রয়েছে এবং এর ফলাফল সুস্পষ্ট তাই সকল মুসলিম জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ আপনার নিজ নিজ গ্রাম, পাড়া মহল্লা, ওয়ার্ড, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদের মেম্বার, কাউন্সিলার,চেয়ারম্যান , মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রতি আমার অনুরোধ ইসতিসকার নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করুন।
হে পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তুমি আমাদের ক্ষমা করো ও এই অনাবৃষ্টি আর তাপদাহ থেকে মুক্ত করো। আমিন
মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী
গবেষক, কলামিস্ট, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।