[৫৯৯] আজ ত্যাগ ও মিলনের দিন পবিত্র ঈদুল আজহা

S M Ashraful Azom
0

: আজ মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানির তাগিদ নিয়ে বছর ঘুরে এসেছে আজকের এই দিন। দিনটি শুধু আনন্দের নয়, ত্যাগেরও। ‘আত্মপ্রতারণা আর খেলকা খুলিয়া’ ফেলে ‘মনের পশুরে করো জবাই’ করার দিন।

আজ ত্যাগ ও মিলনের দিন পবিত্র ঈদুল আজহা



ঈদুল ফিতরের মতো চাঁদ দেখার আনন্দময় অনিশ্চয়তা নেই কোরবানির ঈদে। ১০ দিন আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে, ২৯ জুন কোরবানির ঈদ। নাড়ির টানে শহরবাসী পথের ক্লান্তি ভুলে মায়ের স্নেহভরা কোলে ফিরে গেছেন। আগামীকাল সকালে ঈদগাহে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে আল্লাহর পথে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবানরা। ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।



কোরবানি সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয় : রাষ্ট্রপতি


ত্যাগের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে।


আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব জাগ্রত করে এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। তিনি সমাজের দারিদ্র্যপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিতদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার আহ্বান জানান।


রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ‘আজহা’ অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আজহার সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগের শিক্ষা ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা।


তিনি উল্লেখ করেন, করোনা মহামারির অভিঘাত ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নিম্ন আয়ের মানুষ নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝে দিনাতিপাত করছে।


ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় ঈদুল আজহা : প্রধানমন্ত্রী


কোরবানির শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে জাতি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রতিবছর সচ্ছল মুসলমানরা কোরবানির পশুর গোশত আত্মীয়স্বজন ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে সহমর্মিতা ও সাম্যের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করেন।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজরত ইব্রাহিম (আ.) মহান আল্লাহর উদ্দেশে প্রিয় বস্তু উৎসর্গের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি লাভে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রত্যাশা করেন, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে।


তিনি কামনা করেন– ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুক। হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রত্যেক মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক।

উৎসবের অপেক্ষা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ বছর ঈদের জৌলুস কিছুটা ফিকে। তবে নির্বাচনী বছর হওয়ায় ভোটে দাঁড়াতে ইচ্ছুক নেতাদের তৎপরতায় মফস্বল ও গ্রামীণ এলাকায় উৎসবের আবহও রয়েছে। এর মধ্যেই ভয় জাগাচ্ছে ডেঙ্গু। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনে ঈদের পর রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ার শঙ্কাও রয়েছে।


বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন মিলে হাটে হাটে ঘুরে পশু কেনা ঈদের আনন্দের অংশ। গরু নিয়ে ঘরে ফেরার পথে সবাই হাঁক দিয়ে জানতে চান– দাম কত? যদিও কোরবানি মানে লোক দেখিয়ে বহু দামে কেনা পশু জবাই নয়, দানের নামে লোক দেখিয়ে মাংস বিলানোও নয়। আত্মত্যাগের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে পশু কোরবানি ঈদের শিক্ষা।


জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায়-


‘চাহি নাকো গাভি দুম্বা উট,

কতটুকু দান? ও দান ঝুট।

চাই কোরবানি, চাই না দান।’


পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, চার হাজার বছর আগে মুসলমান জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হন সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি করতে। পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে আদরের ছেলেকে কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।  কিন্তু পরম করুণাময়ের কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়।


হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের স্মরণে মুসলমানরা প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ অনুগ্রহ লাভে পশু কোরবানি করেন। তবে আগামী শনিবার আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন না দরিদ্ররাও। কোরবানির পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাঁদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে। আত্মীয়দের দিতে হবে এক ভাগ।


ত্যাগের ঈদ হলেও বাঙালি মুসলমানরা জৌলুসের সঙ্গে উদযাপন করেন। বাংলাদেশে মোগল ও নবাব আমলে ঈদ উৎসবের রূপ পায়। সতেরো শতকে পরিব্রাজক মির্জা নাথানের ‘বাহরিস্তানে গায়েবী’ বইয়ে বাঙালির ঈদের বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, ঈদে বাঙালি মুসলমানরা একে অন্যের বাড়িতে যান। অতিথির জন্য আহারের ব্যবস্থা থাকে। ঈদের দিনে মুসলমানরা সুন্দর পোশাক পরে। অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরা মুক্তহস্তে দান করেন।


ঈদে মেলা বসে দেশের আনাচে-কানাচে। রাজধানীর রাস্তাগুলো সাজিয়ে তোলা হয়েছে। নাগরিক বিনোদন কেন্দ্র চিড়িয়াখানা, শিশু পার্কসহ বিভিন্ন পার্কে থাকবে উপচে পড়া ভিড়। হাসপাতালে রোগী, কারাবন্দি কেউ বাদ যাবে না ঈদের খুশি থেকে।


দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ শীর্ষ রাজনীতিকরা।


প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের প্রধান জামাত হবে সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৭টা থেকে হবে পাঁচটি ঈদ জামাত। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আয়োজনে বিভিন্ন মসজিদে ও মাঠে হবে ঈদের জামাত।


সমকাল/২৯০৬২০২৩ 


শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top